ফাইল চিত্র।
মুখ বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত ১১২ বছরের প্রবীণ সন্ন্যাসী শিবকুমার স্বামীর অসুস্থতাকেই আঁকড়ে ধরলেন কর্নাটক বিজেপির সেনাপতি ইয়েদুরাপ্পা। এইচ ডি কুমারস্বামীর জোট সরকারকে ফেলে দিতে বিজেপির ‘অভ্যুত্থান’ ব্যর্থ হচ্ছে, সেই ইঙ্গিত পাওয়া মাত্র বুধবার রাতেই সটান দিল্লি থেকে কর্নাটকের সিদ্দাগঙ্গায় প্রবীণ সন্ন্যাসীর মঠে হাজির হয়েছেন তিনি। সন্ন্যাসীর শরীরের অবস্থা ভাল নয়, তাই আগামী দু’দিন এই আশ্রমেই থাকবেন বলে সমর্থকদের জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। এর পর আর তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
ভেঙে দেওয়া হবে কংগ্রেস এবং জনতা দল (সেকুলার)-এর জোট সরকারকে। সেই অভ্যুত্থানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন কমল’। সরকার গড়বে বিজেপি, এই আশা দিয়ে দলের ১০৪ জন বিধায়ককে নিয়ে সোজা গুরুগ্রামের রিসর্টে পাড়ি দিয়েছিলেন ইয়েদুরাপ্পা। বুধবার সকাল পর্যন্ত তাঁদের বলা হচ্ছিল, সব কিছুই চলছে পরিকল্পনা মাফিক। কর্নাটকে সরকার গঠন শুধু সময়ের অপেক্ষা। দিল্লির ঠান্ডায় বিধায়কেরা কাবু হয়ে পড়লেও বলা হচ্ছিল, ভাল খবর আসা শুধুই সময়ের অপেক্ষা। বিকেলের মধ্যেই অবশ্য স্পষ্ট হয়ে যায়, মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে অপারেশন কমলা। কংগ্রেস বা জেডিএসে ভাঙন ধরাতে ব্যর্থ হয়েছেন ইয়েদুরাপ্পা। এর পরই সোজা নয়াদিল্লি থেকে কর্নাটকের সিদ্দাগঙ্গায় পাড়ি দেন তিনি। এখানকার প্রবীণ সন্ন্যাসী শিবকুমার স্বামীর শারীরিক অসুস্থতার খোঁজখবর নিতেতিনি এখন ক’দিন মঠে থাকবেন আর কর্নাটকে সরকার ফেলে দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা বিজেপির ছিল না—ইয়েদুরাপ্পা এই কথা জানিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বোঝা যায় আপাতত অপারেশন কমলের অপমৃত্যু হয়েছে।
এ দিকে ক্ষোভে ফুঁসছেন বিজেপি বিধায়কেরা। এখন চলছে একে অন্যের ওপর দোষারোপের পালা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি বিধায়ক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন,‘‘এক সপ্তাহের মধ্যে সরকার গড়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল আমাদের। কংগ্রেস এবং জেডিএসের যাঁরা দলবদল করবেন, সেই তালিকাও দেওয়া হয়েছিল আমাদের। এর পরই একজোট হতে আমরা গিয়েছিলাম গুরুগ্রামের রিসর্টে। কিন্তু আমাদের নেতারা আবার ব্যর্থ হলেন।’’
আরও পড়ুন: আরোগ্য কামনা করে টুইট রাহুলের, কংগ্রেসকে তুলোধোনা জেটলির
বেঙ্গালুরুর রাজনৈতিক মহলের খবর, বিজেপি ‘অপারেশন কমল’ শুরু করার আগেই বিজেপি শিবিরের মধ্যেই গুপ্তচর তৈরি করে ফেলতে সফল হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী। সেই জন্য সরকার ফেলে দিতে বিজেপি কী কৌশল নিচ্ছে, সেই খবর আগাম পৌঁছে যাচ্ছিল তাঁর কাছে। তাই বিজেপি কিছু করার আগেই তৈরি হয়ে যাচ্ছিল তাঁর পাল্টা রণনীতি। পাশাপাশি জেডিএস-কংগ্রেস জোটের যে বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের ‘অপহরণ’ করে মুম্বইয়ের হোটেলে লুকিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে, তাঁদের সঙ্গেও যোগাযোগ তৈরি করতে ফেলতে পেরেছিলেন কুমারস্বামী। বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাঁদের ক্ষোভ সামাল দিতে খুব একটা দেরি হয়নি আর। এই দু’টি চালেই ব্যর্থ হল ইয়েদুরাপ্পার অভ্যুত্থানের চেষ্টা, এমনটাই খবর এখন বেঙ্গালুরুর বাতাসে।
আরও পড়ুন: দেশের ৯৩ শতাংশ রাজনৈতিক চাঁদাই গিয়েছে বিজেপির তহবিলে, প্রকাশ নয়া রিপোর্টে
ইয়েদুরাপ্পা মঠে আশ্রয় নিয়েছেন, দলীয় বিধায়কেরা ক্ষুব্ধ, এই হল বিজেপি শিবিরের চেহারা। অন্য দিকে এখন ঘর গোছাতে ব্যস্ত কংগ্রেস এবং জেডিএস। শুক্রবার হুইপ জারি করে দলীয় ৮০ জন বিধায়কের সঙ্গে জরুরি বৈঠকের ডাক দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা এবং কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দিরামাইয়া। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং জেডিএস নেতা এইচ ডি দেবগৌড়াও দলের ৩৭ জন বিধায়কের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গিয়েছে। যদিও বিজেপি শিবিরের দিকে কটাক্ষ আর বক্রোক্তি করতে ছাড়ছেন না কেউই। কর্নাটকের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি টুইট করেছেন, ‘‘গুরুগ্রামের বিলাসবহুল রিসর্টে ছুটি কাটিয়ে একে একে ঘরে ফিরছেন বিজেপি বিধায়কেরা। আশা করা যায়, এবার ওঁরা কাজকর্মটা মন দিয়ে করবেন।’’
দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy