আধারকে সংবিধানিক বৈধতা দিলেও মোবাইল-ব্যাঙ্কে বাধ্যতামূলক নয় বলে জানাল সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আধার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেল কেন্দ্র। সাংবিধানিক বৈধতা দিলেও ব্যাঙ্ক-মোবাইল ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আধার বাধ্যতামূলক করা যাবে না বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। প্যান কার্ডে আধার লিংক করা বাধ্যতামূলক হলেও সরকারি পরিষেবা এবং সুযোগ সুবিধা পেতে অত্যাবশ্যক নয় আধার। বুধবার এ কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত। একই সঙ্গে আধারের তথ্য সুরক্ষিত করতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। এই রায়ের ফলে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেন বলেই মনে করছে আইনজ্ঞ মহল।
অন্যদিকে, আধার নিয়ে বিদেশ থেকেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘‘মোবাইল ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার যোগ করার নির্দেশের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক মহুয়া মৈত্র মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এই রায় সাধারণ মানুষের জয়।’’
তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে আধার ‘গোপনীয়তার অধিকার’ (রাইট টু প্রাইভেসি) লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে মোট ২৭টি মামলা দায়ের হয় শীর্ষ আদালতে। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃ্ত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে শুনানি হয় মামলার। বুধবার সেই মামলার রায়ে বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ‘‘ একটি শিশুকে কেউ স্নানের জলের গামলা থেকে তুলে বাইরে ছুড়ে ফেলে দিতে পারেন না।’’ আইনজীবীরা যার ব্যাখ্যা দিয়েছেন, বেসরকারি সংস্থার হাতে আধারের তথ্য দেওয়া সুরক্ষিত নয়। তবে আধার প্রান্তিক ও গরিব-মধ্যবিত্তকে আধার আলাদা পরিচিতি দিয়েছে বলেও মনে করেন সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতি।
এ দিনের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, বেসরকারি সংস্থা কোনও পরিষেবার জন্যই আধার চাইতে পারবে না। রায়ের পর সাংবাদিক বৈঠকে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ জানান, বায়োমেট্রিক তথ্য মিলিয়ে পরিচয় যাচাই করাও বাধ্যতামূলক নয়। কোথাও বায়োমেট্রিকের তথ্য না মিললে অন্য কোনও ভাবে পরিচয় প্রমাণ করা যাবে।
আরও পড়ুন: অগ্নিগর্ভ ইসলামপুর, চলছে দফায় দফায় সংঘর্ষ
ইতিমধ্যেই দেশের একশো কোটিরও বেশি মানুষ আধারে নথিভূক্ত হয়েছেন। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, মোবাইলের সিম কার্ড নেওয়া, পাসপোর্ট, প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো ক্ষেত্রে আধার বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন পরিষেবা পাওয়ার জন্যও আধার কার্ড অবশ্য প্রয়োজনীয় বলে জানায় কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কার্যত সেই নির্দেশ আর কার্যকর থাকছে না বলেই জানাচ্ছেন আইনজীবীরা।
বহু ক্ষেত্রে প্রমাণ মিলেছে, বেসরকারি সংস্থার কাছে দেওয়া আধারের তথ্য সুরক্ষিত নয়। অনেক ক্ষেত্রেই আধারের তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়েছে। এমনকি, টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ট্রাই)-এর প্রধান অনলাইনে আধারের তথ্য দিয়ে চ্যালেঞ্জ করে কার্যত হেরে ভূত হয়েছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত প্রায় সব তথ্য প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল।
আরও পডু়ন: টেবিলে মদের বোতল, মত্ত অধ্যক্ষ, ছাত্রদের বললেন, তোমরাও খাও না!
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বেড়েছিল। বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া তথ্য আদৌ সুরক্ষিত নয় বলেই অধিকাংশ আম নাগরিক মনে করছিলেন। এমনকি, রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতেও নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে শীর্ষ আদালতের রায় সেই আশঙ্কায় কিছুটা স্বস্তি দেবে বলেই মনে করছেন আম জনতার বড় অংশ।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy