Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অসহায় কিশোরদের নিয়েই সংসার পেঙ্গু দাদুর

তিন ছেলে, এক মেয়ে তাঁর। মায়ের সঙ্গে তারা থাকে মণিপুরের বাড়িতে। দিনপনেরো পরপর এক বার বাড়িতে যান পেঙ্গুবাবু।

অবলম্বন: শিলচরে ‘দাদু’ পেঙ্গুর আশ্রয়ে বিষ্ণু, লক্ষ্মী। —নিজস্ব চিত্র।

অবলম্বন: শিলচরে ‘দাদু’ পেঙ্গুর আশ্রয়ে বিষ্ণু, লক্ষ্মী। —নিজস্ব চিত্র।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৭
Share: Save:

না মেলে ভাষা, না ধর্ম। তবু তিন কিশোরকে রাস্তা থেকে তুলে এনে নিজের ঘরে রাখেন পেঙ্গু আহমেদ বড়ভুঁইয়া। তিনি নিজেও কিন্তু থাকেন অন্যের জায়গায়। ‘কেয়ারটেকার’ পেঙ্গুবাবুকে সেই ঘর দেয় শিলচর ফুটবল অ্যাকাডেমি।

তিন ছেলে, এক মেয়ে তাঁর। মায়ের সঙ্গে তারা থাকে মণিপুরের বাড়িতে। দিনপনেরো পরপর এক বার বাড়িতে যান পেঙ্গুবাবু। বিষ্ণু-লক্ষ্মী-প্রদীপকে নিয়ে তাঁর অন্য সংসার, অ্যাকাডেমির ঘরে! বিষ্ণু ভূমিজের পায়ের পাতা জন্ম থেকেই বাঁকা। মা মারা যাওয়ার পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। শিলচর স্টেশনই মাথা গোঁজার জায়গা ছিল বিষ্ণুর। কিন্তু রাতে রেল পুলিশ তাড়িয়ে দিত তাদের। বছর সাতেক আগে পুলিশের তাড়া খেয়ে বিষ্ণু আশ্রয় নি।য়েছিল ট্রাঙ্ক রোডে একটি গাছের তলায়। এক দিন অঝোরে শুরু হয় বৃষ্টি। দু’হাতে গাছ জড়িয়েও মাথা বাঁচাতে পারছিল না। তা নজরে পড়ে পেঙ্গুবাবুর। বিষ্ণুকে নিয়ে চলে আসেন অ্যাকাডেমির ঘরে।

১২ দিন বয়সে আগুনে ঝলসে যায় লক্ষ্মীপ্রসাদ অধিকারীর পায়ের অনেকটা। হাটুর মাংস দলা-পাকানো। হাতের তালুতে ভর দিয়ে চলতে-ফিরতে হতো। রাত কাটছিল রাস্তার পাশে, দোকানের বারান্দায়। এক দিন পেঙ্গুবাবু অ্যাকাডেমি কর্তাদের কাছে বায়না ধরেন, বিষ্ণুর মতো লক্ষ্মীকেও রাখতে চান তাঁর কাছে। ছেলেটির বাবা নেই, মা দ্বিতীয় বিয়ে করায় রাস্তায় দিন কাটে। আপত্তি করেননি কেউ।

প্রদীপ মুন্ডা অবশ্য নিজেই এসেছিল অ্যাকাডেমিতে। সে-ও অনাথ। পেঙ্গুবাবুর কথা শুনেছিল বিষ্ণু-লক্ষ্মীর মুখে। আর্জি জানায়, তাকেও জায়গা দিতে হবে। ফের অ্যাকাডেমি সচিবের সঙ্গে কথা বলেন পেঙ্গুবাবু। তিন জনেরই বয়স তখন ১১-১২। এখন অবশ্য প্রদীপকে অন্য জায়গায় কাজ জুটিয়ে দিয়েছেন পেঙ্গুবাবু। সেখানেই থাকে সে। বিষ্ণু-লক্ষ্মী তাঁর সঙ্গে। তাদের সামান্য সর্দি-জ্বর হলে অস্থির হয়ে ওঠেন তিনি। ওষুধ এনে দেন। কাঁথা ধুয়ে রোদে ছড়ান। স্বামীর দরদী মনের কথা বোঝেন পেঙ্গুবাবুর স্ত্রী। তাই বাড়ি গেলে ফেরার সময় নাতিদের জন্য হাতে তৈরি নানা খাবার পাঠান ‘দিদিমা’। কিন্তু পেঙ্গুবাবুরা যে মণিপুরি মুসলমান— কথা শেষ করার আগেই বিষ্ণু-লক্ষ্মী প্রতিবাদ করে বলে, ‘‘উনি আমাদের দাদু। এটাই তাঁর পরিচয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE