Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

রামনাথের নাম মোদীকে বলেছিলেন অমিতই

প্রস্তুতি শুরু চার মাস আগে। বিজেপি সভাপতি ডেকে পাঠান দলের নবীন রাজ্যসভা সদস্য ভূপেন্দ্র যাদবকে। সভাপতি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতিটা বুঝতে চান। ভূপেন্দ্র সংসদ ও নির্বাচন কমিশন থেকে নথিপত্র এনে দেন। সে দিন থেকেই পড়াশুনো শুরু। ডাক পড়ে ঘনিষ্ঠ আইনজীবী বন্ধু তুষার মিত্তালের। তিনি বাড়িতে এসে বিজেপি সভাপতিকে বোঝান রাষ্ট্রপতি ভোটের জটিল পদ্ধতি।

রামনাথ কোবিন্দ

রামনাথ কোবিন্দ

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৭ ০৫:১৪
Share: Save:

যেন ছকে বাঁধা অঙ্ক। রাষ্ট্রপতি ভোটে সেই ভাবেই কৌশলী ঘুঁটি সাজিয়ে বিরোধী শিবিরকে ছত্রভঙ্গ করে দিলেন নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি অমিত শাহ।

প্রস্তুতি শুরু চার মাস আগে। বিজেপি সভাপতি ডেকে পাঠান দলের নবীন রাজ্যসভা সদস্য ভূপেন্দ্র যাদবকে। সভাপতি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতিটা বুঝতে চান। ভূপেন্দ্র সংসদ ও নির্বাচন কমিশন থেকে নথিপত্র এনে দেন। সে দিন থেকেই পড়াশুনো শুরু। ডাক পড়ে ঘনিষ্ঠ আইনজীবী বন্ধু তুষার মিত্তালের। তিনি বাড়িতে এসে বিজেপি সভাপতিকে বোঝান রাষ্ট্রপতি ভোটের জটিল পদ্ধতি।

৫২ বছরের অমিত শাহের মাথা একদম সাফ। দু’দিনেই বুঝে যান ২৯টি রাজ্যে কোন দলের কত ভোট। তাঁর মনে হয়, ঠিক ভাবে এগোলে এক লাখের ওপর ভোটে জেতা অসম্ভব নয়। দলিতদের বিষয় নিয়ে আগে থেকেই বিজেপির সমস্যা চলছিল। রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার ঘটনা থেকে সহারণপুর কিংবা উনায় দলিত নিগ্রহের ঘটনা দলকে কোণঠাসা করছিল। অমিত শাহ ভেবে ফেলেন, রাষ্ট্রপতি পদে দলিত প্রার্থী দেওয়াটা হতে পারে মাস্টার স্ট্রোক।

আরও পড়ুন:কোবিন্দের মনোনয়নে শক্তি জাহির

মোদীর কাছে দিলেন প্রস্তাবটা। দলিত প্রার্থী হিসেবে বিহারের রাজ্যপাল রামনাথ কোবিন্দের নামের প্রস্তাব লুফে নেন মোদী। তবে দু’জনেই ঠিক করেন, নামটি আপাতত কাউকেই বলার প্রয়োজন নেই। রামনাথকেও নয়! উনি রাজি হবেন, সে ব্যাপারে দু’জনেই ছিলেন নিশ্চিত।

শুরু হয় ঘর গোছানোর পালা। কারও নাম না করেই দলিত প্রার্থীর বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দলের নেতার সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনা শুরু করেন অমিত। কথা হয় নীতীশ কুমারের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীও শরদ পওয়ার, নীতীশ, পলানীস্বামী, মুলায়মের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। তবে শেষ পর্যন্ত সমস্যা ছিল শিবসেনাকে নিয়ে। মুম্বই গিয়ে উদ্ধব ঠাকরেকেও বুঝিয়ে আসেন। তবে তাঁর কাছেও রামনাথের নামটা ফাঁস করেননি।

ঘরের ভিতরেও অনেক কিছু সামলাতে হয়েছে অমিতকে। সুষমা স্বরাজ প্রার্থী হতে সক্রিয় ছিলেন। নিতিন গডকড়ী, রাজনাথ সিংহের পাশাপাশি রাম মাধবের মতো সঙ্ঘের নেতারাও তাঁকে সমর্থন করছিলেন। গডকড়ীই সুষমার নাম মোহন ভাগবতকে বলেন। অমিত শাহ সেটা বুঝেই নাগপুরে গিয়ে ভাগবতের সঙ্গে দেখা করেন। সরসঙ্ঘচালককে জানান, দল সুষমাকে সমর্থন করছে না। ভাগবত প্রস্তাব দেন, সঙ্ঘের সঙ্গে জুড়ে থাকা কাউকে রাষ্ট্রপতির প্রার্থী করা হোক। সম্মত হয়ে অমিত জানান, তাঁরা এক জন মহাদলিতকে প্রার্থী করতে চান।

বিজেপির বৈঠকে অমিত যখন কোবিন্দের নাম প্রস্তাব করেন, তখন অরুণ জেটলিও তা সমর্থন করেন। এর পিছনেও রয়েছে কৌশল। বৈঠকের ঠিক আগে সভাপতি দলের কয়েকজন নেতাকে জানান, মহাদলিত প্রার্থী করা হবে, কারও আপত্তি রয়েছে কিনা। অরুণ-রাজনাথ ছাড়া কাউকে প্রার্থীর নামটাও জানানো হয়নি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE