—ফাইল চিত্র।
অস্থিরতার জেরে গত কয়েক বছর ধরেই ভূস্বর্গে যাতায়াত কমেছে পর্যটকদের। গোদের উপর বিষফোঁড়া পুলওয়ামার জঙ্গিহানা। যার জেরে বাতিল হচ্ছে একের পর এক আগাম বুকিং। পর্যটনের ভরা মরসুমেও হাসি উধাও কাশ্মীর উপত্যকার হোটেল-রেস্তরাঁ মালিকদের। এই পরিস্থিতিতে দিন কয়েক আগে কলকাতায় এসে ভ্রমণ সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন কাশ্মীরের পর্যটন দফতরের কর্তারা। তাঁদের দাবি, ভূস্বর্গে পর্যটকদের কোনও আতঙ্কের কারণ নেই। তাই এ রাজ্যের ভ্রমণ সংস্থাগুলি আরও বেশি পর্যটক সেখানে পাঠাতেই পারেন।
২০১৬ সালে জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকেই কাশ্মীরের পরিস্থিতি ক্রমশ অস্থির হয়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে পর্যটকের সংখ্যা। পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি গত বছরেও। পর্যটন দফতরের হিসেব অনুযায়ী, গত বছর দেশ-বিদেশ মিলিয়ে কাশ্মীরে বেড়াতে এসেছিলেন প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ পর্যটক। এ বার সেই সংখ্যাটা বাড়বে বলে আশা করেছিল পর্যটন দফতর। কিন্তু গত সপ্তাহের জঙ্গি হামলা জল ঢেলেছে সেই আশায়। হামলার পর থেকেই কাশ্মীরি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী একাধিক সংগঠন। রাজ্যে রাজ্যে কাশ্মীরিদের উপরে হামলাও চালাচ্ছে ওই সব সংগঠনের সদস্যরা। পর্যটন সংস্থাগুলি জানাচ্ছে এপ্রিল মাস পর্যন্ত যাঁদের আগাম বুকিং ছিল, হামলার এক সপ্তাহের মাথায় তাঁরা অনেকেই বুকিং বাতিল করছেন।
পর্যটন দফতরের ডিরেক্টর নিসার আহমেদ ওয়ানি বলেছেন, ‘‘সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলির ব্যাপক প্রচারের কারণে এ বার জুন পর্যন্ত আমাদের সব হাউসবোটগুলি প্রায় ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পুলওয়ামার হামলার পর থেকেই পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে।’’ যার ফলে ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে ফ্যাসাদে পড়েছেন হোটেল মালিকরাও। ওই কর্তা জানাচ্ছেন, আগে থেকে বুক করলে ছাড় পাওয়া যায় প্যাকেজে। যে কারণে বছরের এই সময় থেকে শুরু হয় অগ্রিম বুকিং। এ বার আগাম বুকিং তো দূর, বুকিং বাতিল হয়ে যাচ্ছে পর পর। টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে এজেন্টদের।
আরও পড়ুন: বিরুদ্ধ স্বরকে দাবিয়ে দিতে শুরু হয়েছে ভাষা-সন্ত্রাস
জম্মু ও কাশ্মীর হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলির সংগঠনের প্রেসিডেন্ট শওকত চৌধরি বলেছেন, ‘‘কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবসাকে বরাবরই কোণঠাসা করার চেষ্টা চলে। এ বার শুরু হয়েছে অপপ্রচার। যার ফলে পর্যটন ব্যবসায় যাঁরা পুঁজি লাগিয়েছিলেন, তাঁরা বড় ক্ষতির মুখে পড়ছেন।’’ কাশ্মীরের বাইরের পর্যটন সংস্থাগুলিও কাশ্মীরের হয়ে প্রচার করতে চাইছে না।
রাজ্যের ভ্রমণ সংস্থাগুলির দাবি, ৪৯ জন জওয়ান নিহত হওয়ার পরে পর্যটকদের একাংশ আতঙ্কিত। ‘ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল’ এর প্রবীণ সদস্য বাচ্চু চৌধুরী বলেন, ‘‘পর্যটকেরা সকলেই যে ভয়ে ভ্রমণ বাতিল করছেন, তা নয়। তবে প্রায় ৩০ শতাংশ বাতিলের পথে।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পুজোর সময়ের বুকিংয়ের জন্য খোঁজখবর নেওয়াটাও এই মুহূর্তে বন্ধ রয়েছে।’’
বৈঠকে কাশ্মীরের ভ্রমণ সংস্থার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, পর্যটন ব্যবস্থা ঠিক মতো না চললে সেখানে বেকারত্ব আরও বাড়বে। তাতে সমস্যাও বাড়বে। গত বছর মার্চ ও এপ্রিল মাস জুড়ে পূর্বাঞ্চল থেকে প্রায় ৫ লক্ষ পর্যটক গিয়েছিলেন ভূস্বর্গে। কলকাতার একাধিক ভ্রমণ সংস্থার দাবি, পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁরা মার্চ-এপ্রিলের ভ্রমণ বাতিল করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy