Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Prahlad Jani

৭০ বছর ধরে স্রেফ হাওয়া খেয়ে বেঁচে আছেন ইনি?

স্রেফ হাওয়া। কোনও খাবার নয়, জলও নয়। কিস্যু নয়। ৭০ বছর ধরে নাকি কিছু না খেয়েই রয়েছেন। শুধুমাত্র নিয়মিত যোগাসন করেন। তাতেই নাকি ‘ফিট’ এই যোগী। মা অম্বার কৃপায় তিনি নাকি এ ভাবেই জীবনের ৮৮ বছর পার করে দিয়েছেন।

এই সেই প্রহ্লাদ জানী

এই সেই প্রহ্লাদ জানী

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৮ ১৫:৩৪
Share: Save:

স্রেফ হাওয়া। কোনও খাবার নয়, জলও নয়। কিস্যু নয়। ৭০ বছর ধরে নাকি কিছু না খেয়েই রয়েছেন। শুধুমাত্র নিয়মিত যোগাসন করেন। তাতেই নাকি ‘ফিট’ এই যোগী। মা অম্বার কৃপায় তিনি নাকি এ ভাবেই জীবনের ৮৮ বছর পার করে দিয়েছেন।

পরনে লাল কাপড়। কপালে লাল টিপ।এক মুখ দাড়িগোঁফ। জাঙ্ক জুয়েলারিও পরেন দিব্যি। রয়েছে দেশ-বিদেশের অসংখ্য ভক্ত। যে কোনও সমস্যায় পড়লে, এই পাওহারি বাবা নাকি তার সমাধান করে দেন। পাওহারি-র অর্থ পবন-আহারি, অর্থাত্ যিনি পবন বা হাওয়া খেয়েই বেঁচে থাকেন।

গুজরাতের মেহসানায়, চারোদ বা চারাদা গ্রামের এই বাসিন্দা এই যোগীর আসল নাম প্রহ্লাদ জানী। তাঁর দাবি, সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি কিছু না খেয়েই রয়েছেন। ১৮ বছরের বয়সেই নাকি ঠিক করে নিয়েছিলেন, জীবনটা অন্য রকম ভাবেই কাটাবেন। তখনই শুরু হয় যোগাসন ও বায়ুসাধনা।

আগেও হইচই হয়েছে এই বাবাকে ঘিরে। এপিজে আবদুল কালাম রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালীন, ২০১০ সালে, দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা (ডিআরডিও) ও কেন্দ্রীয় সরকারি গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা টানা ১৫ দিন ধরে নজরদারি চালিয়েছিলেন প্রহ্লাদের উপর। এমআরআই, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, এক্স-রে অনেক কিছু করা হয়েছে। সূর্যের আলোয় টানা বসিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে তাঁর শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন। তাঁর শরীর থেকে রক্ত নিয়ে মাপা হয়েছে লেপটিনের পরিমাণ। কারণ এই মাস্টার হরমোন লেপটিনই নিয়ন্ত্রণ করে দেহের ওজন। দেখার চেষ্টা হয়েছিল, এই লেপটিনের কোনও রকম এদিকওদিক হচ্ছে কি না প্রহ্লাদের শরীরে। যাকে বলে ‘এক্সট্রিম অ্যাডপটেশন’। কিন্তু সব মিলিয়ে রহস্যভেদ হয়নি।

নিজের আশ্রমে পাওহারি বাবা।

কিন্তু এটা কি আদৌ সম্ভব? শুধু হাওয়া খেয়ে বেঁচে থাকা! চিকিত্সা বা জীববিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত একটা বড় অংশই কিন্তু একবাক্যে উড়িয়ে দিচ্ছেন এহেন হাওয়া খেয়ে বেঁচে থাকার দাবি।

আমেরিকার হেনরিফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক পারিজাত সেন আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘এটা একেবারে ভাঁওতাবাজি। বাঁচতে গেলে সামান্য কিছু হলেও খেতে হবে। শরীরের সিস্টেম কিছুদিন পরই আর সাপোর্ট করবে না। এই পাওহারি বাবা-টাবা স্রেফ গল্প।’’

অন্য দিকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের শারীরতত্ত্ব (অ্যানাটমি) বিভাগের স্পেশালিস্ট মেডিক্যাল অফিসার চিরঞ্জিৎ সামন্তর কথায়, ‘‘এই ধরনের ঘটনার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে ফরেনসিক মেডিসিনে সাসপেনডেড অ্যানিমেশন বলে একটা শব্দ রয়েছে। কোনও মানুষের মৌল বিপাক ক্রিয়া অর্থাৎ বিএমআর-এর হার খুব কমিয়ে রেখে একেবারে আলোবাতাসহীন কোনও জায়গায় থাকলে তিনি বেঁচে থাকতে পারেন কি না, এ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু ৭০ বছর ধরে না খেয়ে বেঁচে থাকা? অসম্ভব।’’

প্রহ্লাদ জানীর প্রসঙ্গে শ্রীরামপুরের ওয়ালশ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বিয়াস সামন্ত বলেন, ‘‘যোগী বাবা একেবারেই কিছু খান না হতেই পারে না। এ সব একেবারে ভুল। বেঁচে থাকতে গেলে তো এনার্জি সোর্স চাই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সাসপেনডেড অ্যানিমেশনেও অসম্ভব এটি। দীর্ঘ দিন না খেয়ে থাকলে ত্বক, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয় সর্বত্র প্রভাব পড়বে। ডিহাইড্রেশন হবে। দেহের বিভিন্ন অংশে জল জমে ফুলেও উঠতে পারে। চলাফেরার ক্ষমতা তো থাকবেই না।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

যতই বিতর্ক থাক, এহেন বাবার আশ্রমে কিন্তু বিশিষ্টজনেরা প্রায়ই আসেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও পাওহারির বাবার আশ্রমে গিয়েছেন আশীর্বাদ নিতে। গিয়েছেন বা যাতায়াত করেন আরও অনেক রাজনীতিবিদ বা প্রভাবশালী ব্যক্তি।

আরও খবর:

ইফতারে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফোন রাহুলের, প্রণব বললেন ‘যাচ্ছি’

‘দেশ চালাচ্ছেন মোদী-ভাগবত’, তীব্র আক্রমণ রাহুলের​

রামকৃষ্ণ মিশনের এক চিকিৎসক-মহারাজকে পাওহারি বাবার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ জ্ঞানে মনে হয় এটা অসম্ভব। একজন জল-খাবার না খেয়ে কী করে বেঁচে থাকবেন? বিজ্ঞানেও সে কথা কখনও পড়িনি। তবে গাজিয়াবাদে ‘পবন-আহারি’ বাবা নামে একজনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন স্বামীজি (স্বামী বিবেকানন্দ), তিনি নাকি বেশ কিছু দিন কিছু না খেয়ে শুধু যোগাসন করেই কাটিয়ে দিতে পারতেন।’’

এত কিছু বিতর্কের পরেও প্রহ্লাদ জানীর ভক্তের সংখ্যা কিন্তু বাড়ছে। ইনি ‘মাতাজি’ নামেও পরিচিত। এমনই এক ভক্ত সংবাদসংস্থা এএনআই-কে বলেন, ‘মাতাজি’ বাবার সম্পর্কে বহুদিন শোনার পরই উত্তরপ্রদেশের চিত্রকূট থেকে সোজা গুজরাতের মেহসানায় এসেছেন। না, কোনও টাকাপয়সা নেন না বাবা সমস্যা সমাধানের জন্য। ৮৮ বছর বয়সে সারা বিশ্বের যুক্তিবাদী মানুষকে তুর্কি নাচন নাচাচ্ছেন মাতাজি প্রহ্লাদ জানী। বলছেন, ভালবাসা আর মা অম্বার কাছে প্রার্থনা— বেঁচে থাকতে গেলে নাকি মানুষের আর কিছুরই প্রয়োজন নেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Prahlad Jani Gujarat Breatharian Monk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE