Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
National News

বাবার শব কাঁধে শ্মশানে চার মেয়ে, ‘একঘরে’ করল রাজস্থানের মোড়লরা

এ গল্প চার কন্যার। বলা যেতে পারে চার বিদ্রোহিনীর। রাজস্থানের বুন্দি জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের। বছর আটান্নর দুর্গাশঙ্কর রেগার মারা যাওয়ার আগেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, তাঁর অন্তিম ক্রিয়াকর্ম করবে মেয়েরাই। মেয়েরাও তাতে কোনও সমস্যা দেখেননি। কিন্তু সেটা জানাজানি হতেই মোড়ল-মাতব্বররা হুমকি দিতে থাকে, এ কাজ করলে ফল ভাল হবে না।

বাবার শবদেহ কাঁধে শ্মশানে যাচ্ছেন চার বোন। ছবি: সংগৃহীত

বাবার শবদেহ কাঁধে শ্মশানে যাচ্ছেন চার বোন। ছবি: সংগৃহীত

সংবাদ সংস্থা
জয়পুর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ১৯:১২
Share: Save:

বাবার অন্তিম ইচ্ছা ছিল, মৃত্যুর পর মেয়েরাই তাঁর সৎকার করবে। মারা যাওয়ার পর চার মেয়েও বাবার ইচ্ছে পূরণ করেছে। কুসংস্কার আর নারী পুরুষ বিভেদের মুখে আগুন দিয়ে বাবার যাবতীয় অন্তিম ক্রিয়াকর্ম করেছেন চার মেয়েই।

কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মূলে এমন কুঠারাঘাত সহ্য হয়নি মাতব্বরদের। তাই একঘরে করার নিদান দিয়ে নিয়ন্ত্রণের রশি আরও শক্ত করতে চেয়েছেন ওই গাঁয়ের মোড়লরা। রাজস্থানের বুন্দি জেলার এই ঘটনায় একদিকে যেমন চার কন্যার বীরগাথা সামনে এসেছে, তেমনই ভারতবর্ষের গ্রাম গ্রামন্তরে এখনও যে গোঁড়া সমাজ ব্যবস্থার বেড়ি পরানো, উঠে এসেছে সেই ছবিও।

এ গল্প চার কন্যার। বলা যেতে পারে চার বিদ্রোহিনীর। রাজস্থানের বুন্দি জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের। বছর আটান্নর দুর্গাশঙ্কর রেগার মারা যাওয়ার আগেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, তাঁর অন্তিম ক্রিয়াকর্ম করবে মেয়েরাই। মেয়েরাও তাতে কোনও সমস্যা দেখেননি। কিন্তু সেটা জানাজানি হতেই মোড়ল-মাতব্বররা হুমকি দিতে থাকে, এ কাজ করলে ফল ভাল হবে না।

আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে ধর্ষিতার আত্মহত্যার খবর পেয়ে আত্মঘাতী ধর্ষকও!

শনিবার মৃত্যু হয় দুর্গাশঙ্করের। ফতোয়ার ভয়ের চেয়েও বাবার ইচ্ছাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। বাঁশের মাচায় শোয়ানো বাবার দেহ চার দিকে চার বোন কাঁধে করে নিয়ে গিয়েছেন শ্মশানে। সেখানে মুখাগ্নি থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজকর্ম সেরেছেন। আত্মীয় পরিজন বা পরিবারের অন্য সদস্যদের কেউই তার মধ্যে কোনও অন্যায় দেখেননি।

দেখেছেন সমাজ-শাসকরা। ঔদ্ধত্য আর গোঁড়ামির কারবারকে সমূলে বিনাশ করার সাহসদেখে তাঁরা বিপদের ছায়া দেখেছেন। কর্তৃত্ব খর্ব হওয়ার ভয়ে তাই ফতোয়া। দাওয়াই গোটা গ্রামের থেকে একঘরে, আলাদা। তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যাবে না। শুধু তাই নয়, গ্রামের কমিউনিটি বাথরুমে স্নান করাও নিষেধ তাঁদের। আর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানেও গ্রামের কেউ গেলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ধর্ষণের মামলা তুলে নিতে সন্ন্যাসিনীকে প্রস্তাব দিলেন যাজক!

দেখে নিয়েছেন চার কন্যাও। বাবার শেষ ইচ্ছা পালনের তাগিদ হোক বা সমাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, পিছপা হতে রাজি নন কেউ। বড় মেয়ে মিনা যেমন বলেছেন, ‘‘বাবার কাজ সেরে আসার পরই আমাদের ক্ষমা চাইতে বলে মোড়লরা। কিন্তু আমরা ক্ষমা চাইনি। কারণ, আমরা কোনও অন্যায় করিনি। কোনও অপরাধ করিনি।’’

‘অপরাধ’অবশ্য হয়েছে। মোড়লদের চোখে। জগদ্দল পাথরের মতো সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বসে থাকা অন্ধ বিশ্বাস ভাঙার ‘অপরাধ’। সমাজে নারী পুরুষের সমানাধাকিারের প্রতীক হয়ে ওঠার ‘অপরাধ’। আর তাই বিধান একঘরে থাকার। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা সেখানে ধৃতরাষ্টের ভূমিকায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rajasthan Daughters Funeral Khap Panchayat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE