Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মাঝ আকাশে সংঘর্ষ এড়াল দুই বিমান

মুম্বইয়ের আকাশে মুখোমুখি এসে পড়েছিল ভিস্তারা ও এয়ার ইন্ডিয়ার দু’টি বিমান। উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ডিজিসিএ) সূত্রে খবর, সে দিন দু’টি বিমানের মধ্যে উচ্চতার তফাত ছিল মাত্র একশো মিটার। আর দুর্ঘটনার কয়েক সেকেন্ড আগের মুহূর্তে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরত্বে ছিল বিমান দু’টি।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৯
Share: Save:

ফারাক মাত্র কয়েক সেকেন্ডের। মাঝ আকাশে মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়াল দুই যাত্রিবাহী বিমান। শেষ মুহূর্তের তৎপরতায় বাঁচানো গিয়েছে কয়েকশো প্রাণ। ভারতের আকাশে এত বড় বিপর্যয় এর আগে কবে এড়ানো গিয়েছিল, মনে করতে পারছেন না কেউ।

ঘটনা চার দিন আগের। গত ৭ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ের আকাশে মুখোমুখি এসে পড়েছিল ভিস্তারা ও এয়ার ইন্ডিয়ার দু’টি বিমান। উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ডিজিসিএ) সূত্রে খবর, সে দিন দু’টি বিমানের মধ্যে উচ্চতার তফাত ছিল মাত্র একশো মিটার। আর দুর্ঘটনার কয়েক সেকেন্ড আগের মুহূর্তে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরত্বে ছিল বিমান দু’টি। ঠিক সেই সময় ট্র্যাফিক কলিশন অ্যাভয়ডেন্স সিস্টেম (টিকাস)-এর মাধ্যমে সঙ্কেত যায় দুই বিমানের পাইলটদের ককপিটে। পাইলটরা শেষ মুহূর্তে দুই বিমানের গতিপথ ঘুরিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ান। ভিস্তারা বিমান সংস্থার দুই পাইলটকে বসিয়ে দিয়েছে ডিজিসিএ।

এই ঘটনা মনে করিয়েছে চরখি দাদরির কথা। ১৯৯৬ সালে হরিয়ানার এই গ্রামে মাঝ আকাশে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল দুই বিদেশি বিমানের। মারা গিয়েছিলেন ৩৪৯ জন। দুই বিমানের কাউকেই বাঁচানো যায়নি।

বুধবার রাত আটটা বেজেছে সবে। ভিস্তারার উড়ান এ-৩২০ নিও দিল্লি থেকে পুণে যাচ্ছিল। একই সময় এয়ার ইন্ডিয়ার এয়ারবাস এ-৩১৯ মুম্বই থেকে ভোপাল যাচ্ছিল। ২৭ হাজার ফুট উচ্চতায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি ছিল। অন্য দিকে ভিস্তারার বিমানটি নেমে এসেছিল ২৭, ১০০ ফুটে। মুম্বইয়ের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) সূত্রে জানানো হয়েছে, তারা ভিস্তারার বিমানটিকে ২৯ হাজার ফুট দিয়ে যেতে বলেছিল। কিন্তু সেটি কী ভাবে ২৭ হাজার ফুটে নেমে এল, সেই ব্যাখ্যা মিলছে না। কিন্তু ভিস্তারার তরফে জানানো হয়েছে, তাদের পাইলটকে ২৭ হাজার ফুট উচ্চতা দিয়েই সেই সময় যেতে বলা হয়েছিল। বিমান সংস্থার বক্তব্য, ‘‘যাত্রী আর কর্মীদের নিরাপত্তাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পাইলটরা সে দিন ওই দুর্ঘটনা এড়াতে এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) মেনেই কাজ করেছেন। বিষয়টি উচ্চতর কর্তৃপক্ষের তদন্তের অধীনে।’’

এয়ার ইন্ডিয়া বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেনি। তবে ডিজিসিএ-র এক সূত্র জানাচ্ছে, গোটা বিষয়টি এখন ‘এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’ তদন্ত করে দেখছে। শাস্তি হিসেবে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে ভিস্তারার দুই পাইলটকেই। কারণ প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে এটিসি-র নির্দেশ না মেনে তাঁরাই দু’হাজার ফুট নীচে নেমে এসে মারাত্মক ভুল করে ফেলেছিলেন।

বিমান বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, মাঝ আকাশে দু’টি বিমানের উচ্চতার তফাত থাকা উচিত কমপক্ষে ১০০০ মিটার। সে দিন সেই ফারাকটাই নেমে এসেছিল মাত্র একশো মিটারে। টিকাস শেষ মুহূর্তে বিপদ বার্তা না পাঠালে কী হত, তা ভেবেই শিউরে উঠছেন অনেকে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে এখন বিশ্বের সব দেশের যাত্রিবাহী বিমানেই এই টিকাস ব্যবস্থা থাকে। মাঝ আকাশে কোনও বিমান মুখোমুখি চলে এলে টিকাস সব সময়ই আগে ভাগে বার্তা পাঠিয়ে দেয় বিমানে। এমনকী সংঘর্ষ এড়াতে কোন বিমানের পাইলটকে ঠিক কত উচ্চতায় উঠতে বা নামতে হবে, সেটাও টিকিস-ই ঠিক করে দেয়।

দু’সপ্তাহের মধ্যে মহারাষ্ট্রের আকাশে এই ধরনের ঘটনা দু’বার ঘটল। গত ২৮ জানুয়ারি, নাগপুরের আকাশে ইন্ডিগো এবং এমিরেটসের দু’টি বিমানও ন্যূনতম দূরত্বের মাত্রা লঙ্ঘন করেছিল বলে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mid-Air Collision Air India Vistara Flights
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE