Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

চোখ বুজে নেতাজির কথা ভাবি

এই গোটা জাতিটাই রসগোল্লার মতো মিষ্টি। বাঙালি জাতিকে আমি ভীষণ শ্রদ্ধা করি। আমার বাবা সর্দার মালিক ছিলেন এক জন নৃত্যশিল্পী। ওঁর সঙ্গে উদয়শংকরের ভারী আলাপ ছিল। আমি তো ভীষণ ভক্ত ছিলাম উদয়শংকরের। ওঁকে সাক্ষাৎ শিবঠাকুর মনে হত আমার। আমার আগ্রহ দেখে বাবা আমাকে বাঙালিদের নিয়ে অনেক গল্প বলতেন। বলতেন, এই মানুষগুলো নাকি এক্কেবারে হৃদয়ের কথায় চলে। তার পর তো এক দিন আমি বড় হলাম, নিজের দুনিয়াটা তৈরি হল। বাঙালিদের সঙ্গে দেখা হল। তাঁদের জানার সুযোগ এল।

অন্নু মালিক
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

এই গোটা জাতিটাই রসগোল্লার মতো মিষ্টি। বাঙালি জাতিকে আমি ভীষণ শ্রদ্ধা করি। আমার বাবা সর্দার মালিক ছিলেন এক জন নৃত্যশিল্পী। ওঁর সঙ্গে উদয়শংকরের ভারী আলাপ ছিল। আমি তো ভীষণ ভক্ত ছিলাম উদয়শংকরের। ওঁকে সাক্ষাৎ শিবঠাকুর মনে হত আমার। আমার আগ্রহ দেখে বাবা আমাকে বাঙালিদের নিয়ে অনেক গল্প বলতেন। বলতেন, এই মানুষগুলো নাকি এক্কেবারে হৃদয়ের কথায় চলে। তার পর তো এক দিন আমি বড় হলাম, নিজের দুনিয়াটা তৈরি হল। বাঙালিদের সঙ্গে দেখা হল। তাঁদের জানার সুযোগ এল।

দেখলাম, বাবার কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। এমন আবেগসর্বস্ব মানুষ দেখা যায় না। কী ভীষণ ভালবাসতে পারে! আর যদি এক বার কাউকে বাঙালিরা ভালবেসেছে, তার জন্য জান লড়িয়ে দেবে। কিন্তু দাঁড়াও বন্ধু, যদি কোনও ভাবে ওদের দুঃখ দিয়েছ, বা তোমার কোনও আচরণ ওদের খারাপ লেগেছে, তা হলেই গেলে।

না, না, ক্ষতি কিছু করবে না। তবে তোমাকে এড়িয়ে চলে যাবে। সে বড় ভয়ানক এড়িয়ে যাওয়া। তুমি সামনেই আছ, তবু তোমাকে অগ্রাহ্য করবে। খুব অন্য রকমের হয় বাঙালিদের মন। খুব সংবেদনশীল, খুব নরম।

তাই তো সেই কোন কাল থেকেই দেশ-মাকে বুক দিয়ে, রক্ত দিয়ে ভালবেসেছে ওরা। কত বাঙালি ছেলের প্রাণ অকালে ঝরে গেছে স্বাধীনতার অসম লড়াইয়ে। আর, আমার এক আদর্শ-মানুষের নাম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। এখনও যখন কাজের ফাঁকে ক্লান্তি এসে ঘিরে ধরে, অবসন্ন হয়ে পড়ি, চোখ বন্ধ করে নেতাজির কথা ভাবি। ‘দিল্লি চলো’, ‘তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমায় স্বাধীনতা দেব’-র মতো কথাগুলো আপনা-আপনিই গর্জে ওঠে আমার মনে। রক্ত গরম হয়ে যায়। নতুন প্রাণশক্তি দৌড়য় শিরায় শিরায়। নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে দিই আবার। বাঙালির এই দেশপ্রেম যে কোনও সময় যে কোনও ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে।

অনেক দিয়েছে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ। অনেক, অনেক কিছু। শিল্প-সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ বা সত্যজিৎ রায়ের আশ্চর্য অবদানের কথা আমি আর কী-ই বা বলব? কতটুকুই বা বলা সম্ভব? আমাদের নিজেদের জগতে মান্নাদা আর কিশোরদা যে বিশাল কাণ্ড করে গেছেন, তারই বা কতটুকু মাপতে পারব? ওঁরা প্রত্যেকে আমার কাছে দেবতা।

আমার আর এক ভাল লাগার মানুষ হলেন উত্তমকুমার। অনেকেই ওঁর শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে অনেক কথা বলেন। আমায় টানে ওঁর স্ক্রিন প্রেজেন্স। সে জিনিস তো শুধু দেহ-সৌষ্ঠব দিয়ে হয় না, তার জন্য একটা আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব থাকতে হয়। বাংলা থেকে উঠে আসা নায়িকাদের মধ্যেও সেই অদ্ভুত ঋজু স্বভাব দেখতে পাওয়া যায়। শর্মিলাজি, জয়াজি, রাখীজি সুন্দরী তো ছিলেনই, তার সঙ্গে তাঁরা মানুষ হিসেবেও ছিলেন খুব অন্য রকম। সেটাও তাঁদের আবেদনে অন্য মাত্রা জুড়ত। আর ছিলেন সুচিত্রা সেন। ওঁর রূপ-গুণ দুই-ই গড়তে ঈশ্বর অনেকক্ষণ সময় ব্যয় করেছিলেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

বাঙালিদের মন তাই আমার কাছে একটা শ্রদ্ধার বিষয়। গলা যেমন সাধা হয়, বাঙালির মনও তেমন। এই ভগবানপ্রদত্ত, রেওয়াজ করা মনটাই বাঙালিদের ইউএসপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE