Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিজ্ঞানী হতে চায় এই ‘কালাম জুনিয়র’

ছোট্ট কালাম পরিবারে আর্থিক সহায়তা জোগাতে স্কুল যাওয়ার আগে খবরের কাগজ বিক্রি করতেন। আমির সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে ও পরে, সাইকেল নিয়ে বেরোয় বাড়ি বাড়ি দুধ পৌঁছে দিতে।

লড়াই: বোনকে নিয়ে দুধ বিলি করতে বেরিয়েছে আমির। ইনসেটে প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম।

লড়াই: বোনকে নিয়ে দুধ বিলি করতে বেরিয়েছে আমির। ইনসেটে প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম।

আর্যভট্ট খান
রাঁচী শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০৬
Share: Save:

দশ বছরের আমির হুসেনকে পাড়ার অনেকেই ডাকেন ‘কালাম জুনিয়র’ বলে। আর ডাকবেন নাই বা কেন! প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ছেলেবেলার জীবন যুদ্ধের সঙ্গে রামগড়ের চিতোরপুরের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আমিরের লড়াইয়ে যে অনেক মিল!

ছোট্ট কালাম পরিবারে আর্থিক সহায়তা জোগাতে স্কুল যাওয়ার আগে খবরের কাগজ বিক্রি করতেন। আমির সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে ও পরে, সাইকেল নিয়ে বেরোয় বাড়ি বাড়ি দুধ পৌঁছে দিতে। ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথমেটিক্স অলিম্পিয়াডের প্রথম রাউন্ডে ‘গোল্ড মেডেল’ পেয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে আমির। রামগড়ের চিতোরপুরের মাউন্ট এভারেস্ট পাবলিক স্কুলে প্রতি বছর ক্লাসে প্রথম হওয়া আমিরের বরাবরের প্রিয় বিষয় অঙ্ক। তাঁর স্বপ্ন, অলিম্পিয়াডের শেষ রাউন্ডে পৌঁছে মেডেল জেতার। তার কথায়, ‘‘দুধ বিক্রি না করলে আমাদের ছ’ভাই বোনের সংসার চলবে না। তবে বিজ্ঞানী হওয়া আমার স্বপ্ন। স্বপ্ন পূরণ করতে দুধ বিক্রি আমায় চালিয়ে যেতেই হবে।’’

পাবলিক স্কুলে পড়া তার হত না। তবে তার মা, মেহেরুন্নেশা স্কুলেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। সেই সুবাদে এবং মেধার কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিনা খরচে আমিরের পড়াশোনার ভার নিয়েছেন। বাবা আবুল আখতার অসুস্থ। আমিরের বাড়িতে থাকার মধ্যে রয়েছে দু’টি গাই গরু। কোনও রকমে খেয়েপড়ে বাঁচার রসদ তারাই।

আরও পড়ুন: মন্দির-মসজিদ, এক পথে মোদী-রাহুল


ভারতের প্রথম রকেট। উত্ক্ষেপণের আগে সাইকেলে করে নিয়ে যাচ্ছেন এপিজে আব্দুল কালাম।— ফাইল চিত্র।

প্রতিদিন ফজরের নমাজের আগে উঠে পড়ে আমির। তারপর গাই দুইয়ে দুধ ভরে ফেলে ছোট ছোট বোতলে। সকাল ছ’টা থেকে আটটা পর্যন্ত চলে পড়াশোনা। নাকে-মুখে কিছু গুঁজে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে আমির। বাড়ি বাড়ি দুধ পৌঁছে দেয়। সাইকেলের হ্যান্ডেলে থাকে ব্যাগভর্তি দুধের বোতল। পিঠে বই ভর্তি স্কুলের ব্যাগ। আটটা থেকে সাড়ে ন’টা পর্যন্ত পাড়ায় পাড়ায় দুধ বিক্রি করে দশটার মধ্যে পৌঁছে যায় স্কুলে। স্কুল থেকে বিকেলে বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় ফের গাই দুইয়ে বেরোয় দুধ বিলি করতে। আমিরের মা মেহেরুন্নেশার কথায়, ‘‘ছ’ভাইবোনের মধ্যে ওই বড়। আর কে-ই বা করবে?’’

সম্প্রতি আমির ‘ধরা পড়ে’ স্কুলের ডিরেক্টর সাজিদ হুসেনের কাছে। সাজিদ বলেন, ‘‘দেখি রাতে সাইকেল নিয়ে যাচ্ছে। এত রাতে বাইরে কেন? ও ব্যাগের বোতল দেখিয়ে বলে দুধ বিক্রি করতে যাচ্ছে।’’ এই লড়াই থেকে আমিরকে কী ভাবে একটু স্বস্তি দেওয়া যায়, তা নিয়েই ভাবছে স্কুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE