Advertisement
E-Paper

মাসুদ আজহারকে পৌঁছতে কন্দহর যাননি ডোভাল, তা হলে কারা ছিলেন সেদিন?

১৯৯৪ সালে নাম ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরে প্রবেশ করে জইশ-ই-মহমম্মদ চাঁই মাসুদ আজহার।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৯ ১৫:৫৪
তালিবানের দখলে থাকা কন্দহরে বিমানটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় জঙ্গিরা।—ফাইল চিত্র।

তালিবানের দখলে থাকা কন্দহরে বিমানটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় জঙ্গিরা।—ফাইল চিত্র।

এখনও একমাস পেরোয়নি। তার মধ্যেই পুলওয়ামা নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ উঠছে। এক দিকে ‘জঙ্গি-সমব্যথী’ বলে বিরোধীদের আক্রমণ করছে শাসকদল। অন্য দিকে শাসকদলকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বিরোধীরা। যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। ১৯৯৯ সালে তত্কালীন বিজেপি সরকারই মাসুদ আজহারকে ছেড়ে দিয়েছিল। তাই হামলার দায় তাদের নিতে হবে বলে দাবি করেছেন তিনি। তাতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকেও টেনে এনেছেন তিনি। প্রাক্তন ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)প্রধান ডোভাল নিজে বিমানে করে মাসুদকে আফগানিস্তানের কন্দহরে ছেড়ে এসেছিলেন বলে অভিযোগ তাঁর।

কিন্তু দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা রাহুল গাঁধীর এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। বরং মাসুদের সঙ্গে ওই বিমানে অজিত ডোভাল ছিলেনই না বলে পাল্টা দাবি করেছেন তাঁরা। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পণবন্দি যাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে মাসুদ আজহারকে কন্দহর উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বটে। তবে মাসুদের সঙ্গে ওই বিমানে ছিলেন না অজিত ডোভাল। বরং আইবি প্রধান ডোভাল তখন আর এক আধিকারিক নেহচল সান্ধুর সঙ্গে কন্দহরেই ছিলেন। বিমান ছিনতাইকারী এবং তালিবানদের সঙ্গে দরাদরিতে ব্যস্ত ছিলেন তাঁরা।

নিরাপত্তা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লি থেকে মাসুদ আজহার এবং আরও দুই কুখ্যাত জঙ্গি ওমর শেখ ও মুস্তাক আহমেদ জারগারকে নিয়ে তালিবান নিয়ন্ত্রিত কন্দহর বিমান বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন তত্কালীন বিদেশমন্ত্রী জসবন্ত সিংহ, প্রাক্তন সিবিআই ডিরেক্টর এপি সিংহ, ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের তত্কালীন মুখ্য ভিজিল্যান্স অফিসার রঞ্জিত নারায়ণ, স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপের (এসপিজি) পরিচালন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সতীশ ঝা এবং সুরেন্দ্র পান্ডে, এই মুহূর্তে যিনি মহারাষ্ট্রের ইন্সপেক্টর জেনারেল। ওই তিন জঙ্গির পাহারায় বিমানে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় একদল এসপিজি কম্যান্ডোকেও। বিমান কন্দহর পৌঁছলে তাঁদের নিতে আসেন ডোভাল এবং সান্ধু।

বিভীষিকার নাম IC-814: কী ভাবে ঘটেছিল সেই বিমান ছিনতাই?

আরও পড়ুন: রাহুল-মমতা-মায়াবতী-অখিলেশকে টুইট করলেন মোদী, কী বললেন জানেন?​

১৯৯৪ সালে নাম ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরে প্রবেশ করে জইশ-ই-মহমম্মদ চাঁই মাসুদ আজহার। কাশ্মীরে অনন্তনাগের কাছে খানাবল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ভারতের হাত থেকে তাকে ফিরে পেতে ১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর ১৭৬ জন যাত্রী সমেত ইন্ডিয়ান্স এয়ারলাইন্সের আইসি-৮১৪ বিমানটি ছিনতাই করে একদল জঙ্গি। শুরুতে দুবাইয়ে কয়েকজন যাত্রীকে ছেড়ে দেয় তারা। কিছু যাত্রীকে ছুরি দিয়ে কোপানোও হয়। সেখান থেকে বিমান নিয়ে যাওয়া হয় তালিবান নিয়ন্ত্রিত কন্দহর বিমানবন্দরে। যার পর ১৫৫ জন যাত্রীর বিনিময়ে ভারতে বন্দি ৩৬ জন কুখ্যাত জঙ্গিকে ছেড়ে দিতে হবে বলে দাবি তোলে তারা। মুক্তিপণ বাবদ ২০ কোটি মার্কিন ডলারও চেয়ে বসে। দীর্ঘ দরাদরির পর মাসুদ আজহার, ওমর শেখ এবং মুশতাক আহমেদ জারগারকে তাদের হাতে তুলে দিতে সম্মত হয় বাজপেয়ী সরকার। যার পর ৩১ ডিসেম্বর তিন জঙ্গির বিনিময়ে পণবন্দি যাত্রীদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

ভারতের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই মাসুদ আজহার আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। পাকিস্তানে বসে ভারতের বিরুদ্ধে একাধিক নাশকতামূলক হামলায় মদত দিতে শুরু করে সে। পাকিস্তানে ফিরে জইশ-ই-মহম্মদে জঙ্গি সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করে। ভারতের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসাবে উঠে আসে ওমর শেখও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লকে নৃশংস ভাবে খুন করে সে। কাশ্মীর উপত্যকায় হিজবুল মুজাহিদিন-সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে মুস্তাক শেখ জারগারের। যে কারণে আজও বাজপেয়ী সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

আরও পড়ুন: পিছনে গেল নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিরোধ, বিজেপির জোটে ফিরল অসম গণ পরিষদ​

তবে এতে ভারতীয় গোয়েন্দা এবং ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের কোনওভাবেই দায়ী করা ঠিক নয় বলে দাবি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তা দফতরের ওই আধিকারিকের। তিনি বলেন, ‘‘একসপ্তাহ ধরে যাত্রীদের পণবন্দি করে রাখা হয়েছিল। বিমানের মধ্যেই শৌচকর্ম সারতে বাধ্য হয়েছিলেন অনেকে। জখম অবস্থায় কাতরাচ্ছিলেন কয়েকজন। ছিনতাই হওয়া ওই বিমানে শশীভূষণ সিংহ তোমরও ছিলেন। কাঠমাণ্ডুতে ভারতীয় দূতাবাসের মুখ্য সচিব হওয়ার পাশাপাশি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংয়ের (র) অফিসার ছিলেন তিনি। কোনওভাবে তা জানতে পারলে, বিমানেই তাঁকে মেরে ফেলত জঙ্গিরা। তাই অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়েছিল আমাদের। তা ছাড়া গোটা অপারেশনটাই হয়েছিল সরকারের নির্দেশ মেনে। তাই জঙ্গিদের ছাড়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কি না, তার দায় কোনওভাবেই গোয়েন্দা এবং ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের উপর চাপানো উচিত নয়।’’অপারেশন কন্দহরে যুক্ত থাকলেওঘটনার সবিস্তার ব্যাখ্যা করতে রাজি হননি এপি সিংহ এবং রঞ্জিত নারায়ণ।

(কী বললেন প্রধানমন্ত্রী, কী বলছে সংসদ- দেশের রাজধানীর খবর, রাজনীতির খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)

Masood Azhar Kandahar Hijack Indian Airlines Flight 814 Rahul Gandhi Ajit Doval BJP Taliban Jaish-e-Mohammed Pulwama Terror Attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy