আমার কাছে বাঙালির প্রথম ও প্রধান অনুষঙ্গ হল রসগোল্লা। কলকাতায় গেলেই রসগোল্লা খাই। নানা রকম রসগোল্লা। কোনওটা নরম নরম, সাদা ধপধপে স্পঞ্জের বল। মুখে দিলাম, নিজে থেকে টুকরো হয়ে হয়ে মিশে গেল সারা মুখে। আহা! স্বর্গের আস্বাদ। তার পর কোনওটা একটু যেন লালচে। নলেন গুড়ের না ওগুলো? কামড় বসালাম, রস গড়িয়ে পড়ে সারা মুখ ভিজিয়ে দিল। তার পরও কত ক্ষণ যে প্রাণে লেগে থাকল সে রস! আর এক রকম আছে, মেগা-সাইজের। এক বারে গালে পুরতেই পারা যায় না। ভেঙে ভেঙে অল্প অল্প করে খাও। চোখ বুজে আসে আরামে। এরা এ পৃথিবীর বস্তুই নয়।
কলকাতায় গেলেও হাঁড়ি হাঁড়ি রসগোল্লা চাই আমার। ওই রসগোল্লা যে দিল্লিতে জীবনে পাব না। শুনেছি, এক সময় নাকি স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ও কলকাতার মিষ্টির দোকানে দোকানে দাঁড়িয়ে রসগোল্লা খেতেন। তবে মুখমিষ্টি যা-ই হোক, বাঙালি মানেই কিন্তু আন্দোলন। বামপন্থীরা আন্দোলন করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেস আন্দোলন করেছে। ‘নেহি চলেগা, নেহি চলেগা’-র তীর্থক্ষেত্র কলকাতা। তবে সিপিএম তৃণমূলের কথাই শুধু কেন বলব, অতীতে স্বাধীনতা-পূর্ব জাতীয় আন্দোলনেও উগ্র রাজনীতির দাপট কিন্তু সবথেকে বেশি ছিল কলকাতাতেই। ব্রিটিশরা বলত সন্ত্রাসবাদী। আর আমরা বলতাম, চরমপন্থী আন্দোলন। তার মানে বাঙালি মিষ্টিতে যেমন আছে, ঝালেও কিচ্ছুটি কম যায় না!
আসলে বাংলা মানে জাতপাত নয়। বাংলা মানে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা নয়। কিন্তু বাংলা মানে রাজনীতি। একটা পরিবর্তন থেকে আর একটা পরিবর্তন হতেই থাকবে। কিন্তু বাংলার রাজনীতি থাকবে রাজনীতিতেই। রসিকতা করে কিছু দিন আগে এক অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে বলেছিলাম, একটাই পরিবর্তন দেখছি, সেটা হল কোট-প্যান্ট পরিহিত অমিত মিত্র পরিণত হয়েছেন ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত অমিত মিত্রে!
আর বাঙালির এই রাজনীতির পাশাপাশি আছে, বা বলা যায় এর মূলে আছে, মেধা। দেশের প্রথম নাগরিক হয়ে এক বাঙালি রাষ্ট্রপতি ভবনে বসে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ দিন সহকর্মী হিসেবে কাজ করেছি। বাঙালির মেধার উৎকর্ষ কাকে বলে, সেটা তাই আমার বুঝতে কোনও অসুবিধা হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy