Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জিএসটি আদায় কমেছে, নির্মলাকে চি‌ঠি অমিতের

অমিত মিত্র যে করের হার ঢেলে সাজানোর দাবি তুলেছেন, আজ তার প্রতিফলন শোনা গিয়েছে প্রাক্তন অরুণ জেটলির কথাতেও। জেটলি বলেছেন, ভবিষ্যতে জিএসটি-তে মাত্র দু’টি করের হার থাকবে।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৯ ০১:৪৯
Share: Save:

দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিনেই দুঃসংবাদ। জিএসটি থেকে জুন মাসের আয় এক লক্ষ কোটি টাকার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারল না। জিএসটি চালুর পরে প্রতি মাসে অন্তত ১ লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে বলে আশা করা হয়েছিল। চলতি অর্থ বছরের, প্রথম দু’মাস, এপ্রিল ও মে-তে ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি আয় হলেও জুনে তা ফের ৯৯,৯৩৯ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। জিএসটি রিটার্নের হারও গত দু’বছরে বিশেষ বাড়েনি।

এ জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকারের জিএসটি ব্যবস্থার দিকেই আঙুল তুললেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে চিঠি লিখে অমিতবাবুর অভিযোগ, ‘‘জিএসটি থেকে আয় সামান্য বাড়লেও, জিএসটি চালুর সময় যেমনটা আশা করা হয়েছিল, তেমন আয় হচ্ছে না। এটা অবশ্যই চিন্তার কারণ।’’ অমিতের যুক্তি, জিএসটি-তে করের হারে এখনও গলদ রয়ে গিয়েছে। জিএসটি-র নিয়মে জটিলতা থেকে গিয়েছে। বারবার নিয়ম বদল করার ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। এ সবের সমাধানের সঙ্গে কর ফাঁকি বন্ধ করা না গেলে, জিএসটি থেকে আশানুরূপ রাজস্ব আয় ধরাছোঁয়ার বাইরে
থেকে যাবে।

অমিত মিত্র যে করের হার ঢেলে সাজানোর দাবি তুলেছেন, আজ তার প্রতিফলন শোনা গিয়েছে প্রাক্তন অরুণ জেটলির কথাতেও। জেটলি বলেছেন, ভবিষ্যতে জিএসটি-তে মাত্র দু’টি করের হার থাকবে। অমিতবাবু নির্মলাকে লিখেছেন, জিএসটি-র মূল নীতিই ছিল, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে হয় কর বসবে না। না হয় সবথেকে কম হারে কর চাপবে। ২৮ শতাংশ কর চাপবে ক্ষতিকারক পণ্যের উপর। অধিকাংশ পণ্যে করের হার ১২ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। জেটলির বক্তব্য, রাজস্ব আয় বাড়লে তবেই ১২ ও ১৮ শতাংশ করের হার মিলিয়ে একটি করের হার চালু করা যেতে পারে। কিন্তু অমিতের যুক্তি, করের হার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঢেলে না-সাজালে আয় বাড়বে না।

আজ জিএসটি-র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ সিংহ ঠাকুর জিএসটি-তে কর ফাঁকি রোখার উপরে জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, ইমানদার ট্রেডার সে বৈর নহি, ফেক ইনভয়েসেসওয়ালোঁ কি খৈর নহি।’’ কিন্তু অমিতবাবু তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, জিএসটি চালুর আগে জিএসসি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা তৈরি না হওয়ায় জিএসটিআর-থ্রিবি ব্যবস্থা চালু করতে হয়েছিল। অস্থায়ী ব্যবস্থাই পাকাপাকি হয়ে রয়ে গিয়েছে। ফলে বেচা ও কেনার হিসেব মেলানো যাচ্ছে না। হাওয়ালা ও ভুয়ো বিল তৈরি করে কর ফাঁকি বাড়ছে। জিএসটি থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী আয় হচ্ছে না।

তবে এ দিনই রাজ্য বিধানসভায় জিএসটি আদায়ে রাজ্যের সাফল্যের কাহিনি শুনিয়েছেন অমিতবাবু। বাজেট বিতর্কের জবাবি ভাষণে তিনি বলেন, জিএসটি-তে পশ্চিমবঙ্গ সেরা। লক্ষ্যমাত্রা ১৪ শতাংশের থেকে জিএসটি-তে বৃদ্ধি অনেক বেশি হয়েছে।’’ এ দিন বাজেট-বিতর্কে রাজ্য সরকারকে নিজস্ব আয় বাড়ানোর পরামর্শ দেন বিরোধীরা। কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা দাবি করেন, রাজ্যের নিজস্ব কর আদায় অন্য বেশ কয়েকটি রাজ্যের তুলনায় কম। সেই কারণে অর্থ কমিশন বার বার কর আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছে। সিপিএম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীও জানান, রাজ্যের যে পরিমাণ রাজস্ব বৃদ্ধি হয়েছে, তার বেশিরভাগটাই এসেছে আবগারি থেকে। জবাবি ভাষণে অর্থমন্ত্রী রাজ্যের জিএসটি-সাফল্য ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘অনেক সদস্যই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। প্রত্যেকের উত্তরই আমার কাছে রয়েছে। কথা দিলাম, বাজেটের শেষে বিস্তারিত সব বলব।’’

সহ প্রতিবেদন: চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Mitra Nirmala Sitharaman GST GST Taxation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE