Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National news

দিল্লির বারে লিকুইড নাইট্রোজেন দেওয়া ককটেল খেয়ে ফেটে গেল পাকস্থলী!

জানা গিয়েছে, ককটেলের সঙ্গে তরল নাইট্রোজেন মেশানো ছিল। তা খেয়ে ফেলাতেই কয়েক মিনিটের মধ্যে বই খোলার মতো ফেটে যায় তাঁর পাকস্থলী!

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ১৭:১৭
Share: Save:

বারে ঢুকেই তাঁর চোখ গিয়েছিল টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখা ককটেলের দিকে। টকটকে লাল, কাচের গ্লাসে রাখা পানীয় থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। কিন্তু ককটেল খাওয়ার পরই পেটে অসহ্য যন্ত্রণা কাবু করে দেয় তাঁকে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সকেরা দেখেন, ফেটে গিয়েছে তাঁর পাকস্থলী! কিছু ক্ষণের মধ্যে বড়সড় অস্ত্রোপচার হলেও এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে দিল্লির একটি বারে। জানা গিয়েছে, ককটেলের সঙ্গে তরল নাইট্রোজেন মেশানো ছিল। তা খেয়ে ফেলাতেই কয়েক মিনিটের মধ্যে বই খোলার মতো ফেটে যায় তাঁর পাকস্থলী!

আহত ওই ব্যক্তি জানান, এই ধরনের ককটেল তিনি কখনও খাননি। টেবিলে সাজিয়ে রাখা ককটেলগুলো দেখে বেশ পছন্দ হয়েছিল তাঁর। অর্ডার দেওয়ার কিছু পরেই বারের এক কর্মী তাঁকে ককটেল তৈরি করে দেন। অত্যন্ত ঠান্ডা আর ভীষণ ধোঁয়া ওঠা সেই ককটেল খেতে একেবারেই দেরি করেননি তিনি। এই ধরনের ককটেল কিছু ক্ষণ রেখে খেতে হয়। সঠিক পদ্ধতি না জেনে তৎক্ষণাৎ খেয়ে ফেলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পেটে অস্বস্তি অনুভব করতে শুরু করেন। প্রথমে খুব একটা পাত্তা দেননি তিনি। ভেবেছিলেন পানীয় খুব একটা ভাল ছিল না বলেই এরকম হচ্ছে। নতুন করে অন্য একটা পানীয় খান। কিন্তু তাতে সেই অস্বস্তি আরও বেড়ে যায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। পেট ফুলে যায়। রীতিমতো কাতরাতে শুরু করেন তিনি। তখনও বোঝা যায়নি কেন এরকম হচ্ছে। বারের কর্মীরাই তাঁকে গুরুগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান।

স্ক্যানে ধরা পড়ে, পেটের ভিতরে গ্যাস ভর্তি হয়ে গিয়েছে। তাতেই পেট ফুলে উঠেছে। শরীরে ল্যাকটিক অ্যাসিডের পরিমাণও অসম্ভব বেড়ে গিয়েছিল তাঁর। তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচার শুরু করেন চিকিৎসকেরা। অ্যাবডোমেন ওপেন করতেই রীতিমতো তাজ্জব হয়ে যান তাঁরা। ভিতরের অন্য অঙ্গগুলো ঠিক থাকলেও পাকস্থলীটা ছিল ছিন্নবিচ্ছিন্ন। ঠিক যেন কোনও খোলা বই! যার দেওয়াল অসংখ্য ছোট বড় ছিদ্রে ভর্তি। এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে তা সেলাই করে জোড়া লাগানো ছিল অসম্ভব। পাকস্থলীর সিংহভাগ অংশই তাই অস্ত্রোপচারে বাদ দেন তাঁরা। বাকিটা ক্ষুদ্রান্তের সঙ্গে কোনও ক্রমে জোড়া লাগান।

কেন এরকম হল?

হাসপাতালের চিকিৎসক অমিত দীপ্ত গোস্বামী জানান, ওই ককটেলে তরল নাইট্রোজেন মেশানো ছিল। তা খেয়ে ফেলাতেই তাঁর এমন পরিণতি হয়েছে। তরল নাইট্রোজেন ঘরের তাপমাত্রায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই খুব দ্রুত গ্যাসে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। তারপর তা বাষ্পীভূত হয়ে যায়। তরল থেকে গ্যাসে রূপান্তরের সময় তা আয়তনে ৭০০ গুন বেড়ে যায়। অর্থাৎ মাত্র ১ লিটার তরল নাইট্রোজেন ৭০০ লিটার গ্যাসে পরিণত হয়। খোলা জায়গায় রাখলে তাতে কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু পাকস্থলীর ভিতরে জায়গা সীমিত হওয়ায় আয়তনে খুব একটা বাড়তে পারেনি নাইট্রোজেন। প্রচন্ড চাপে তাই তা ফাটিয়ে দেয় পাকস্থলীর দেওয়াল। মাত্র এক চা চামচ তরল নাইট্রোজেন খেয়ে নিলেও তা পাকস্থলী ফাটিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট বলে জানান রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রির গবেষক জন এমসলে।

আরও পড়ুন: এই শিশুটি মানব সন্তান নয়…তা হলে?

কিন্তু বারের পানীয়তে তরল নাইট্রোজেন এল কী ভাবে?

চিকিৎসায় এবং কোনও কিছু সংরক্ষণে কাজে লাগানো এই তরল নাইট্রোজেন ককটেল, আইসক্রিম তৈরিতেও ব্যবহার করে থাকে অনেক রেস্তোরাঁ। বার্কশায়ারের রেস্তোরাঁ দ্য ফ্যাট ডাকের শেফ হেস্টন ব্লুমেনথাল প্রথম ককটেলে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করেন। খুব দ্রুত বাষ্পীভূত হওয়ায় তরল নাইট্রোজেন ককটেলের উপরে প্রচুর ধোঁয়া সৃষ্টি করে। কয়েক দিনের মধ্যেই এই স্মোকি প্রভাব ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। একে একে দেশ-বিদেশের সমস্ত বড় রেস্তোরাঁ তরল নাইট্রোজেনের ককটেল বানাতে শুরু করে।

নাইট্রোজেন ক্ষতিকারক নয়। অর্থাৎ নিশ্বাসের সঙ্গে দেহের ভিতরে প্রবেশ করলে কোনও ক্ষতি করে না। তাই রেস্তোরাঁগুলির তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার নিয়ে তেমন কোনও বাধানিষেধও নেই। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা না খেয়ে যদি কিছু পরে ওই ককটেল খাওয়া হয়, তা হলে তাতে উপস্থিত সমস্ত নাইট্রোজেন বাষ্পীভূত হয়ে যায়। কোনও ক্ষতি হয় না। এই নিয়মটাই জানতেন না আক্রান্ত ব্যক্তি। হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা খেয়ে ফেলেই এই বিপত্তি।

তবে এই ঘটনাই প্রথম নয়, ঠিক এরকমই একটা ঘটনা ঘটেছিল ২০১২ সালে ব্রিটেনের ল্যাঙ্কাস্টারের একটি বারে। জন্মদিনের পার্টিতে তরল নাইট্রোজেন মেশানো ককটেল খেয়ে ফেলায় পাকস্থলী ফেটে গিয়েছিল ১৮ বছরের এক কিশোরীর। তবে সে ক্ষেত্রেও চিকিত্সকদের তত্পরতায় প্রাণ বাঁচে তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE