সোয়াইন ফ্লু নিয়ে বাইরে আলোচনা করা যাবে না, তা সীমাবদ্ধ রাখতে হবে দফতরের মধ্যেই। জেলার স্বাস্থ্য কর্তাদের এমনই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে! আপাতত সচেতনতামূলক প্রচারও হবে না। মঙ্গলবার মেদিনীপুরে স্বাস্থ্য দফতরের বৈঠক হয়। সেখানে পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বুঝিয়ে দেন, সোয়াইন ফ্লু নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যা কিছু আলোচনা তা সীমাবদ্ধ রাখতে হবে দফতরের মধ্যেই। বাইরে আলোচনা করা যাবে না। কেন?
গিরিশচন্দ্রবাবুর যুক্তি, “বাইরে আলোচনা করলে রোগী এবং তাঁর পরিবারের লোকজনদের মধ্যে অযথা আতঙ্ক ছড়াবে। উদ্বেগ দেখা দেবে।” জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সোয়াইন ফ্লু সংক্রান্ত তথ্য-পরিসংখ্যান সংবাদমাধ্যমে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁদের উপর মৌখিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বারবার উপরমহল থেকেই সাবধান করে দেওয়া হচ্ছে।
তবে তাঁরা একান্তে মানছেন, এটা ঠিক নয়। বিষয়টি নিয়ে যত বেশি প্রচার হবে, ততই মানুষ সচেতন হবেন। রোগ প্রতিরোধ করতে গেলে সতর্কতা এবং প্রচার সবচেয়ে বেশি জরুরি। অথচ এ ক্ষেত্রে তাঁদের মুখ খুলতে বারণ করা হয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএমওএইচের আক্ষেপ, “এমন রোগ প্রতিরোধ করতে গেলে সচেতনতামূলক প্রচার জরুরি। অথচ এখনও ব্লকস্তরে এই রোগ প্রতিরোধের জন্য কোনও অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করার নির্দেশই দেওয়া হয়নি।”
বুধবারও মেদিনীপুরে জেলা পরিষদের উদ্যোগে জনস্বাস্থ্যের এক বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএমওএইচ সহ পদস্থ স্বাস্থ্যকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এখানেও সোয়াইন ফ্লু নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়নি বলে জেলা পরিষদেরই এক সূত্রে খবর।
কিন্তু, কেন এত লুকোছাপা? কেন সচেতনতামূলক প্রচার হচ্ছে না? সদুত্তর দেননি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্রবাবু। তাঁর বক্তব্য, “যেমন নির্দেশ আসে জেলায় সেই মতোই পদক্ষেপ করা হয়। সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আমরা সতর্ক আছি।”
স্বাস্থ্য দফতরেরই এক সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের দু’জন সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। দু’জনই বৃদ্ধা। একজনের বয়স চৌষট্টি বছর। অন্যজনের একষট্টি। একজন ঘাটালের বাসিন্দা। অন্যজন পিংলার। অবশ্য এই দু’জনের কেউই জেলার কোনও হাসপাতালে ভর্তি হননি। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ইতিমধ্যে একজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অন্যজন এখনও চিকিৎসাধীন। জেলার দু’জন যে সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তা অবশ্য মানছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্রবাবু। তাঁর কথায়, “দু’জনের মধ্যে একজন সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।”
মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ তমালকান্তি ঘোষ বলেন, “সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, মেদিনীপুর মেডিক্যালে এমন কেউই ভর্তি নেই।” যদি কেউ ভর্তি হতে আসেন? তমালকান্তিবাবুর জবাব, “এ জন্য একটি অবজারভেশন ওয়ার্ড রাখা হয়েছে।” বুধবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক হয়। হাসপাতালের এক সূত্রে খবর, এই বৈঠকেও সোয়াইন ফ্লু নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়নি। অর্থাৎ, এই রোগ নিয়ে ঢাক-ঢাক গুড়-গুড় করারই পক্ষে স্বাস্থ্যকর্তারা।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রের অবশ্য দাবি, সব কিছুই লুকোছাপা করা হচ্ছে, এমন কোনও ব্যাপার নেই! যাঁরা জ্বর বা গা-ব্যাথা নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসছেন, প্রাথমিক চিকিৎসার পর নির্দিষ্ট উপসর্গ ধরা পড়লে তাঁদের রক্ত পরীক্ষা করানোর কথা বলা হয়েছে। বিএমওএইচ সহ জেলার পদস্থ স্বাস্থ্যকর্তাদের এ জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার দাবি, “এতটা না রেখেঢেকে এই রোগ প্রতিরোধ নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার হলে মানুষ সচেতন হতেন। কী করবেন, কী করবেন না, প্রচারে তা জানানো যেত। রোধের প্রধান লক্ষ্মণগুলো কী কী, রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রধান উপায়গুলোই বা কী কী, এ সব মানুষ জানতে পারলে সুবিধেই হত। অনেকে তখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারতেন।” তিনি জানাচ্ছেন, এই সময় সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশি মাত্রায় হয়। যার লক্ষ্মণগুলোও অনুরূপ। অর্থাৎ, জ্বর বা গা ব্যাথা হলেই যে সোয়াইন ফ্লু হয়েছে, তা না-ও হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগ হলেও তা সামান্যই থাকে। স্বাস্থ্যবিধি পালন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা মানুষকে রোগমুক্ত করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy