আকবর খান। ছবি: সংগৃহীত।
তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। ভেবেছিলেন আয় বাড়াতে দুধের ব্যবসা শুরু করবেন। তাই গরু কিনতে বন্ধু আসলামকে নিয়ে শুক্রবার হরিয়ানার মেওয়াটের কুলগাঁও থেকে বিকেল পাঁচটা নাগাদ মোটরসাইকেলে রাজস্থানের অলওয়ার জেলার লালাওয়ান্ডি গ্রামের দিকে রওনা দিয়েছিলেন আকবর খান (২৮)। গত কাল অলওয়ারে ‘গোরক্ষকদের’ হামলায় নিহত আকবরের পরিবারের দাবি, গরু কিনে বাড়ি ফেরার পথে রাত একটা নাগাদ ‘গরু পাচারকারী’ সন্দেহে তাঁদের উপরে হামলা চালায় লালাওয়ান্ডি গ্রামের উত্তেজিত জনতা। ঘটনাস্থল থেকে আকবরকে উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় তিন আক্রমণকারীকে। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আশঙ্কাজনক হওয়া সত্ত্বেও আকবরকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে প্রায় ঘণ্টা চারেক দেরি করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, পুলিশ প্রথমে আকবরকে স্নান করায় এবং উদ্ধার হওয়া গরুগুলোকে অন্যত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করে। তার পরে প্রথমে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় আকবরকে। এমনকি হাসপাতালের পথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা-ও খান পুলিশ কর্মীরা। ভোর চারটে নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছনোর পর চিকিৎসকেরা আকবরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশের অবশ্য দাবি, ঘটনাস্থল থেকে সোজা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয়েছে আকবরের। সে কারণে এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া তিন জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলাও রুজু হবে বলে তাদের আশ্বাস।
ময়না-তদন্তের পরে কুলগাঁওয়ের বাড়িতে আনা হয় আকবরের দেহ। মা-বাবা, স্ত্রী এবং সাত সন্তান রয়েছে তাঁর। আকবরের স্ত্রী আসমিনা খান জানান, তিনটি গরু রয়েছে তাঁদের। স্থানীয় দুধ ব্যবসায়ীদের দুধ সরবরাহ করতেন আকবর। এ বার নিজেই দুধের ব্যবসা শুরু করবেন বলে শ্বশুরবাড়ি এবং বন্ধুদের থেকে টাকা ধার করে গরু কিনতে গিয়েছিলেন অলওয়ারে। এখন পরিবারের একমাত্র রোজগেরের মৃত্যুতে ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন আসমিনা। আসমিনার জন্য সরকারি সাহায্য দাবি করেছেন আকবারের দাদা।
শনিবার সকালে কুলগাঁওতে ফিরে আসেন আকবরের সঙ্গী আসলাম। জানান, শুক্রবার ঝোপের পিছনে লুকিয়ে পড়ায় প্রাণে বেঁচেছেন তিনি। আসলামের কথায়, সে দিন ষাট হাজার টাকা দিয়ে লালাওয়ান্ডি থেকে বাছুর-সহ দু’টি গরু কিনেছিলেন আকবর। ফেরার পথে গরুগুলির সঙ্গে হাঁটছিলেন আকবর। পাশে পাশে মোটরসাইকেল নিয়ে এগোচ্ছিলেন আসলাম। তখনই বন্দুকের আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়ান তাঁরা। গরু পাচারকারী সন্দেহে মুর্হূতের মধ্যেই তাদের উপর চড়াও হয় আক্রমণকারীরা। অন্ধকার ছিল বলে আক্রমণকারীদের মুখ দেখতে পাননি বলে জানিয়েছেন আসলাম। তবে গলা শুনে তাদের চিহ্নিত করতে পারবেন বলে দাবি তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy