নিহতদের ঘিরে পরিজনেরা।
বেছে বেছে বাঙালিদের ডেকে নিয়ে গিয়ে তালিবানি কায়দায় সেতুর পাশে বসিয়ে গুলি করে মারল সন্দেহভাজন আলফা (স্বাধীন) জঙ্গিরা। বৃহস্পতিবার রাতে তিনসুকিয়া জেলার ধলা এলাকার ঘটনা।
পুলিশ জানায়, এ দিন রাতে জংলা পোশাক পরা, মুখে কালো কাপড় বাঁধা সশস্ত্র পাঁচ-ছ’জন যুবক বাঙালি অধ্যুষিত খেরবাড়ি গ্রামে ঢোকে। রাত ৮টা নাগাদ একটি দোকানের সামনে কয়েক জন বাসিন্দা গল্প করছিলেন। বেছে বেছে কয়েক জনকে ‘আলোচনা আছে’ বলে ডেকে ভূপেন হাজরিকা সেতুর কাছে নিয়ে যায় তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকলকে জোর করে একসঙ্গে বসানোর পরেই স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে জঙ্গিরা। ঘটনাস্থলেই মারা যান একই পরিবারের তিন সদস্য-সহ ৫ জন। নিহতদের নাম শ্যামলাল বিশ্বাস (৬০), অনন্ত বিশ্বাস (১৮), অবিনাশ বিশ্বাস (২৩), সুবল দাস (৬০) ও ধনঞ্জয় নমশূদ্র (২৩)। জখম হয়েছেন ২ জন। ৩০০ মিটার দূরেই পুলিশ চৌকি। তবে পুলিশ আসার আগেই রাইফেলধারীরা পালায়।
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এখন রাজ্যের বাইরে। তিনি অবিলম্বে দুই মন্ত্রী কেশব মহন্ত ও তপন গগৈ, ডিজিপি কুলধর শইকিয়া, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মুকেশ আগরওয়ালকে ঘটনাস্থলে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী এবং নাগরিকপঞ্জির বিরোধী বাঙালিদের নিশানা করার হুমকি আগেই দিয়েছিল আলফা (স্বাধীন) গোষ্ঠী। পুজোর মুখে ফ্যান্সিবাজারে বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। তখনও তাদের নিশানায় ছিল বাঙালি সংগঠনগুলি। আজকের ঘটনাতেও তাদের হাত রয়েছে বলে পুলিশের দাবি। এলাকাটি বরাবর আলফার ঘাঁটি বলেই পরিচিত।
আরও পড়ুন: মোদীর মুঠোই আলগা হচ্ছে কি
এই ঘটনায় শোক জানিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করেছেন। দোষীদের অবিলম্বে শাস্তি চেয়ে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এনআরসি নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির জেরেই এই পাঁচ জনকে মরতে হল না তো?’’
Terrible news coming out of Assam. We strongly condemn the brutal attack in Tinsukia and the killing of Shyamlal Biswas, Ananta Biswas, Abhinash Biswas, Subodh Das. Is this the outcome of recent NRC development ? 1/2
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) November 1, 2018
ঘটনাচক্রে, শিলিগুড়িতে মমতা এ দিন যে নমশূদ্র প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করেন, তাদের মধ্যে অসমের বাসিন্দারাও ছিলেন। নাগরিকপঞ্জির কারণে তাঁদের অনেকেই অসুবিধায় পড়েছেন। মমতার নির্দেশে আগামিকাল উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি-সহ পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করবে তৃণমূল। কলকাতায় হাজরা মোড় ও মৌলালি থেকে দুপুর ২টোর সময় মিছিল বার হয়ে গাঁধীমূর্তির পাদদেশে যাবে।
কংগ্রেসের অভিযোগ, আলফা যে বাঙালিদের মারার চেষ্টা করছে, এ কথা সরকার ও পুলিশ জানত। তার পরেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়নি। প্রসঙ্গত, বাঙালিদের জন্য ‘দুঃস্বপ্নের ১৯৮৩’ ফিরিয়ে আনার হুমকি দিচ্ছিল আলফা। তা নিয়ে উত্তেজনা ছিলই বাঙালিপ্রধান এলাকাগুলিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy