Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National News

বিয়ে ‘অবৈধ’ হলেও ১৮-উত্তীর্ণের লিভ-ইনে সায় কোর্টের

প্রাপ্তবয়স্ক যে কোনও যুগলের ‘লিভ টুগেদার’ করার অধিকার রয়েছে। আজ একটি মামলার রায় প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৮ ০৩:০৮
Share: Save:

প্রাপ্তবয়স্ক যে কোনও যুগলের ‘লিভ টুগেদার’ করার অধিকার রয়েছে। আজ একটি মামলার রায় প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট।

ছেলের বয়স একুশের কম। তাই বিয়ে ‘অবৈধ’, রায় দিয়েছিল কেরালা হাইকোর্ট। রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন ‘পাত্র’ নন্দকুমার। সেই মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি এ কে সিক্রি এবং বিচারপতি অশোক ভূষণের বেঞ্চ বলেছে, বিয়ে অবৈধ হলেও কোনও প্রাপ্তবয়স্ক যুগল একসঙ্গে থাকতেই পারেন। সেই অধিকার তাঁদের আছে। আদালতের মতে, এই ধরনের লিভ-ইন সম্পর্ককে গার্হস্থ্য হিংসা রোধ আইন (২০০৫)-এর আওতায় স্বীকৃতিও দেওয়া হয়েছে।

বাল্য বিবাহ (রোধ) আইনে বলা হয়েছে, বিয়ের সময়ে পাত্রীর বয়স অন্তত ১৮ এবং পাত্রের বয়স অন্তত ২১ বছর হতে হবে। তুষারের সঙ্গে যখন নন্দকুমারের বিয়ে হয়, তখন দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক হলেও ছেলেটির বয়স ২১ হয়নি। আগামী ৩০ মে নন্দকুমারের ২১ বছর পূর্ণ হবে। নন্দকুমারের বিরুদ্ধে মামলা করেন তুষারের বাবা। কেরালা হাইকোর্ট বিয়েটিকে অবৈধ ঘোষণা করে নির্দেশ দেয়, নন্দকুমার নয়, তুষারকে থাকতে হবে তাঁর বাবার সঙ্গেই। কারণ বাবাই তাঁর অভিভাবক। তখন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে শীর্ষ আদালতে যান নন্দকুমার।

আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা জানান, প্রথমত, নন্দকুমারের বয়স একুশের কম বলেই বিয়েটিকে ‘অবৈধ’ তকমা দেওয়া যাবে না। কারণ হিন্দু বিবাহ আইনে (এ ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী দু’জনেই হিন্দু) এই ধরনের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। দ্বিতীয়ত, ছেলে এবং মেয়ে, দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক। তাই তাঁরা বিয়ের জন্য বৈধ বয়সে না পৌঁছতে পারেন, কিন্তু বিয়ে না-করেও একসঙ্গে থাকার জন্য বৈধ বয়স তাঁদের হয়ে গিয়েছে। বিচারপতিদের কথায়, ‘‘কার সঙ্গে থাকবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে তুষারের। আমরা সেই অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে চাই।’’ তুষারকে তাঁর বাবার কাছেই থাকতে হবে, কেরালা হাইকোর্টের এই রায় খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

বিচারপতিরা আজ কেরলের আর একটি বিবাহ-বিতর্কের প্রসঙ্গও তুলে আনেন। ধর্মান্তরিত হাদিয়া এবং মুসলিম যুবক শাফিনের বিয়ে প্রসঙ্গে মাস দুয়েক আগেই একই ধরনের রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তখনও বলা হয়েছিল, কোনও প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে কার সঙ্গে থাকবেন, তা বেছে নেওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার মেয়েটির আছে। পরিবার, এমনকি আদালতও সেই সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

কী হয়েছিল হাদিয়ার ক্ষেত্রে?

তাঁর মেয়েকে মুসলিম যুবক শাফিন জাহান জোর করে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করেছেন, এই অভিযোগ করে মামলা করেছিলেন অখিলা অশোকন ওরফে হাদিয়ার বাবা। কেরালা হাইকোর্ট সেই বিয়েকে অবৈধ ঘোষণা করে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যান শাফিন। নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের বিচারপতিদের সামনে হাদিয়া স্পষ্ট জানান, তাঁকে কেউ জোর করেনি, তিনি নিজের ইচ্ছেতেই ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেছেন। তাঁকে স্বামীর সঙ্গে থাকার অনুমতি দেওয়া হোক, আদালতে এই আর্জিও জানিয়েছিলেন হাদিয়া। বিচারপতিরা রায় দেন, হাদিয়া এবং শাফিনের বিয়ে বৈধ। বিচারপতিরা আরও মন্তব্য করেছিলেন, দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক বিয়ে করলে সেই বিয়েকে এ ভাবে অবৈধ ঘোষণা করতে পারে না দেশের কোনও আদালত।

আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মুখে সেই রায়েরই প্রতিধ্বনি শোনা গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE