Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
National News

সেনার গুলিতে মৃত্যু জঙ্গি হয়ে ওঠা কাশ্মীরি কিশোরের

অবশেষে ফিরল ছেলে। তবে পায়ে হেঁটে নয়, কফিনবন্দি হয়ে। বুকফাটা আর্তনাদের মাঝেই প্রৌঢ় বাবা-মা জানতে পারলেন বাড়ি থেকে পালিয়ে ছেলে নাম লিখিয়েছিল জঙ্গি দলে। উপত্যকায় পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইতেই প্রাণ গিয়েছে তাঁর।

গত জুনেই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় ফারহান ওয়ানি। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

গত জুনেই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় ফারহান ওয়ানি। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ২২:০২
Share: Save:

ছেলের অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন প্রৌঢ় বাবা। ঈশ্বরের কাছে রোজ প্রার্থনা জানাতেন মা। কয়েক দিন পর পরই রাঁধতেন ছেলের প্রিয় চিকেনের ডিস। বাড়ি ফিরে একছুটে রান্নাঘরে গিয়ে এই খাবারই তো চাইবে ছেলে। যেমনটা ঠিক আগে হত।

অবশেষে ফিরল ছেলে। তবে পায়ে হেঁটে নয়, কফিনবন্দি হয়ে। বুকফাটা আর্তনাদের মাঝেই প্রৌঢ় বাবা-মা জানতে পারলেন বাড়ি থেকে পালিয়ে ছেলে নাম লিখিয়েছিল জঙ্গি দলে। উপত্যকায় পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইতেই প্রাণ গিয়েছে তাঁর।

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার কাশ্মীরের অনন্তনাগের লারনু এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী। একটি বাড়িতে জঙ্গিরা লুকিয়ে রয়েছে সন্দেহে বাড়িটিকে ঘিরে ফেলে শুরু হয় গুলির লড়াই। সেখানেই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ যায় ফারহান ওয়ানি নামে ওই কিশোরের। পুলিশ জানিয়েছে, ফারহানের সঙ্গে থাকা আরও তিন জঙ্গি পলাতক। এরা সবাই জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল মুজাহিদিনের সদস্য।

আরও পড়ুন:

ফিরে এল নজীবের স্মৃতি, জেএনইউ থেকে নিখোঁজ মুকুল

পুলিশের সামনেই মঞ্চে জিগ্নেশ

উপত্যকার কিশোর এবং তরুণদের জঙ্গি গোষ্ঠীতে নাম লেখানোর ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগেও একাধিকবার এমন ঘটনা সামনে এসেছে। কুলগাম পুলিশ জানিয়েছে, অনন্তনাগের পেহলিপোরা গ্রামের বাসিন্দা বছর পনেরোর ফারহান। গত ১৪ জুন টিউশনের যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বার হয় সে। তার পর থেকেই তার আর কোনও খোঁজ মিলছিল না। পুলিশের কাছে নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার বাবা মা। ফারহানের বাবা গুলাম মহম্মদ ওয়ানি জানিয়েছেন, তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে ফারহানই ছিল কনিষ্ঠ। পড়াশোনায় সে বরাবরই মেধাবী। পরীক্ষায় সবসময় ৯০ শতাংশ নম্বর পেত। ছেলেকে ফেরানোর জন্য ফেসবুকে ফারহানের টাইমলাইনে তিনি একটি পোস্টও করেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে আমার শরীর ভেঙে পড়ছে। আমি খুব যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছি। আমি মরতে চাই না, শুধু চাই তুমি ফিরে এসো…তোমার মা’ও তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন।’’ কিন্তু সেই ডাকে সাড়া দেয়নি ফারহান।

পুলিশ জানিয়েছে, স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান ছিল ফারহান। গ্রামে তাদের নিজস্ব দোতলা বাড়ি রয়েছে। ফারহানকে খুঁজতে গিয়েই তাঁরা জানতে পারেন হিজবুল দলে নাম লিখিয়েছে সে। এমন এক জন মেধাবী ছাত্র হঠাৎ জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিলেন কেন? জবাব খুঁজে পাচ্ছে না তাঁর পরিবার।

কাশ্মীরি যুবকদের জঙ্গি সংগঠনে নাম লেখানো নিয়েই বহু বছর ধরেই উদ্বেগে কেন্দ্র। জঙ্গি সংগঠনগুলির মগজধোলাই বন্ধ করতে সচেতনতার প্রচারও চালানো হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। তা সত্ত্বেও এই প্রবণতা যেন ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক’দিন আগেই বছর ছাব্বিশের যুবক মান্নান ওয়ানির জঙ্গি দলে নাম লেখানো নিয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। মেধাবী ওই যুবক আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করতেন। পরিবারের অজান্তে সে-ও জঙ্গি দলে যোগ দিয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE