সফ্টওয়্যার প্যাচ-এর সাহায্যেই হাতের মুঠোয় আসবে আধার কার্ড। —ফাইল চিত্র।
প্রয়োজন মাত্র আড়াই হাজার টাকা। সঙ্গে ইন্টারনেট কানেকশন-সহ কম্পিউটার। একটি হাই-রেজিলিউশন ছবি। এবং সফটওয়্যার প্যাচ। তা হলেই হাতের মুঠোয় আধার কার্ডের যাবতীয় তথ্য। তৈরি করে নেওয়া যাবে নতুন আধার নম্বরও। দুনিয়ার যে কোনও প্রান্তে বসেই এ কাজ করতে পারবেন । আধারের নিরাপত্তার দেওয়াল ভেদ করা এতটাই সহজ!
আধার কার্ডের জন্য জরুরি তথ্য নথিভুক্ত করার যে প্রক্রিয়া রয়েছে তা এড়িয়েই এই কাজ করা যাবে। কারণ, আধার নিয়ে কেন্দ্রের নিরাপত্তার আশ্বাসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই কাজ করবে এই সফটওয়্যার প্যাচ। ফলে ‘আঁধারে’ ঢাকা পড়েছে ১০০ কোটিরও বেশি ভারতীয়র ব্যক্তিগত তথ্য। পাশাপাশি, বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে বসে নতুন আধার নম্বর তৈরি করাটা সহজ হওয়ায় এর তথ্যভাণ্ডারে নয়া জটিলতা তৈরি হবে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।
আধার নিয়ে তিন মাসের একটি অন্তর্তদন্তের পর এমনটাই দাবি করেছে একটি ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ‘হাফিংটন পোস্ট’। তাদের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, মোবাইলে হোয়াট্সঅ্যাপ ইনস্টল করার মতো সোজা। অতি সহজেই নিজের কম্পিউটারে ওই সফটওয়্যার ইনস্টল করা যাবে।
আরও পড়ুন
চিনের কোলে বসল নেপাল! সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে বিশেষজ্ঞরা
বিশেষজ্ঞরা ওই সফটওয়্যার প্যাচ পরীক্ষার পর জানিয়েছেন, চোখের মণি বা হাতের ছাপের মতো কোনও বায়োমেট্রিক প্রমাণ ছাড়াই ওই প্যাচের সাহায্যে আধারের ওয়েবসাইটে ঢোকা যাবে। কী ভাবে? ওই সফটওয়্যার প্যাচ ব্যবহারকারীর হাতে একটি হাই-রেজিলিউশন ফোটোগ্রাফ থাকলেই হবে। তা দিয়েও আধারের নিরাপত্তা বেষ্টনীকে ধোঁকা দেওয়া যাবে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। কারণ, ওই প্যাচটি নিরাপত্তাজনিত দেওয়ালটাকেই অক্ষম করে দেয়। সফটওয়্যার ব্যবহারকারী অতি সহজেই আধারের ওয়েবসাইটে ঢুকে ১২ সংখ্যার আধার নম্বর তৈরি করতে পারবেন। ফলে আধারের নিরাপত্তা নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক, ইউআইডিএআই তথা নরেন্দ্র মোদী সরকারের আশ্বাস যে যথেষ্ট নয় তা ফের বোঝা হচ্ছে।
ওই ইংরেজি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট জানিয়েছে, আধারের তথ্যভাণ্ডার (ডেটাবেস) থেকে তথ্য হাতানোই শুধু নয়, ওই প্যাচ দিয়ে নতুন আধার নম্বরও তৈরি করা যাবে— এটাই সবচেয়ে বেশি আশঙ্কার বিষয়। ফলে আধার নম্বরের মাধ্যমে কালো টাকার কারবারিদের চিহ্নিত করা বা দুর্নীতিতে রাশ টানা যাবে— আধার কর্তৃপক্ষ (ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা ইউআইডিএআই) ও কেন্দ্রের এই দাবিই এখন বড়সড় প্রশ্নের মুখে।
আরও পড়ুন
সব অভিযোগই ভুয়ো, অ্যান্টিগা থেকে ভিডিয়ো বার্তা মেহুলের
ইউটিউবে সহজেই খোঁজ মিলছে কয়েকটি সফটওয়্যার প্যাচ-এর।
ওই রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, ইউটিউবে খুব সহজেই মিলছে এ ধরনের সফটওয়্যার প্যাচ। ইউটিউবের সার্চ অপশনে ‘ecmp bypass aadhaar’ লিখলেই বেরিয়ে আসছে এ ধরনের একাধিক সফটওয়্যারের নাম। যার সাহায্যে আধার ওয়েবসাইটে নিরাপত্তার দেওয়াল এড়ানো যায়। কম্পিউটারে এক বার এ ধরনের সফটওয়্যার প্যাচ ইনস্টল করলেই একাধারে অসংখ্য মেশিনে লগ-ইন করতে পারবেন ব্যবহারকারী। ফলে নথিভুক্তির নামমাত্র খরচেই আধাক কার্ড তৈরি করে মোটা মুনাফাও কামাতে পারবেন।
রিপোর্টের এই দাবিগুলির সঙ্গে সহমত একাধিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। তাঁদের মতে, “আধার প্রোগ্রামটি যে প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার মধ্যে অনেক নিরাপত্তাজনিত ফাঁকফোকর রয়েছে।” এর অর্থ, “ওই ‘ফাঁকফোকর’ ভরাট করতে আধারের মূল কাঠামোগত প্রযুক্তিতে বদল ঘটাতে হবে।” নিরাপত্তা নিয়ে সরব বিশ্বের একটি অগ্রণী সংস্থা ‘অ্যাকসেস নাও’-এর প্রধান প্রযুক্তিবিদ গুস্তাফ বিয়র্কস্টেন জানিয়েছেন, সমস্যার সমাধান করতে হলে গোটা ব্যবস্থাটার আমূল পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy