Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে উত্তাল যোগীর রাজ্য, হত আরও ৬

ডিজি-র দাবি, পুলিশ আজ একটিও গুলি চালায়নি, কাজেই এঁরা কেউ পুলিশের গুলিতে মারা যাননি।

নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে প্রতিবাদীদের দিকে বন্দুক তাক পুলিশের। শুক্রবার মেরঠে। ছবি: এএফপি

নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে প্রতিবাদীদের দিকে বন্দুক তাক পুলিশের। শুক্রবার মেরঠে। ছবি: এএফপি

 নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:২০
Share: Save:

অশান্তির পারদ চড়ছিলই। লখনউয়ে কাল গুলিতে প্রাণ গিয়েছিল এক জনের। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে আজ সারা দিন ধরে আক্ষরিক অর্থেই তাণ্ডব চলল উত্তরপ্রদেশের অন্তত ২০টি জেলায়। যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে এ দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন ৬ জন। রাজ্য পুলিশের ডিজি ওপি সিংহ জানান, বিজনৌরে নিহত হয়েছেন দু’জন, সম্ভল, ফিরোজাবাদ ও মেরঠে এক জন করে। কানপুরেও এক জনের মৃত্যুর কথা জানান অন্য কর্তারা।

ডিজি-র দাবি, পুলিশ আজ একটিও গুলি চালায়নি, কাজেই এঁরা কেউ পুলিশের গুলিতে মারা যাননি। আর এক পুলিশ অফিসারের দাবি, ‘‘গুলি চললে তা প্রতিবাদীরাই চালিয়েছে।’’ যদিও ক্যামেরা এই কথা বলছে না। একাধিক ছবিতে রীতিমতো বন্দুকে নিশানা করতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। ভিডিয়োতেও শোনা গিয়েছে গুলির শব্দ। মেরঠের এডিজি-র দাবি, গুলিতে দু’জন পুলিশ আহত হয়েছেন। উত্তরপ্রদেশে গত কালের হিংসায় বাঙালিদের জড়িত থাকার সম্ভাবনার কথাও বলেছেন ডিজি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা বহিরাগতদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছি। অনেকে বাংলায় কথা বলছিল। দেখা হবে, তারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছিল কি না।’’

ইটবৃষ্টি, পুলিশের লাঠি, কাঁদানে গ্যাস। উত্তরপ্রদেশের জেলায় জেলায় আজ মোটের উপরে এটাই ছবি। মুখ্যমন্ত্রী যোগীর খাসতালুক গোরক্ষপুরের পাশাপাশি সম্ভলে গত কালই অশান্তি বেধেছিল। আজও ওই দুই জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বড়সড় সংঘর্ষ হয়েছে। গোরক্ষপুরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হলে সেই ঢিল কুড়িয়ে পাল্টা ছুড়তে দেখা যায় পুলিশকে। গন্ডগোল বেধেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীতেও। আজ সেখানকার বজরডিহা এলাকায় নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে মিছিল থেকে সরকার-বিরোধী স্লোগান ওঠে। ঢিল ছোড়া শুরু হলে লাঠি চালায় পুলিশ। পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। আহত হন আট জন। একটি বালকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

গত কাল অশান্তি ছিল না ফিরোজাবাদ, ভদোহী, বাহরাইচ, ফারুকাবাদে। আজ ওই সমস্ত এলাকায় প্রতিবাদীরা নিষেধাজ্ঞা ভেঙে মিছিল বার করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে তাঁদের। ফিরোজাবাদে আগুন লাগানো হয় পুলিশের গাড়িতে।

কানপুরে পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশের লাঠিচার্জ। ছবি: পিটিআই।

গোটা রাজ্যে আজ অন্তত ৫০ জন পুলিশ গুরুতর আহত হয়েছেন। আলিগড় ও লখনউ ছিল তুলনায় শান্ত। অভিযোগ উঠেছে, প্রমাণ ছাড়াই আটক ও গ্রেফতার করছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। লখনউয়ে একটি ইংরেজি দৈনিকের এক সাংবাদিক ও তিন জন মহিলা সমাজকর্মীকে কিছু সময়ের জন্য আটক করা হয়। একটি সূত্রের দাবি, আজ মানবাধিকার কর্মী তথা প্রাক্তন আইপিএস এসআর দারাপুরীর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের বহু জেলায় বন্ধ রয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট। কাল রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

ইন্টারনেট এবং এসএমএস পরিষেবা বন্ধ রয়েছে কর্নাটকের কিছু এলাকাতেও। চেন্নাইয়ে গত কাল বিভিন্ন মহলের মানুষেরা নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৬০০ জনের বিরুদ্ধে বেআইনি জমায়েতের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ। গুজরাতের রাজকোটে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবৎ করা হয়েছে। প্রয়োজনে টেলি-পরিষেবা বন্ধের ছাড়পত্রও পুলিশকে দিয়ে রেখেছে গুজরাত সরকার। মহারাষ্ট্রে আজ প্রতিবাদ হয়েছে পুণে, নাগপুর, ঠাণে, ভিওয়ান্ডি, পরভণীতে। বিড়-এ বাসে ঢিল ছোড়া হয়েছে। আবার ভোপালে প্রতিবাদের সুযোগ দেওয়ার জন্য পুলিশকে গোলাপ দিয়েছেন স্থানীয়রা। নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে আগামিকাল বিহার বন্‌ধের ডাক দিয়েছে আরজেডি।

দিল্লিতে আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাড়ির কাছে বিক্ষোভ দেখানোর সময়ে আটক হন দিল্লি মহিলা কংগ্রেসের প্রধান শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শর্মিষ্ঠা জানান, আরও অন্তত ৫০ জন মহিলা কংগ্রেস কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আজ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় পুলিশি তাণ্ডবের বহর খতিয়ে দেখেন। এসএসপি মঞ্জিল সাইনির নেতৃত্বে সাত সদস্যের ওই দল এ দিন ঘুরে দেখে ক্ষতিগ্রস্ত লাইব্রেরি। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত ছাত্রেরা অভিযোগ করেছেন, হাসপাতালেও তাঁদের মেরেছে পুলিশ।

এই আবহে নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। গত ১১ ডিসেম্বর কেব্‌ল টিভি ও চ্যানেলগুলির উদ্দেশে এক নির্দেশিকায় মোদী সরকার বলেছিল, দেশবিরোধী বা আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা সৃষ্টিকারী কোনও বিষয় সম্প্রচার করা যাবে না। যা হিংসায় ইন্ধন দেয় বা কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্মানহানি করে, এমন বিষয়ও রুখতে বলা হয়েছিল চ্যানেলগুলিকে। আজ কেন্দ্র বলেছে, এখনও ওই নির্দেশ কিছু চ্যানেল মানছে না। অতএব তা মেনে চলতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CAA Uttar Pradesh Kanpur Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE