Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সঙ্ঘ এ বার এক ঘাটে জল খাওয়াবে হিন্দুদের

দেশের ছ’লক্ষ গ্রামে সব হিন্দুকে এক ঘাটে জল খাওয়াবে সঙ্ঘ, তবে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলবে না। মোদীর অনুরোধ মেনে আপাতত হিন্দুত্ব নিয়ে আন্দোলনের এই নয়া পথ ঘোষণা করল সঙ্ঘ। গত কালই শেষ হয়েছে সংসদের অধিবেশন।

প্রবীণ তোগাড়িয়া।

প্রবীণ তোগাড়িয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৫
Share: Save:

দেশের ছ’লক্ষ গ্রামে সব হিন্দুকে এক ঘাটে জল খাওয়াবে সঙ্ঘ, তবে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলবে না। মোদীর অনুরোধ মেনে আপাতত হিন্দুত্ব নিয়ে আন্দোলনের এই নয়া পথ ঘোষণা করল সঙ্ঘ।

গত কালই শেষ হয়েছে সংসদের অধিবেশন। চাইলে আজ থেকেই ফের হিন্দুত্ব নিয়ে সুর চড়াতে পারতেন সঙ্ঘ নেতৃত্ব। কিন্তু সম্প্রতি নাগপুরে সঙ্ঘের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আপাতত এমন কোনও পদক্ষেপ করা হবে না, যাতে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়। এবং সেই সিদ্ধান্ত মেনেই সঙ্ঘ আজ বিতর্কিত প্রসঙ্গ এড়িয়ে আন্দোলনের কথা ঘোষণা করল সামাজিক অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে। ডাক দিল হিন্দুদের একজোট করার। আর এই আন্দোলনের ঘোষণার জন্য সাংবাদিক সম্মেলন করে সামনে আনা হল ঘোর মোদী-বিরোধী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়াকে। মোদীর বিরুদ্ধে যে তাঁর ব্যক্তিগত আক্রোশ রয়েছে, পরতে পরতে তা প্রকাশ পাচ্ছিল বটে। ঠারেঠোরে এ-ও বুঝিয়ে দিলেন যে, সময় এলে মোদী সরকারের বিরুদ্ধেও মুখ খুলতে পরোয়া করবে না সঙ্ঘ। তবে ধর্মান্তরণ, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বা রামমন্দিরের মতো বিতর্কিত প্রসঙ্গ আজ অন্তত মুখে আনেননি তোগাড়িয়া। বলেছেন শুধু, অস্পৃশ্যতা দূর করে এমন সমাজ গড়ার কথা, যেখানে দলিতরাও মিলেমিশে থাকতে পারবেন উচ্চ বর্ণের সঙ্গে।

তোগাড়িয়ার ঘোষণা, এই আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে দেশের ছ’লক্ষ গ্রামে দলিত থেকে উচ্চ বর্ণসব হিন্দু মিলে এক ঘাটের জল খাবে। সব মন্দিরে প্রবেশের অধিকার থাকবে সব হিন্দুর। এক শ্মশানে মৃতদেহ সৎকারের অধিকার সুনিশ্চিত করবে সঙ্ঘ। গ্রামে উচ্চ বর্ণের মানুষ অন্তত এক জন দলিতের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবেন। তাঁদের ঘরে যাবেন, একসঙ্গে খাবেন। নিজেদের বাড়িতেও তাঁদের আমন্ত্রণ জানিয়ে খাবার ব্যবস্থা করবেন। কাল থেকে শুরু হবে এই আন্দোলন।

প্রশ্ন উঠছে, ভিন্ জাতের পড়ুয়ার সঙ্গে ‘মিড ডে মিল’ খাওয়া নিয়েও আপত্তি বা বিরোধের নজির রয়েছে যে দেশে, সেখানে সঙ্ঘের এই নয়া কর্মসূচি নতুন বিতর্ক-বিরোধের জন্ম দেবে না তো? তোগাড়িয়া কিন্তু বলছেন, কোনও সংঘর্ষ নয়, স্নেহ ও সমন্বয়ের পথেই হবে এ সব।

যদিও সঙ্ঘ ও সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতাদের সাম্প্রতিক সব মন্তব্য ও কাজকর্মে কিন্তু অন্য রকম অভিজ্ঞতাই হয়েছে মোদী সরকারের। ধর্মান্তরণ নিয়ে তাঁদের তৎপরতার জেরেই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবিতে সংসদ অচল করে রাখেন বিরোধীরা। আটকে যায় সংস্কারমুখী বিভিন্ন বিল।

এর পরেই নরেন্দ্র মোদী সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতকে অনুরোধ করেন, এ ভাবে হিন্দুত্ব নিয়ে বিতর্ক হলে ধাক্কা খাচ্ছে সরকারের উন্নয়নের কর্মসূচি। এর পরেও যে বিতর্ক একেবারে হয়নি, তা নয়। স্বয়ং ভাগবতের মন্তব্য নিয়েও বিস্তর শোরগোল হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সঙ্ঘের সাম্প্রতিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মোদী সরকার অস্বস্তিতে পড়ে, আপাতত এমন কিছু করা হবে না। নাগপুরে ওই বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন নিতিন গডকড়ী। গিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও। সেখানে অবশ্য এ-ও স্থির হয়েছে, হিন্দুদের সংগঠিত করার পথ থেকে সরে আসবে না সঙ্ঘ। সংখ্যালঘুদের একাংশ একজোট হলেও হিন্দুরা নন। তাই জাত-পাতের ঊর্ধ্বে উঠে সেই প্রক্রিয়া চালু রাখা হবে অন্য পন্থায়।

সঙ্ঘ অস্পৃশ্যতা মোচনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল সেই ১৯৬৯ সালে। কর্নাটকের উডুপি সভায়। ৪৬ বছর পরে সেটিকে আবার সামনে নিয়ে আসা হল নিছক পরিস্থিতির চাপে। আর মোদীকে বার্তা দেওয়ার জন্য সেটি ঘোষণা করা হল তোগাড়িয়াকে দিয়ে, যিনি কথায় কথায় মোদীর বিরোধিতা করেন।

আজও কিন্তু প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি দিতে ছাড়েননি তিনি। বলেছেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের মূল্যায়ন করার সময় নেই আমার কাছে। তবে সময় এলে সঙ্ঘের মূল কর্মসূচি নিয়েও মুখ খোলা হবে। তবে আপাতত আমাদের লক্ষ্য অস্পৃশ্যতা দূর করা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE