Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

দুর্দান্ত সাফল্য আফজল পুত্রের, ‘জঙ্গির ছেলে’ তকমা ঘুচবে কি?

পরীক্ষার ফল বেরোলে সাফল্যের আনন্দ তো থাকবেই। তবে এ বাড়ির গল্পটা আলাদা। কাশ্মীরের বারামুলা জেলার সোপোরের এই বাড়ির কর্তার নাম আফজল গুরু।

৮৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে গালিব আফজল গুরু।

৮৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে গালিব আফজল গুরু।

সাবির ইবন ইউসুফ
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫১
Share: Save:

বাড়িটার সামনে সকাল থেকেই লোকের মেলা। উপহার হাতে হাসি মুখে লোক ঢুকছে, বেরিয়ে আসছে। যেন ইদ লেগেছে। আসলে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় দারুণ ফল করেছে এ বা়ড়ির ছেলে। বৃহস্পতিবার সকালেই সেই ফল প্রকাশ করেছে জম্মু-কাশ্মীর বোর্ড। ৮৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে এ বাড়ির বছর সতেরোর ছেলে গালিব আফজল গুরু। ৫০০-র মধ্যে ৪৪১।

পরীক্ষার ফল বেরোলে সাফল্যের আনন্দ তো থাকবেই। তবে এ বাড়ির গল্পটা আলাদা। কাশ্মীরের বারামুলা জেলার সোপোরের এই বাড়ির কর্তার নাম আফজল গুরু। ২০০১ সালে সংসদে হামলার মূল ষড়যন্ত্রী। ২০১৩ সালে যার ফাঁসির খবরে উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ। তার পর থেকেই অজানা আতঙ্কে সিঁটকে থাকে এ বাড়ির লোকেরা। ২০১৬ সালে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফল করে সকলের নজর কাড়ে গালিব। সে বার ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে রাজ্যে ১৯তম স্থান অধিকার করেছিল সে।

গালিবের লড়াইটা যে সহজ ছিল না তা বলা বাহুল্য। তবু ‘জঙ্গির ছেলে’ পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকাটা তার পক্ষে কতটা কঠিন ছিল?

সরল হাসি হেসেই গালিব বলল, ‘‘বাবা বেঁচে থাকলে আমার সাফল্যে খুশি হতেন। বাবা নিজেও সব সময় পড়াশোনার মধ্যে ডুবে থাকতেন। আমাকেও সেটাই বলতেন। এমনকী যখন জেলে, তখনও বাবার একটাই নির্দেশ ছিল— মন দিয়ে পড়াশোনা করো, মায়ের খেয়াল রেখো আর কোরান পড়ো। বাবা সব সময় বলতেন, সব কিছুই ওপরওয়ালার হাতে। ভাগ্যে যা আছে তা হবেই। আশা করি আজ আমার সাফল্যে পরিবার গর্বিত।’’

আরও পড়ুন: কাতরাচ্ছেন মুমূর্ষু, নড়ল না কেউ

ছেলের সাফল্যে আজ উজ্জ্বল মা তবসসুমের মুখ। বেসরকারি একটি হাসপাতালে নার্সের চাকরি করেন তিনি। স্বামীর স্মৃতি আঁকড়েই ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। গরবিনী মা জানালেন, ‘‘ এখনও অনেক কিছু করা বাকি। এ তো সবে শুরু।’’ ছেলের কথা বলতে গিয়ে বললেন, ‘‘গালিবের বাবা আজ বেঁচে থাকলে ওঁর খুশিটা শুধু দেখতেন। তবে গালিব ওর লক্ষ্যে অবিচল। আর আমি জানি, ও সফল হবেই।’’

বৃহস্পতিবার সকালে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া উপচে পড়ছে শুভেচ্ছা বার্তায়। গালিবকে অভিনন্দন জানাতে সোপোরের বাড়িতে চেনা-অচেনা বহু মানুষ উপহার হাতে হাজির হচ্ছেন। সকলকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন তবসসুম।

তবু মায়ের মন তো। আশঙ্কা একটা রয়েই যায়। এই সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে এক দিন স্বপ্নের আকাশ ছুঁতে পারবে তো গালিব? বাবার পরিচয় সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো? এ সবের মাঝেই এক ফাঁকে বলে গেলেন, ‘‘এর পর তিহাড় জেল থেকে বাবার দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনবে ছেলে।
এ আমার বিশ্বাস।’’ বলতে বলতে গলা না কাঁপলেও তবসসুমের দু’চোখ কি চিকচিক করে উঠেছিল স্বজন-হারানো বেদনায়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE