• সরকার তো বলছে, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত গোপনীয় রাখার প্রয়োজন ছিল, তাই আগে থেকে যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া যায়নি।
গোপনীয়তা রক্ষা করা নিশ্চয়ই জরুরি, কিন্তু প্রতিটি রাজ্যের প্রতিটি এলাকায় যথেষ্ট এটিএম থাকবে না, সেই মেশিনগুলো নতুন নোট দেওয়ার জন্য তৈরি থাকবে না, যথেষ্ট টাকার জোগান থাকবে না সেখানে— এটা কি প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়?
• কিন্তু যে শোরগোল হচ্ছে, সেটা কি প্রধানত রাজনৈতিক নয়?
অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তকে এ দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে বিশ্লেষণ করা যায় না। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওয়ের কাছে এ বিষয়ে আমি খুব মূল্যবান শিক্ষা পেয়েছি। একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ১৯৯১ সালে যখন এ দেশে আর্থিক সংস্কার শুরু করি, তখন আমি বহু ক্ষেত্রে আরও দ্রুত ভর্তুকি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে চাই। প্রধানমন্ত্রী রাও আমাকে বারবার বোঝাতেন, এই দেশটার নাম ভারতবর্ষ। দিল্লিতে বসে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামে যার প্রবল নেতিবাচক প্রভাব পড়ল, বিশেষ করে প্রান্তিক গরিব মানুষের উপর— এমনটা হলে চলে না।
২০১৩ সালে আমরা নতুন ৫০০ টাকার নোট এনেছিলাম, কিন্তু তখন গ্রামে গ্রামে ত্রাহি ত্রাহি রব ওঠেনি। কারণ বদলটা হয়েছিল সময় দিয়ে। কালো টাকার ডিসক্লোজার প্রকল্প করে আমিও কালোবাজারি অর্থনীতির উপর আঘাত হেনেছিলাম, তাতে সুফলও পেয়েছিলাম, কিন্তু কখনওই কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য আর্থিক সিদ্ধান্ত নিইনি। আমি মনে করি, এখন সরকারের কর্তব্য এ ব্যাপারে বিরোধী দলকে সঙ্গে নেওয়া, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলা।
• নোট বাতিলের জন্য বেছে নেওয়া সময়টা কি যথাযথ?
বিশ্ব অর্থনীতি গভীর সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে চলেছে। ভারতের অর্থনীতির অবস্থাও ভাল নয়। জিএসটি-র সিদ্ধান্তেরও কিছু স্বল্পমেয়াদি প্রভাব ভারতের অর্থনীতিতে, এবং মধ্যবিত্ত সমাজের উপর, পড়বে। অর্থনীতির এই কঠিন পরিস্থিতিতে ‘ডিমনিটাইজেশন’ পণ্য ও পরিষেবার বাজারে ইতিমধ্যেই একটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। রিয়েল এস্টেট, ইস্পাত, কয়লা, বিদ্যুৎ ইত্যাদির মতো অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রেও এর কী প্রভাব পড়বে, সেটা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তার কারণ আছে।
সাক্ষাৎকার: জয়ন্ত ঘোষাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy