Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Narendra Modi

মোদীর সুরক্ষায় ৬০০ কোটি, কমল পুলিশ-আধুনিকীকরণ বাজেট

বিভিন্ন রাজ্যে চলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একাধিক প্রকল্পেও কমেছে বরাদ্দ। কমার পরিমাণ প্রায় প্রায় হাজার কোটি টাকা।

মোদীর সুরক্ষায় এসপিজি। ফাইল চিত্র।

মোদীর সুরক্ষায় এসপিজি। ফাইল চিত্র।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৪৬
Share: Save:

তাঁর একার সুরক্ষায় গোটা বাহিনী। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেই স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি)-এর জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও, আমজনতার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের আধুনিকীকরণ থেকে সীমান্তে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন— বাজেট বরাদ্দ কমেছে। বিভিন্ন রাজ্যে চলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একাধিক প্রকল্পেও কমেছে বরাদ্দ। কমার পরিমাণ প্রায় প্রায় হাজার কোটি টাকা।

অতীতে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও এসপিজি নিরাপত্তা পেতেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের লোকেরা। কিছু দিন আগে পর্যন্ত এসপিজি নিরাপত্তার তালিকায় ছিলেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কা এবং সনিয়া গাঁধীরা। লোকসভায় দ্বিতীয় বার জিতে আসার পরে এসপিজি আইনে পরিবর্তন আনে মোদী সরকার। নতুন আইনানুযায়ী একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবার ওই সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী হন।

বাজেট নথি বলছে গত বছর এসপিজি-র জন্য যেখানে ৫৪০.১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, এ বার সেই বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯২.৫৫ কোটিতে। বৃদ্ধির পরিমাণ ৫২ কোটি টাকার কাছাকাছি। তুল্যমূল্য বিচারে গত বারের চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বাজেট এ বার প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। যার মধ্যে শুধু ৬০০ কোটি টাকা বেড়েছে আধাসেনা খাতে।

তুলনায় অর্থ বরাদ্দ কমেছে রাজ্য পুলিশের আধুনিকীকরণে। ওই খাতে গত বছরের তুলনায় প্রায় দেড়শো কোটি টাকা কম বরাদ্দ করা হয়েছে। সাধারণত ওই খাতে কেন্দ্র যে অর্থ রাজ্যগুলিকে দেয়, তা দিয়ে পুলিশের জন্য আধুনিক হাতিয়ার ও সরঞ্জাম কেনা, প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার হয়। বিরোধীরা বলছেন, ওই খাতে কম অর্থ বরাদ্দ করার অর্থই হল পুলিশবাহিনীর আধুনিকীকরণ ধাক্কা খাবে। যদিও স্বরাষ্ট্র সূত্রের বক্তব্য, অনেক রাজ্যই কেন্দ্রের পাঠানো অর্থ পুরো খরচ করতে পারে না। তাই আগের আর্থিক বছরের খরচের তুলনা করে পরের বছরে টাকা বরাদ্দ হয়।

সফল ভাবে সীমান্তরক্ষা করা সীমান্ত এলাকার উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। স্বরাষ্ট্র কর্তারা বলে থাকেন, স্থানীয়দের ইতিবাচক সাহায্য পেলে সীমান্ত পাহারা দেওয়া অনেক সহজ হয়। সে জন্য প্রয়োজন হয় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলির ধারাবাহিক পরিকাঠামোগত উন্নয়ন। কিন্তু তাতেও এ বার বরাদ্দে কাটছাঁট। বরাদ্দ কমেছে মাওবাদী এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নেও। সব মিলিয়ে গত বারে কেন্দ্রীয় অর্থে রাজ্যগুলিতে চলা প্রকল্পে ৪৯৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। এ বারে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯৪৫ কোটি টাকা। বরাদ্দ কমেছে প্রায় ৯৯৪ কোটি টাকা।

নাম মাত্র বরাদ্দ বেড়েছে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে। প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ বার প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ করেছেন ৪.৭১ লক্ষ কোটি। যে টাকার মধ্যে প্রায় ১.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় হবে পেনশন খাতে। বাকি ৩.৩৭ কোটি টাকা পড়ে থাকে তা গত বারের বরাদ্দের চেয়ে মাত্র ১.৮ শতাংশ বেশি। স্বভাবতই প্রতিরক্ষা খাতে ওই সামান্য বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের বক্তব্য এই সরকার যেখানে প্রতিরক্ষা খাতে জোর দেওয়ার নীতি নিয়ে এগোচ্ছে, বিদেশ থেকে আধুনিক সমরাস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, সেখানে দু’শতাংশের চেয়েও কম বৃদ্ধি বাহিনীর জন্য হতাশার।

প্রতিরক্ষা সূত্রের মতে, এর ফলে এম ৭৭৭ হাউৎজার, কে-৯ কামান, কে এ-৩১ চপার, পি-৮১ নজরদারি বিমান, আধুনিক রেডার, এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও যন্ত্রাংশ কেনার কাজ থমকে যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে সদ্য নিযুক্ত চিফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রওয়াত জানান, ‘‘চাহিদা ও সমরাস্ত্র কেনার মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। অগ্রাধিকার দিতে হবে কোনটি সব চেয়ে জরুরি তার উপরে। তার পরেও টাকা লাগলে সরকারের কাছে দাবি জানানো যেতে পারে।’’ এ নিয়ে সরকারকে আক্রমণ শানাতে ছাড়েননি কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা। তাঁর কথায়, ‘‘সেনার নামে ভোট চেয়ে ক্ষমতায় এসেছে সরকার। পাকিস্তানকে ফি দিন গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। সেখানে এই সামান্য বরাদ্দ আসলে সামগ্রিক ভাবে দেশের প্রতিরক্ষাকে দুর্বল করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi SPG Security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE