Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গরিবের সমর্থন টানতে প্রদেশকে চিঠি রাহুলের

মধ্যবিত্তের ভোটের আশা কি তা হলে ছেড়েই দিচ্ছেন রাহুল গাঁধী? গত কালই লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হয়েছে। তার পরই গভীর রাতে রাহুলের তরফে একটি দীর্ঘ চিঠি আজ পৌঁছে গিয়েছে সব প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে। কংগ্রেসের সহ-সভাপতির নির্দেশ, ভোট প্রচারে বেরিয়ে কংগ্রেস কর্মীদের আরও বেশি করে পৌঁছে যেতে হবে সমাজের বিশেষ কিছু শ্রেণির মানুষের কাছে।

শঙ্খদীপ দাস
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৪ ০৯:৫২
Share: Save:

মধ্যবিত্তের ভোটের আশা কি তা হলে ছেড়েই দিচ্ছেন রাহুল গাঁধী?

গত কালই লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হয়েছে। তার পরই গভীর রাতে রাহুলের তরফে একটি দীর্ঘ চিঠি আজ পৌঁছে গিয়েছে সব প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে। কংগ্রেসের সহ-সভাপতির নির্দেশ, ভোট প্রচারে বেরিয়ে কংগ্রেস কর্মীদের আরও বেশি করে পৌঁছে যেতে হবে সমাজের বিশেষ কিছু শ্রেণির মানুষের কাছে। তাঁরা কারা? তা বোঝাতে গিয়ে চিঠির সঙ্গে লম্বা একটি তালিকাও সংযোজন হিসেবে পাঠিয়েছেন রাহুল। কৃষি মজুর, হকার, রিকশাচালক থেকে শুরু করে ধোপা, নাপিত, গৃহস্থ বাড়ির পরিচারিকা পর্যন্ত কমবেশি প্রায় চল্লিশ ধরনের পেশার সঙ্গে যুক্ত শ্রেণির মানুষের উল্লেখ রয়েছে সেখানে। এবং যে তালিকা মূলত এই বার্তাই দিচ্ছে যে, এ বারের ভোটে সমাজের তুলনামূলক গরিব অংশকেই পাখির চোখের মতো দেখছেন রাহুল।

যদিও এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ আজ বলেন, “এ ব্যাখ্যা ঠিক নয় যে মধ্যবিত্তের ভোটের আশা ছেড়ে দিচ্ছে কংগ্রেস। বরং তা অতি সরলীকরণ হবে।” দাবি, শহর ও মফস্বলের মধ্যবিত্তের ভোট বরাবরই পেয়েছে কংগ্রেস। আর্থিক সংস্কার এবং গ্রাম ও শহরের পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে মধ্যবিত্তদের আস্থাও ধরে রাখার চেষ্টা করেছে সরকার। দিগ্বিজয়ের কথায়, “রাহুল চাইছেন, ইউপিএ শাসনে দশ বছরে সমাজের গরিব অংশের সামাজিক সুরক্ষার জন্য যে সব কর্মসূচি নিয়েছে কেন্দ্র, ভোটে যেন তার সুফল পায় দল।”

তবে ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেসের অনেক নেতাই স্বীকার করে নিচ্ছেন শহুরে মধ্যবিত্তদের বড় অংশের মন ইতিমধ্যেই নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁরা বলছেন, ইউপিএ শাসনে একের পর এক দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি ও আর্থিক মন্দার প্রভাব সবচেয়ে বেশি ধাক্কা দিয়েছে মধ্যবিত্তকেই। তাঁদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে কংগ্রেসের ব্যাপারে। সে কারণে সমাজের এই অংশের অসন্তোষ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সব থেকে বেশি। যার কিছুটা প্রমাণ মিলেছিল ডিসেম্বরে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে। সেই ভোটে কংগ্রেসকে কার্যত ধরাশায়ী করে চমকপ্রদ উত্থান হয়েছিল অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টির। লোকসভা ভোটের আগে সেটাই ভাবাচ্ছে কংগ্রেস নেতৃত্বকে। তাই গত লোকসভা নির্বাচনে স্থায়িত্বের প্রশ্ন তুলে ভোটে গিয়ে দেশের সবক’টি মহানগরী ও শহরাঞ্চলে কংগ্রেস ভাল ফল করলেও এ বার কিন্তু সেই সব এলাকার ফল নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে নেতাদের মনে।

রাহুল শিবির সূত্রে বলা হচ্ছে, এই প্রেক্ষাপটেই রাহুল বেছে নিয়েছেন সমাজের দরিদ্র অংশকে। শুধু বেছে নেওয়াই নয়, আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরীবাল যে ভাবে জনসংযোগ বাড়িয়েছেন, সেই পথ অনুসরণ করতে চান রাহুলও। সেই অঙ্ক মেনেই সম্প্রতি বেনারস রেল স্টেশনের বাইরে রিকশাচালকদের সঙ্গে চৌপাল বৈঠক করেছেন রাহুল।

রাহুলের নির্দেশে কংগ্রেসের তরফে বিভিন্ন রাজ্যের প্রদেশ দফতরে যে চিঠি আজ পাঠানো হয়েছে, তাতেও বলা হয়েছে, “আপনারা নিশ্চয়ই দেখছেন, রাহুল গাঁধী গোটা দেশ ঘুরে সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছেন। আপনারাও তা অনুসরণ করুন। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তা ঠিক ভাবে করছে কি না, তার ওপর নজর রাখবে হাইকম্যান্ড।”

রাহুলের দফতর থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে সমাজের যে সব অংশের সঙ্গে কংগ্রেস কর্মীদের যোগাযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে, তাঁরা হলেন, কামার, কুমোর, ছুতোর, কলের মিস্ত্রি, বিড়ি শ্রমিক, সাফাই কর্মী, ইমারতি শ্রমিক, বাস চালক ও কন্ডাক্টর, মৎস্যজীবী, চা বাগানের শ্রমিক, দুগ্ধ সমবায় কেন্দ্রের কর্মী, সরকারি-বেসরকারি দফতরের নিচুতলার কর্মী, বিমা কর্মী, বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক, স্বর্ণকার, খনি শ্রমিক, অটোচালক, ট্যাক্সি চালক, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ইত্যাদি।

জনার্দন দ্বিবেদীর কথায়, “একশো দিনের কাজ, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য বিমা, বার্ধক্য পেনশন, কর্মচারী ভবিষ্যনিধি প্রকল্পে ন্যূনতম পেনশন বাড়ানোর মতো গুচ্ছ প্রকল্প সমাজের এই সব অংশের জন্য রূপায়ণ করেছে সরকার। রাহুল চাইছেন, সেই বিষয়টিই প্রচারে আরও বেশি করে তুলে ধরুক দল।”

মজার বিষয় হল, রাহুলের এই চিঠি নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠছে কংগ্রেসে। দলের এক শীর্ষ সারির নেতা আজ বলেন, “সন্দেহ নেই, এটা রাহুলের তরফে ইতিবাচক উদ্যোগ। কিন্তু এতো পরে কেন? এ ব্যাপারে এত দিন কেনই বা ঘুমোচ্ছিল দল?” তাঁর ব্যাখ্যা, শুধু দ্বিতীয় ইউপিএ জমানায় নয়, প্রথম ইউপিএ-র সময় থেকেই সমাজের এই অংশের ওপর নজর দিয়েছেন সনিয়া গাঁধী। অথচ তার সুফল নিতে একেবারে ভোটের মুখে পথে নামার ডাক দিয়েছেন রাহুল। মজা করে কংগ্রেসের ওই নেতা বলেন, “পরের ভোটের জন্য একটু তাড়াতাড়ি হয়ে গেল না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rahul loksabha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE