Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

স্বাস্থ্য সচেতনতায় টেলিভিশন করিমপুর হাসপাতালে

সুস্থ মা ও শিশুর দায়িত্ব শুধু সন্তানের জন্ম পর্যন্ত নয়। তারপরে শিশুর যত্ন বিষয়ে মায়ের কর্তব্য এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করার কর্তব্যও পালন করছে হাসপাতাল। পুস্তিকা বা পোস্টার হামেশাই দেখা যায় হাসপাতালে। তবে করিমপুরে সে ধরনটা বদলে গিয়েছে। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের বিলাস বহুল স্যুটে থেকে সন্তানের জন্ম দিতে পারেন না এ দেশের ৯০ শতাংশ মা।

হাসপাতালে মায়েরা ব্যস্ত তথ্যচিত্র দেখতে। নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে মায়েরা ব্যস্ত তথ্যচিত্র দেখতে। নিজস্ব চিত্র।

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১৭
Share: Save:

সুস্থ মা ও শিশুর দায়িত্ব শুধু সন্তানের জন্ম পর্যন্ত নয়। তারপরে শিশুর যত্ন বিষয়ে মায়ের কর্তব্য এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করার কর্তব্যও পালন করছে হাসপাতাল। পুস্তিকা বা পোস্টার হামেশাই দেখা যায় হাসপাতালে। তবে করিমপুরে সে ধরনটা বদলে গিয়েছে।

সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের বিলাস বহুল স্যুটে থেকে সন্তানের জন্ম দিতে পারেন না এ দেশের ৯০ শতাংশ মা। তবু তাঁদের কাছে আধুনিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার কথা ভাবছেন প্রত্যন্ত গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকরাও। করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের ধাত্রী বিভাগে (পোস্ট নেটাল) লাগান হয়েছে ২১ ইঞ্চি এলইডি টিভি। সদ্যোজাতদের কোলে নিয়ে মায়েরা তাকিয়ে রয়েছেন সে দিকে। তবে নিতান্ত প্রচলিত বাংলা বা হিন্দি ধারাবাহিক নয়, নয় পছন্দের সিনেমাও। টিভিতে দেখান হচ্ছে কী ভাবে যত্ন নিতে হবে সন্তানের, কেমন করে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে সদ্যোজাতকে, কোন টিকা কখন নেওয়া খুব জরুরি, স্তন্যপান করান সংক্রান্ত নানা জরুরি তথ্য অথবা মায়ের নিজের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে কী কী পথ অবলম্বন করতে হবে।

করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের ধাত্রী বিভাগের দেওয়ালে বেশ উঁচু জায়গায় লাগান হয়েছে টিভি। সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত চলছে সেটি। নিতান্ত সামান্য শব্দমাত্রায়। দেখান হচ্ছে সচেতনা সংক্রান্ত কিছু ছবি, তথ্যচিত্র। তবে সব সময় নয়। মাঝেমধ্যে দেখা যাচ্ছে ‘ডিসকভারি চ্যানেল’ও। মানব সন্তানের পাশাপাশি বাঘ, সিংহের শিশুদের দেখে বেশ খুশি হোগলবেড়িয়া দুর্লভপুরের কবিতা মণ্ডল, আরজিনা বিবিরা।

গত বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালেই ফুটফুটে এক শিশু কন্যার জন্ম দিয়েছেন যাত্রাপুরের বাসিন্দা বিজলী ঘোষ। তিনি বলেন,“তিন দিন এখানেই আছি। অথচ সময় কাটাতে খুব বেশি অসুবিধা হচ্ছে না। বাচ্চা যখন ঘুমচ্ছে তখন ঘুম পেলে ঘুমিয়ে নিচ্ছি। আবার কখনও টিভি দেখছি। বাড়িতে প্রতিদিন টিভি দেখার নেশা তো, তাই এখানে টিভি পেয়ে ভালই লাগছে।” শিকারপুর দহখোলার গায়ত্রী সিংহও বাচ্চাকে কোলে নিয়ে চোখ রেখেছিলেন ডিসকভারি চ্যানেলে। তিনি বলেন, “শুনেছিলাম বড় বড় হাসপাতালে বা নার্সিংহোমে টিভি থাকে। কিন্তু এখানে এসে এই তিন দিন টিভি দেখব ভাবিনি।” তবে সকলেরই ভাল লাগছে তা নয়। মাস ছয়েকের অসুস্থ শিশুকে নিয়ে গত চার দিন এই বিভাগে ভর্তি আছেন করিমপুরের পাট্টাবুকার সুচিত্রা সরকার। তাঁর আক্ষেপ টিভির সম্প্রচার নিয়ে। তিনি বলেন, “সারাদিন এই বাঘ ভাল্লুক ভাল লাগে? সিরিয়াল বা সিনেমা চললে বেশি ভাল হত।”

অক্টোবর মাস থেকেই টেলিভিশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০-১৫ জন প্রসূতি এখানে সন্তানের জন্ম দেন। প্রসূতি ও সদ্য মায়ের সংখ্যা প্রায় ২০-২৫ জন। কেউ কেউ হাসপাতালে ভর্তি হন সন্তান জন্মের বেশ কিছুদিন আগে, আবার মা হওয়ার পরেও সকলকে দু’একদিন থাকতে হয়।

হাসপাতাল সুপার রাজীব ঘোষ বলেন, “আমাদের হাতে কিছু টাকা ছিল। চিকিৎসকরাই একটা টিভি-র ব্যবস্থা করার কথা। কারণ ওই বিভাগে যাঁরা থাকেন তাঁদের প্রায় কারও কোনও জটিল শারীরিক সমস্যা থাকে না। অথচ সন্তান জন্ম দিতে এসে কম বেশি দু’চার দিন থাকতেই হয়। সেই সময়টাকে কাজে লাগিয়েই তাঁদের সচেতন করে তোলাও সম্ভব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE