Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘চতুর বানিয়া’ গাঁধী! তোপের মুখে অমিত

মহাত্মা গাঁধীর চশমাকে লোগো বানিয়ে নরেন্দ্র মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ যেমন হয়েছে, তেমনই খাদির ক্যালেন্ডারে গাঁধীকে সরিয়ে জায়গা করেছে মোদীর ছবি। জাতির জনককে নিয়ে মোদী জমানায় বিতর্কের শেষ নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৭ ০৩:৩৪
Share: Save:

মহাত্মা গাঁধী একজন ‘চতুর বানিয়া’ (চালাক ব্যবসায়ী)! দেশের শাসক দল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের মুখ থেকে ‘জাতির জনক’ সম্পর্কে এমন এক মন্তব্য আসার পরেই ঝড় উঠল নিন্দার। শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক বিতর্কও।

গত কাল ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে এক জনসভায় অমিত শাহ বলেন, কংগ্রেস কোনও নীতি-বিচারধারার দল ছিল না। স্বাধীনতা অর্জনের এক বিশেষ মাধ্যম ছিল। দূরদর্শী হিসেবে মহাত্মা গাঁধী সেটি জানতেন। তাই একজন চালাক ব্যবসায়ী হিসেবে স্বাধীনতার পরেই তিনি কংগ্রেসকে ভেঙে দিতে বলেছিলেন।

মহাত্মা গাঁধীর চশমাকে লোগো বানিয়ে নরেন্দ্র মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ যেমন হয়েছে, তেমনই খাদির ক্যালেন্ডারে গাঁধীকে সরিয়ে জায়গা করেছে মোদীর ছবি। জাতির জনককে নিয়ে মোদী জমানায় বিতর্কের শেষ নেই। তাতে নতুন সংযোজন, অমিত শাহের মন্তব্য। যার পরেই নানা মহলে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। টুইটারে অনেকেই বিজেপিকে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, যত দিন গোটা বিশ্ব ভারতকে একটা মহান দেশ হিসেবে দেখবে, তত দিনই মহাত্মা গাঁধীকে নিয়ে চর্চা চলবে। কেউ আবার লিখেছেন, বিজেপির পক্ষে মহাত্মা গাঁধীকে বোঝা সম্ভব নয়! অনেকে বলেছেন, আসলে বিজেপি তো স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে কিছু বলার সুযোগ পায় না! কারণ ওদের কোনও নেতা স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেয়নি। তাই এ সব কথা ওরা সহজেই বলতে পারে!

ক্ষুব্ধ মহাত্মা গাঁধীর পৌত্র তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধীও। বিজেপি সভাপতির মন্তব্য ‘কুরুচিকর’ বলার পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, মহাত্মা গাঁধী এমন মন্তব্য শুনলে হাসতেন!

আরও পড়ুন: অনশনে শিবরাজ, অহিংস আন্দোলনে চাষিরা

বিজেপি সভাপতির মন্তব্য ঘিরে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছে কংগ্রেস-সহ একাধিক রাজনৈতিক দল। কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী মহাত্মার এক উদ্ধৃতি দিয়ে টুইট করেন। যেখানে মহাত্মা বলেছিলেন, ‘যখনই হতাশা হয়, আমি ইতিহাস স্মরণ করে দেখি, সত্য ও ভালবাসা সব সময় জিতেছে। রূঢ় শাসক ও হত্যাকারীদের কখনও অপরিহার্য মনে হয়। কিন্তু শেষে তাঁদের পতন অনিবার্য’।

ক্ষুব্ধ কংগ্রেস সাংবাদিক বৈঠকে বলে, বিজেপি এখন জাতির জনককে ব্যবসায়ীর পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে! স্বাধীনতা আন্দোলনের সব সংগ্রামী ও শহিদের অপমান করছে। শিলিগুড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অমিত শাহকে তোপ দেগে বলেন, ‘‘শাসক দলে আছে বলেই যা খুশি বলা যায়, এটি কারও ভাবা উচিত নয়। ইচ্ছে করে এই মন্তব্য করা হয়েছে! আমি দুঃখিত, স্তম্ভিত, শোকাহত। অমিত শাহের ক্ষমা চাওয়া উচিত।

ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ বলেন, ‘‘ সাধারণ আরএসএস কর্মী এই ধরনের কথা বললে তাঁকে গুরুত্ব না দিলেও চলে। কিন্তু শাসক দলের সভাপতি কী ভাবে এমন মন্তব্য করেন?’’ রামচন্দ্র গুহের মতে, ‘‘আধুনিক ভারতের মহত্তম এই ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে তিনি কিছু না জেনেই কি এমন বলেছেন? আর কিছু না হোক, অন্তত একজন গুজরাতি হিসেবেও তো তাঁর জানা উচিত গাঁধীজি কীসের জন্য গোটা জীবন লড়াই করেছেন!’’

এত বিতর্কের মুখেও বিজেপি অবশ্য চুপ। কিন্তু ঘরোয়া মহলে দলের কিছু নেতা বলছেন, তাঁদের সভাপতি তো ভুল কিছু বলেননি! গুজরাতিতে এ ধরনের কথা বলার চল আছে। আর মহাত্মা গাঁধী যে কংগ্রেসকে ভেঙে দিতে বলেছিলেন, সেটি তো ঐতিহাসিক সত্য। এতে স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামীদের তো কোনও অপমান করা হচ্ছে না। আর একদল বিজেপি নেতার বক্তব্য, এই নিয়ে কংগ্রেস ও বিরোধীরা যে ভাবে রে-রে করে উঠেছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে অমিত শাহের তিরটি সঠিক জায়গায় গিয়ে বিঁধেছে। কী সেই সঠিক জায়গা? মুখে কুলুপ ওই বিজেপি নেতাদের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE