Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

তোপ পাকিস্তানকে, শান্তি ফেরাতে কাশ্মীর নিয়ে সর্বদল বৈঠক

ঝগড়া ভুলে কাশ্মীর নিয়ে একজোট হল সরকার বিরোধী দু’পক্ষই। আর ঐক্যের এই বার্তায় উজ্জীবিত কেন্দ্র জানিয়ে দিল, শুক্রবার অর্থাৎ বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে কাশ্মীর নিয়ে সবর্দলীয় বৈঠক হবে এবং সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং।

বিক্ষোভকারীদের হটাতে কাঁদানে গ্যাস। বুধবার শ্রীনগরে। ছবি: এএফপি।

বিক্ষোভকারীদের হটাতে কাঁদানে গ্যাস। বুধবার শ্রীনগরে। ছবি: এএফপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০৪:৩৪
Share: Save:

ঝগড়া ভুলে কাশ্মীর নিয়ে একজোট হল সরকার বিরোধী দু’পক্ষই। আর ঐক্যের এই বার্তায় উজ্জীবিত কেন্দ্র জানিয়ে দিল, শুক্রবার অর্থাৎ বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে কাশ্মীর নিয়ে সবর্দলীয় বৈঠক হবে এবং সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং। এ দিন ঘরোয়া রাজনীতির বাধ্যবাধকতা মেনে কাশ্মীর-প্রশ্নে শরিক মেহবুবা মুফতি সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্র। একই ভাবে গোটা সংসদদকে পাশে নিয়ে উপত্যকার চলতি সমস্যার জন্য ফের পাকিস্তানের দিকেই আঙুল তুলল নয়াদিল্লি।

কাশ্মীরে অশান্তি শুরুর পর থেকেই বিরোধীরা একাধিক বার সর্বদলীয় বৈঠকের দাবি তুলছে। আজ রাজ্যসভায় কাশ্মীর নিয়ে বির্তকে ফের ওই দাবি তোলে প্রায় সব দলই। বিতর্কের একেবারে শেষ দিকে রাজনাথ উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘সরকার বিরোধীদের দাবি মেনে শুক্রবার সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে ওই বৈঠক ডাকতে চলেছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন নরেন্দ্র মোদী।’’ এ বিষয়ে সরকার যে বিরোধীদের পাশে নিয়েই চলতে চায়, সেই বার্তা দিতে কাশ্মীরে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠানোর বিষয়েও ভেবে দেখার কথা জানান রাজনাথ। কাশ্মীরে শান্তি ফেরানোর প্রশ্নে সংসদে আনা শাসক শিবিরের প্রস্তাব আজ সর্বসম্মত ভাবে পাশ হয়েছে।

সংসদের এককাট্টা চেহারায় উজ্জীবিত সরকার উপত্যকায় অশান্তির জন্য পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে। রাজনাথের বক্তব্য, লস্কর জঙ্গিরা এখন উপত্যকার পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর পরিবারকে হুমকি দিতে শুরু করেছে। কাশ্মীর অশান্তি ছড়াতে এসে ধৃত লস্কর জঙ্গি বাহাদুর আলির ব্যাপারে গতকালই দিল্লিতে নিযুক্ত পাক হাইকমিশনার বাসিত আলির হাতে ডিমার্শ তুলে দিয়েছিল ভারত। আজ জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ জানিয়েছে, গত ২৫ জুলাই কুপওয়ারার কাছে
ধরা পড়েছে পঞ্জাবের জিয়া বাগ্গা গ্রামের বাসিন্দা বাহাদুর আলি। তার দায়িত্ব ছিল কাশ্মীরে অশান্তি
ছড়ানো। সুযোগ পেলে সেনার উপরে হামলা চালানোর দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল তাকে। এনআইএ সূত্রের খবর, অশান্তি চলাকালীন বিক্ষোভকারীদের আড়াল থেকে নিরাপত্তাবাহিনীকে লক্ষ করে দু’বার গ্রেনেডও ছোঁড়ে সে।

উপত্যকায় গত এক মাস ধরে অশান্তি চললেও গতকালই কাশ্মীর প্রশ্নে প্রথম মুখ খুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মধ্যপ্রদেশের এক জনসভায় মোদীর বক্তব্য ছিল কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার দরকার রয়েছে। এ জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর দেখানো পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। এর পরে আজ ফের রাজ্যসভায় বিরোধীরা কাশ্মীর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দাবি করেন। বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘বিদেশে কোনও ঘটনা ঘটলে, এমনকী পাকিস্তানে কিছু হলে প্রধানমন্ত্রী টুইট করেন। কিন্তু কাশ্মীর প্রশ্নে তিনি নীরব!’’ একই সুরে সমালোচনা করেন তৃণমূল, সিপিএম, জেডিইউ-সহ অন্য বিরোধীরা।

মোদীর নীরবতা প্রসঙ্গে রাজনাথ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর আমার উপর ভরসা রয়েছে বলেই আমায় এই দায়িত্ব দিয়েছেন। তা ছাড়া আমি যা বলছি, তা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই বলছি।’’ বিজেপির এক নেতার ব্যাখ্যা, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই যে দল তথা সরকারের বক্তব্য এবং এতে যে কোনও বিরোধ নেই, সেটাই আজ সংসদে বুঝিয়ে দিলেন রাজনাথ।

গত মাসের গোড়ায় হিজুবল জঙ্গি বুরহান ওয়ানির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অশান্ত হয়ে ওঠে উপত্যকা। প্রতিবাদে পথে নামে কাশ্মীরের যুব সমাজ। গত কাল প্রধানমন্ত্রীর পরে আজ রাজনাথও যুব সমাজকেই বার্তা দেন। যুব সমাজকে কোনও রকম উস্কানিতে পা না দিতে অনুরোধ করেন রাজনথ। চলতি বিক্ষোভে একাধিক বার আইএসের পতাকা নিয়ে পথে নামতে দেখা গিয়েছে কাশ্মীরি যুবকদের। আইএসের মতাদর্শ যে ইসলামবিরোধী, তা উল্লেখ করে তাদের এই ফাঁদে পা না দেওয়ার পরামর্শও দেন রাজনাথ। আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাশ্মীর নিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ যে আলোচনার দাবি তুলেছেন, তাকে কটাক্ষ করে আজ রাজনাথ বলেন, ‘‘আলোচনা হলে তা হওয়া উচিত পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে। কাশ্মীর নিয়ে নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kashmir politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE