Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
National News

‘পুলিশের চাকরি আর করবে না, ছেলেকে খুন কোরো না’

সোপিয়ানের বাতাগুন্দ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন নিসার আহমেদ (৪৪)। শুক্রবার সাতসকালেই দরজা ভেঙে হুড়মুড় করে সাইদার ঘরে ঢুকে পড়েছিল জঙ্গিরা।

পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য জঙ্গিদের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন সত্তর বছরের সাইদা বেগম। ছবি: সংগৃহীত।

পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য জঙ্গিদের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন সত্তর বছরের সাইদা বেগম। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১২:০৯
Share: Save:

চাকরি নয়। বেঁচে থাকাটাই বড় কথা। তাই অস্ত্রধারী জঙ্গিদের কাছে ছেলের প্রাণভিক্ষা করেছিলেন সত্তর বছরের সাইদা বেগম। ঘরের একমাত্র রোজগেরে ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার আর্জিও জানিয়েছিলেন। কথা দিয়েছিলেন, জঙ্গিদের হুমকি মেনে পুলিশের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে দেবে ছেলে। কিন্তু, শত অনুরোধেও কাজ হয়নি। ঘর থেকে টেনে বার করে ছেলেকে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। শুক্রবার কাশ্মীরের সোপিয়ানে ওই ঘটনার আধ ঘণ্টা পর কনস্টেবল নিসার আহমদের মৃতদেহ মেলে জঙ্গলে।

সোপিয়ানের বাতাগুন্দ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন নিসার আহমেদ (৪৪)। শুক্রবার সাতসকালেই দরজা ভেঙে হুড়মুড় করে সাইদার ঘরে ঢুকে পড়েছিল জঙ্গিরা। বন্দুকের নলের সামনে অসহায় ছিল গোটা পরিবার। এর পর তুলে নিয়ে যায় নিসারকে।

নিসারকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পর একটি ভিডিয়োবার্তায় ছেলের প্রাণভিক্ষা করেছিলেন সাইদা ও তাঁর পরিজনেরা। হাতজোড় করে নিসারকে ছেড়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন জঙ্গিদের কাছে। পরিবারের এক আত্মীয় বলছেন, “আমরা স্থির করেছিলাম, শুক্রবারের নমাজের পরই পুলিশের চাকরি থেকে ইস্তফার কথা ঘোষণা করেবে নিসার।” জঙ্গিদের ‘ভাই’ সম্বোধন করে ভিডিয়োতে সাইদাদের আর্জি ছিল, “ভাইদের কাছে অনুরোধ, আজই (শুক্রবার) ওকে ইস্তফা দিতে বলব। আমরা ওর এই চাকরি চাই না। কারণ সে বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।” তবে ওই আর্জিতেও কোনও কাজ হয়নি। এর কিছু ক্ষণ পরেই বাতাগুন্দ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এক ফলের বাগানে নিসারের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয়।

আরও পড়ুন
সোপিয়ানে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন ৩ পুলিশকে

নিসার আহমেদের কফিন ঘিরে শোকে ভেঙে পড়েছেন তাঁর আত্মীয়-পরিজনেরা। ছবি: পিটিআই।

বৃদ্ধ স্বামী, নিসারের দুই সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে শোকে ভেসে গিয়েছেন সাইদা। তিনি জানিয়েছেন, “জঙ্গিদের কাছে হাতজোড় করে বলেছিলাম, আমার ছেলে পুলিশের চাকরি ছেড়ে দেবে।” পরিবারের এক আত্মীয় জানিয়েছেন, নিসারকে ছেড়ে দেওয়ার কথা নাকি বলেছিল জঙ্গিরা। কিন্তু, তারা সে কথা রাখেনি।

আরও পড়ুন
রিলায়্যান্সকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল ভারত সরকার, ওলাঁদের মন্তব্যে চাপে কেন্দ্র

ঘটনার দায়স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিন। হিজবুল নেতা রিয়াজ নাইকু এর দিন কয়েক আগেই একটি ভিডিয়োবার্তায় কাশ্মীরের পুলিশকর্মীদের হুমকি দিয়েছিলেন, চাকরি থেকে ইস্তফা না দিলে মরতে হবে তাঁদের। এক এক করে জনা ছয়েক পুলিশকর্মী অনলাইনে ইস্তফার কথা ঘোষণাও করেন। যে ঘটনাকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অসত্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়েছে। সেই সরকারি বিবৃতি নিয়ে অবশ্য কোনও কথা বলেননি সাইদা। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলেকে হারিয়ে এখন আকূল পাথারে সত্তর বছরের বৃদ্ধা।

(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE