প্রতীকী ছবি।
কাল ছিল ডাল খালি, আজ ফুলে যায় ভ’রে, বল দেখি তুই মালি, হয় সে কেমন করে! প্রকৃতির কাছে কবির এ বিস্ময় ছিলই। কিন্তু প্রকৃতির খেয়াল বিস্ময়ের গণ্ডি পেরিয়ে ফের আতঙ্কে ফেলে দিয়েছে কেরলকে!
বন্যার জল নেমেছে মাসখানেকও হয়নি। জেলায় জেলায় যে সব নদী কূল ছাপিয়ে আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা ভাসিয়ে নিয়েছিল, সেখানেই এখন হাঁটুজল! কোনও নদীর জল কোমরসমান, যা হেঁটে পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব। আবার কোথাও এখানে ওখানে জেগে উঠেছে চড়া। বালি-কাদার চর মাথা তুলেছে ইতিউতি।
বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলে কেরলে যখন পুনর্গঠনের কর্মযজ্ঞ চলছে, সেই সময়েই নদীর এমন চেহারা বদলে প্রমাদ গুনছেন সরকারি আধিকারিক ও রাজনীতিকেরা। তাঁদের আশঙ্কা, নদীর জলস্তর নেমে যাওয়ায় এ বার চাষে টান পড়বে। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে কয়েক মাসের মধ্যেই খরার মুখে পড়বে এই দক্ষিণী রাজ্য।
প্রবল বর্ষণে কেরলের যে সব অঞ্চলের অবস্থা ভয়াবহ হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল চেঙ্গান্নুর। যেখানকার বিধায়ক সাজি চেরিয়ান দুর্গত মানুষের উদ্ধারের জন্য কপ্টার চেয়ে টিভি সাংবাদিকের কাছে কেঁদে ফেলেছিলেন। চেরিয়ানই এখন বলছেন, ‘‘এক দিকে পাম্বা, আর এক দিকে আচানকোভিল নদী ফুলে উঠেছিল। দু’টো নদীতেই এখন জলের স্তর এমন নেমে গিয়েছে, যেখান দিয়ে হেঁটে চলে যাওয়া যাবে। মানিমালায়ার নদীতেও জায়গায় জায়গায় চর জেগে উঠেছে। আমাদের রাজ্যে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নদীর জলস্তর নেমে যায়। কিন্তু বন্যার জল নামার সঙ্গে সঙ্গে এমন শুকনো নদী— অভাবনীয়!’’ পালাক্কাডের ভরতাপ্পুঝা বা মল্লপ্পুরমের নদীগুলোরও একই হাল। পারাভুরের বিধায়ক ভি ডি সতীশন জানাচ্ছেন, পেরিয়ার-সহ একাধিক বাঁধেরও জলের স্তর নেমে গিয়েছে। অথচ বাঁধের জল বিপদসীমার উপরে উঠে বিপর্যয় ডেকে এনেছিল মাত্রই কয়েক সপ্তাহ আগে!
কেন এত দ্রুত বদলে গেল পরিস্থিতি? রাজ্যের সেচ দফতরের আধিকারিক এস শ্রীকুমারের মতে, ‘‘বন্যার সময়ে অসংখ্য জায়গায় ধস নামে। ভূমিক্ষয়ের জেরে কাদামাটি এবং নানা আবর্জনা গিয়ে জমা হয়েছে নদীবক্ষে। নদীবক্ষের মাটির জৈবিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন হয়েছে। জলস্তর নেমে যাচ্ছে।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘পরিস্থিতি বিপজ্জনক। এ ভাবে চললে কেরলে অচিরেই খরা দেখা দেবে।’’ বিশদে পরিস্থিতির বিশ্লেষণের জন্য বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাচ্ছে কেরল সরকার। কারণ জানার জন্য করা হবে মাটির যাবতীয় পরীক্ষাও।
রাজ্যের সেচমন্ত্রী ম্যাথু টমাসের বক্তব্য, ‘‘কেরল পুনর্গঠনের কাজে সব ধরনের তৎপরতা নেওয়া হয়েছে। তারই মধ্যে নদীর জলস্তর নেমে যাওয়ায় ভবিষ্যতের বিপদসঙ্কেত আছে। আমরা নজর রাখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy