পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রের একাধিক ‘নির্দেশমূলক পরামর্শ’ বা ‘অ্যাডভাইসরি’ পাঠানো নিয়ে সরগরম হল রাজ্যসভা। তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ ব্রায়েনের অভিযোগের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও পাল্টা জানিয়ে দিলেন, রাজ্যকে ‘নির্দেশমূলক পরামর্শ’ পাঠানোর অধিকার তাঁর রয়েছে।
পাশাপাশি সংসদের ভিতরে ও বাইরে তৃণমূল সোচ্চার হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি রাজ্য বিজেপির নেতাদের ‘নখ দাঁত’ দেখানোর হুমকির বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সংসদের চত্বর।
রাজ্যসভায় জম্মু-কাশ্মীর সংরক্ষণ সংশোধনী বিলটি নিয়ে আলোচনার সময়ে পশ্চিমবঙ্গে ‘নির্দেশমূলক পরামর্শ’ পাঠানোর প্রসঙ্গ টেনে আনেন ডেরেক। বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সংবিধানের মূলমন্ত্র। বাবাসাহেব অম্বেডকর বলেছিলেন, সংবিধানই শেষ কথা। কিন্তু আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাতে চাই, কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, বিহারেই শুধু নয়, বাংলাতেও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বজায় থাকুক।’’ পশ্চিমবঙ্গে ‘নির্দেশমূলক পরামর্শ’ পাঠানো নিয়ে অমিতকে নিশানা করে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘আপনি সাত দিনে দু’টো অ্যাডভাইসরি পাঠিয়েছেন বাংলায়। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে ২৫ জন আর বিহারে ১৩০ জনের মৃত্যু হওয়া সত্ত্বেও কোনও অ্যাডভাইসরি পাঠাননি।’’
জবাবি বক্তৃতায় অমিত শাহের মন্তব্য, ‘‘আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্যই পশ্চিমবঙ্গকে ‘নির্দেশমূলক পরামর্শ’ দেওয়া হয়েছে। ওখানে নিয়মিত রাজনৈতিক হিংসা এবং সংঘর্ষ চলছে। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন করছি, পশ্চিমবঙ্গে যেন দ্রুত শান্তি ফিরিয়ে আনা হয়। অ্যাডভাইসরি পাঠানো আমার সাংবিধানিক দায়িত্ব। ‘নির্দেশমূলক পরামর্শ’ পাঠানোর অধিকার আমার রয়েছে।’’ উত্তরপ্রদেশ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, সাম্প্রতিক সময়ে সে রাজ্যে একটিও রাজনৈতিক হত্যা হয়নি। অমিতের কথা শুনেই নিজেদের আসন থেকে হইচই শুরু করে দেন তৃণমূল সাংসদরা। ডেরেক যুক্তি দেন, সংসদীয় রীতি অনুযায়ী কোনও উপযুক্ত প্রস্তাব ছাড়া সংসদে কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করা যায় না। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু অবশ্য এই প্রতিবাদ খারিজ করে দেন।
বিজেপি-তৃণমূল সংঘাতে আজ উঠে এসেছে ‘নখদাঁতের’ প্রসঙ্গও। কেশপুরে দাঁড়িয়ে গত শনিবার রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং দলের নেতা মুকুল রায় কার্যত হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, সংসদীয় অধিবেশন শেষ হলেই নখদাঁতগুলি দেখতে শুরু করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন বিষয়টি জিরো আওয়ারে তুলতে। কিন্তু সে সুযোগ আসেনি।
পরে সুদীপবাবু বলেন, ‘‘লোকসভার অধিবেশনের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে নখদাঁত দেখানোর কী সম্পর্ক, সেটা একেবারেই বোধগম্য হল না। নখদাঁত দেখানোর মত বাক্য ব্যবহার চূড়ান্ত প্ররোচনামূলক, যা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।’’ সুদীপবাবুর মতে, পশ্চিমবঙ্গে শান্তি রাখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজে যখন চেষ্টা করছেন, তখন এই ধরনের উস্কানিমূলক কথাবার্তায় পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। রাজ্যসভায় ডেরেকও বিষয়টির উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি সভাপতির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy