নিহত জওয়ানের কফিন কাঁধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। শুক্রবার শ্রীনগরে। ছবি: এএফপি।
কাশ্মীরের অবন্তীপোরায় সিআরপি কনভয়ে জঙ্গি হামলার পর আজ গোটা কাশ্মীর জুড়ে ভয়ের পরিবেশ। হামলাস্থলের আশপাশের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। উপত্যকার জুড়ে চলছে নিরাপত্তা বাহিনীর টহলদারি। সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রতিবাদে জম্মুর বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তান-বিরোধী বিক্ষোভ দেখানো হয়। সেখানে জারি হয়েছে কার্ফু।
জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সেখানে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। নিহত জওয়ানদের তিনি শেষ শ্রদ্ধা জানান। নিজের কাঁধে এক জওয়ানের কফিনও বয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিরা গত কাল যেখানে হামলা চালিয়েছিল, সেই জায়গাটি ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী। সেখানে আজ সকালেও রক্তের দাগ স্পষ্ট, বিস্ফোরণের তীব্রতায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার পাথর এবং জওয়ানদের জিনিসপত্র ছত্রতত্র ছড়িয়ে। সকালে একদল স্থানীয় বাসিন্দাদের সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘‘বিস্ফোরণের পর বাড়িতে শেল থাকতে পারে, সেই আশঙ্কায় পুলিশ আমাদেব বাড়িতে ঢুকতে বারণ করেছিল। আমরা অন্য গ্রামে রাত কাটিয়েছি।’’ হামলাস্থলের সংলগ্ন এলাকার অন্তত ৩৫টি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। উপত্যকায় জঙ্গি হামলার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িতে তল্লাশি, হেনস্থার ঘটনা ঘটে। তবে এলাকাবাসীরা বলেন, ‘‘আমাদের কেউ মারধর করেনি। জঙ্গি আক্রমণের সময় রোড ওপেনিং পার্টির লোকেদের আমাদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলাম।’’ বিস্ফোরণের তীব্রটা এতটাই যে এলাকার অনেক বাড়ির দেওয়ালে চিড় ধরেছে। ইলেকট্রিক লাইন সম্পূর্ণ নষ্ট। সন্ত্রাসের প্রতিবাদে লেথপোরার ব্যবসায়ীরা আজ বন্ধ ডেকেছিলেন।
আজ কার্যত অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে জম্মুর বিভিন্ন এলাকা। রাস্তা ছিল সুনসান, বন্ধ দোকানপাট। পাক-বিরোধী স্লোগান, গাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ— দিনভর কিছুই বাদ যায়নি। সংঘর্ষে জখম হয়েছেন বেশ কয়েকজন। জম্মুর ডেপুটি পুলিশ কমিশনার রমেশ কুমার বলেন, ‘‘আগাম সতর্কতা হিসেবে কার্ফু জারি করা হয়েছে।’’ জম্মুতে নামানো হয়েছে সেনা।
নয়াদিল্লি থেকে আজ সরাসরি সিআরপির ক্যাম্পে যান রাজনাথ। নিহত জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানান। নিহত এক জওয়ানের কফিন কাঁধে করে ট্রাক পর্যন্ত পৌঁছে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজনাথ আজ জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব-সহ রাজ্যের শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘যখন সেনা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কনভয় যাবে, তখন আমজনতার যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’’ উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘যারা পাকিস্তান ও আইএসআই-এর থেকে অর্থ পেয়ে থাকে, তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি নতুন করে খতিয়ে দেখতে হবে।’’
জওয়ানদের যাতায়াতের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওমর আবদুল্লা। তাঁর টুইট, ‘‘নিরাপত্তা বাহিনীর যাতায়াতের জন্য বানিহাল এবং বারামুলার মধ্যে কি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা যেত না? জাতীয় সড়কে কনভয়ের চেয়ে জওয়ানেরা অনেক নিরাপদে দ্রুত যাতায়াত করতে পারতেন।’’ তিনি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ওই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কেউ তা শোনেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy