Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘বড়া দেও’ আহত বাবার হানায়, পাহারা দিচ্ছে মা

কিন্তু বিপদটা এল ছেলের বাবার কাছ থেকেই। গত ৩০ অক্টোবর ঝোপের পাশে ওত পেতে থাকা একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ‘বড়া দেও’-য়ের উপরে।

আহত বড়া দেও। ছবি: বন দফতরের সৌজন্যে

আহত বড়া দেও। ছবি: বন দফতরের সৌজন্যে

দেবদূত ঘোষঠাকুর
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫৫
Share: Save:

আড়াই বছরের ছেলে ‘বড়া দেওকে’ পাশে নিয়েই জঙ্গলে ঘুরে বেড়াত কমলি। বড়সড় চেহারার বড়া দেওকে দেখে মধ্যপ্রদেশের সঞ্জয় ডুবরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ‘রানি’ বাঘিনি কমলিকে এড়িয়ে চলত অন্য পুরুষ বাঘেরা।

কিন্তু বিপদটা এল ছেলের বাবার কাছ থেকেই। গত ৩০ অক্টোবর ঝোপের পাশে ওত পেতে থাকা একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ‘বড়া দেও’-য়ের উপরে। চেপে ধরেছিল তার টুঁটি। সম্বিৎ ফিরতে কমলি ঝাঁপিয়ে পড়ে তার উপরে। বনকর্মীরা জানাচ্ছেন, তখনকার মতো সরে গেলেও আক্রমণকারী বাঘটি কাছেপিঠেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে জন্য ২৪ ঘণ্টা বড় ছেলেকে আগলে রেখেছে কমলি। হামলাকারী একাধিক বার ফিরে এলেও মা তাড়া করে ভাগিয়ে দিয়েছে তাকে।

বনাঞ্চলের রেঞ্জার বীরভদ্র সিংহ পরিহার বলেন, ‘‘প্রথমে আমাদের মনে হয়েছিল, দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী বাঘের মধ্যে মারামারি হয়েছে। পরে বুঝতে পেরেছি, এটি নেহাতই দুই প্রতিযোগীর ঝগড়া নয়।’’ তিনি জানান, বান্ধবগড় থেকে পশু চিকিৎসক এনে চিকিৎসা করানো হয়েছে বড়া দেওয়ের। সে হেঁটেচলে বেড়াচ্ছে। ক্ষতস্থানও দ্রুত শুকোচ্ছে। ওই বনাঞ্চলের এক কর্তা বলেন, ‘‘ছেলেকে মায়ের থেকে আলাদা করতেই যে বাবা হামলা করেছে সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত ।’’

আরও পড়ুন: হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির মৃত্যু রাজস্থানে, সরকারের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ

বন দফতরের খাতায় বড়া দেওয়ের পরিচয় টি-সিক্সটিন। তার বাবার পরিচয় টি-ফাইভ। মা কমলি টি-ইলেভেন। বন দফতরের রিপোর্টে তাই লেখা হয়েছে, ‘টি ফাইভ হামলা চালিয়ে আহত করেছে টি-সিক্সটিনকে। সেই সময় কাছেই ছিল টি-ইলেভেন। সে-ই টি-ফাইভকে তাড়িয়ে দিয়েছে।’ বন দফতরের কর্তারা হাতির পিঠ থেকে নজরদারি চালাচ্ছে ওই তিনটি বাঘের উপরে। এলাকার ভিডিয়োগ্রাফি করা হচ্ছে।

বন দফতর জানাচ্ছে, গত এপ্রিলে কমলি যে চারটি শাবকের জন্ম দিয়েছে, তাদের উপরেও নজর রাখা হচ্ছে। কারণ, টি-ফাইভ এখন ওই চারটির উপরে হামলা চালাতে পারে। ওই চারটি শাবকেরও বাবা কিন্তু টি-ফাইভ। সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের প্রাক্তন অধিকর্তা অতনু রাহা বলেন, ‘‘ছেলে বড় হলে বাবা বাঘ তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করতে শুরু করে। ছেলে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার আগেই সে তাকে মেরে ফেলতে চায়। আর মা যত দিন পরবর্তী সন্তান না চায়, তত দিন ছেলেকে নিজের কাছে রাখার চেষ্টা করে। এটা বাঘেদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wildlife Tiger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE