Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বোমারু বিমানের দায়িত্ব মহিলা চালকদের হাতেও

আকাশে বৈষম্যের সীমারেখা অবশেষে ভাঙতে চলেছে। এ বার মহিলা চালকদের হাতেও বোমারু বিমানের দায়িত্ব তুলে দিতে চলেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। আজ বায়ুসেনার ৮৩তম প্রতিষ্ঠা দিবসে এই ‘ঐতিহাসিক’ সিদ্ধন্তের কথা জানিয়েছেন এয়ার চিফ মার্শাল অরূপ রাহা।

বায়ুসেনা দিবসে মহিলা পাইলট। — নিজস্ব চিত্র

বায়ুসেনা দিবসে মহিলা পাইলট। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:১১
Share: Save:

আকাশে বৈষম্যের সীমারেখা অবশেষে ভাঙতে চলেছে।

এ বার মহিলা চালকদের হাতেও বোমারু বিমানের দায়িত্ব তুলে দিতে চলেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। আজ বায়ুসেনার ৮৩তম প্রতিষ্ঠা দিবসে এই ‘ঐতিহাসিক’ সিদ্ধন্তের কথা জানিয়েছেন এয়ার চিফ মার্শাল অরূপ রাহা। ইতিমধ্যেই বায়ুসেনার এই বাঙালি প্রধান কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এ বিষয়ে প্রস্তাব পেশ করেছেন। এখন শুধু সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষা।

যুদ্ধবিমান চালানোর কাজে মহিলা নিয়োগ করা হবে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক বহু পুরনো। বিমানবাহিনীতে এখন ৯৪ জন মহিলা পাইলট রয়েছেন। তাঁরা পণ্যবাহী বিমান চালান। বন্যার সময় হেলিকপ্টারে ত্রাণ পৌঁছে দেন। হেলিকপ্টারে রূদ্ধশ্বাস কসরতও দেখান। কিন্তু যুদ্ধবিমান ছোঁয়ার অনুমতি মিলত না এত দিন।

গত বছরও অরূপবাবু বলেছিলেন, ‘‘যুদ্ধবিমান চালানো খুবই চ্যালেঞ্জিং। মহিলারা শারীরিক ভাবে দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধবিমান চালানোর উপযুক্ত নন। বিশেষত অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বা অন্য শারীরিক অসুস্থতার সময় এটা খুবই কঠিন কাজ।’’ সেই অরূপ রাহাই আজ বলেছেন, ‘‘ভারতের তরুণীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে আমরা ওঁদের হাতে যুদ্ধবিমানের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি।’’

মহিলারা যুদ্ধবিমান নিয়ে শত্রুর ডেরায় বোমা দেগে আসছেন, সারা বিশ্বে অবশ্য এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইজরায়েল তো বটেই। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রথম মহিলা যুদ্ধবিমান চালক মেজর মরিয়াম আল মানসৌরি সিরিয়ায় আইএসের শিবিরে বোমা ফেলে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। পড়শি দেশ পাকিস্তানেও লেফটেন্যান্ট আয়েষা ফারুক যুদ্ধবিমানে হাত পাকিয়ে ফেলেছেন।

এ দেশে ১৯৯৪-এ প্রথম একা বায়ুসেনার বিমান চালান ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হরিতা কউর দেওল। মাত্র ২২ বছর বয়সে। তার পর থেকেই পুরুষ ও মহিলা বিমানচালকদের মধ্যে গণ্ডি ভেঙে ফেলার লড়াই চলছে। ২০১০-এ দিল্লি হাইকোর্ট মহিলা বিমানচালকদের দীর্ঘ মেয়াদি নিয়োগের নির্দেশ দেয়। তার আগে পর্যন্ত মহিলারা তিন সামরিক বাহিনীতে ১৪ বছরের বেশি চাকরি করতে পারতেন না। এর পরেই আরও জোরদার হয় যুদ্ধবিমানের ‘কন্ট্রোল স্টিক’ হাতে নেওয়ার দাবি।

কিন্তু আসল প্রশ্নটা থেকে যায়। কয়েক বছর আগে বায়ুসেনার এক শীর্ষকর্তা যে প্রশ্নটা প্রকাশ্যে করেই ফেলেছিলেন। এক, যুদ্ধবিমানের মহিলা চালকরা শত্রু রাষ্ট্রের হাতে বন্দি হলে কী হবে? সেই ঝুঁকি কি নেওয়া যায়? দুই, যুদ্ধবিমানের চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা খরচ হয়। এক জন মহিলা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে বা তাঁর বয়স বাড়লে সেই বিমান চালানোর পক্ষে তিনি শারীরিক ভাবে সক্ষম না-ও থাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের পিছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে কী লাভ? সেনাবাহিনীতে মহিলাদের ‘কমব্যাট অপারেশন’-এ নামানো হয় না। নৌসেনাতেও মহিলা অফিসারদের যুদ্ধজাহাজে পা রাখার অনুমতি নেই। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর মনোহর পর্রীকরও বলেছিলেন, ‘‘যুদ্ধের সময় শত্রু সেনার হাতে কোনও মহিলা বন্দি হলে কী হতে পারে, তা-ও ভাবা দরকার।’’

তা হলে এখন মনোভাব বদলের কারণ কী? বায়ুসেনার সূত্রের বক্তব্য, প্রযুক্তি এগিয়ে যাওয়ায় যুদ্ধবিমান চালানো আগের থেকে এখন অনেক সহজ। সেনা অভিযানে শত্রু সেনা বা জঙ্গিদের মুখোমুখি লড়তে হয়। যুদ্ধবিমান চালানোর ক্ষেত্রে সেই ঝুঁকি কম। আরেকটি দিক হল, দেশে যুদ্ধবিমান চালকদের অভাব। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিষয়টির সমালোচনা করে। মহিলা বিমানচালকদের কাজে লাগিয়ে সেই শূন্যস্থানও পূরণ করা যাবে বলে মনে করছেন বায়ুসেনার কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE