Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভজনে বুঁদ মুসলিম সংস্কৃত শিক্ষকের বাবা

বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইচইউ) স‌ংস্কৃতের এই শিক্ষক মুসলিম হওয়ায় তাঁর নিয়োগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন পড়ুয়াদের একাংশ। তাঁদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত পড়াতে পারবেন শুধু হিন্দুরাই।

বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক ফিরোজ খানকে নিয়ে বিক্ষোভ।

বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক ফিরোজ খানকে নিয়ে বিক্ষোভ।

সংবাদ সংস্থা
জয়পুর শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৭
Share: Save:

মন্দিরের চাতালে বসে হারমোনিয়াম বাজিয়ে ভজন গাইছিলেন রমজান খান। জয়পুরের ৩৫ কিলোমিটার দূরে বগরুর এই শ্রী রামদেব গোশালা চৈতন্যধাম মন্দিরে অবাধ যাতায়াত তাঁর। আরতি থেকে প্রার্থনা— মুসলিম এই প্রৌঢ়কে হিন্দু মন্দিরের নিত্যকর্মে অংশ নিতে কেউ বাধা দেননি আজ পর্যন্ত।

অথচ বাধা পেয়েছেন রমজানের ছেলে ফিরোজ খান। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইচইউ) স‌ংস্কৃতের এই শিক্ষক মুসলিম হওয়ায় তাঁর নিয়োগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন পড়ুয়াদের একাংশ। তাঁদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত পড়াতে পারবেন শুধু হিন্দুরাই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফিরোজের পাশে থাকলেও এত দিন ক্লাস নিতে পারেননি এই শিক্ষক। গত ১৪ দিনের বিক্ষোভের পরে আজ প্রথম বিএইচইউয়ের সংস্কৃত বিভাগ খুলল। এক অধ্যাপক ভগবত স্বরূপ শুক্ল বলেছেন, ‘‘এটি একটি আধুনিক সংস্কৃত বিভাগ যেখানে শাস্ত্র, বেদ ইত্যাদি পড়ানো হয়। যিনি এই বিষয়গুলিতে অত্যন্ত দক্ষ, তিনিই এখানে পড়াতে পারেন। ফিরোজ খান সে কারণেই নির্বাচিত হয়েছেন।’’

বগরুতে ফিরোজদের তিন কামরার বাড়িতে পা দিলেই বোঝা যায় হিন্দু সংস্কৃতি ও সংস্কৃত ভাষার চর্চা সে বাড়িতে নিয়মিত হয়। বাবা রমজান সংস্কৃত ভাষায় ধর্মীয় গান বাঁধেন। গোশালায় গিয়ে গো-সেবা করেন। আবার মসজিদে নমাজও পড়েন। রমজান বলেন, ‘‘বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে ছেলে নিযুক্ত হওয়ায় খুশি হয়েছিলাম। নিয়োগ ঘিরে বিক্ষোভ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের কাছে আর্জি, আমার ছেলেকে চিনুন। ও কোন পরিবেশে বড় হয়েছে জানুন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার ছেলে আমার মতোই ছোট থেকে সংস্কৃতচর্চা করেছে। উচ্চ যোগ্যতা অর্জন করেছে এবং বিএইচইউতে নির্বাচিত হয়েছে। আমি নিশ্চিত, পড়ুয়ারা মন দিয়ে ওর কথা শুনলে উপকৃতই হতেন।’’

রমজান জানিয়েছেন, সংস্কৃত ভাষায় দখল তাঁদের পারিবারিক ঐতিহ্য। তাঁর বাবাও মন্দিরে গান গাইতেন। তিনিই রমজানকে সংস্কৃত শিক্ষা দেন। কৃষ্ণ ও ভগবত ভক্তির সঞ্চার করেন তাঁর মনে। এখন প্রতি সন্ধ্যায় রমজানের গলায় রাম, কৃষ্ণ, শিব ও অন্য হিন্দু দেবদেবীর ভজন শোনেন বগরুর চৈতন্যধাম মন্দিরের ভক্তেরা। প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘ধর্মের কারণে কখনও বিভেদের শিকার হইনি। মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ি। আবার মন্দিরে গিয়ে কৃষ্ণের ভজনও গাই, গোসেবা করি। আমার প্রতিবেশীরা এ নিয়ে কখনও আপত্তি করেননি।’’

জেএনইউ বিতর্কের পর থেকে খান পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রতিবেশীরা। রঘুনাথধাম মন্দিরের এক পুরোহিতের বক্তব্য, ‘‘একজন উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ তাঁর মেধার কারণে নির্বাচিত হয়েছেন। ধর্মের কারণে তাঁকে নিয়ে বিক্ষোভ দেখানো নিন্দনীয়। এই অসহিষ্ণুতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’’ আর এক পুরোহিত মোহনলাল শর্মার কথায়, ‘‘আমাদের মন্দিরের যাবতীয় পূজাপাঠ, আরতি রমজানকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। ওঁর ভজন শুনতে মন্দিরে বহু মানুষ আসেন। কৃষ্ণের প্রতি ওঁর অসীম ভক্তি।’’

রমজান চান, ধর্ম দিয়ে নয়, যোগ্যতা দিয়ে বিচার করা হোক তাঁর ছেলেকে। একই সুর বিশ্ববিদ্যালের অধ্যাপকদের গলাতেও। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধীও আজ দাঁড়িয়েছেন ফিরোজের পাশে। টুইট করেন, ‘‘আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি আমাদের বিশেষত্ব ও শক্তি। সংস্কৃত ভাষার বিস্তার বিপুল। যে কোনও শিক্ষকই এই ভাষা পড়াতে পারেন।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য প্রোক্টর ও পি রাই বলেছেন, ‘‘সঙ্কট কাটাতে আমরা ছাত্রদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করছি। ইউজিসির নির্দেশিকা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় চলে। তা মেনেই ফিরোজ খানকে নিয়োগ করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও তা হবে। এখানে কোনও দ্বন্দ্ব নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhajan Firoze Khan Joypur Varanasi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE