কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র
অমিত শাহের বাড়ির বৈঠকখানায় যে সোফায় তিনি বসেন, তার পিছনে দু’টি ছবি আছে। একটি চাণক্য, অন্যটি বিনায়ক দামোদর সাভারকরের। অমিত শাহ বারবারই বলেন, এই দুই ব্যক্তি গভীর ছাপ ফেলেছেন তাঁর জীবনে।
দিল্লিতে সেই সাভারকরকে নিয়ে দু’দিনের সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে আজ যোগ দেওয়ার কথা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য বারবার ব্রিটিশদের কাছে ক্ষমা চাওয়া বা গাঁধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে বরাবরই সরব বাম-কংগ্রেস। কিছু দিন আগেই রাহুল গাঁধী সাভারকরের বারবার ক্ষমা প্রার্থনাকে কটাক্ষ করে জনসভায় বলেছিলেন, ‘‘আমার নাম রাহুল গাঁধী, সাভারকর নয়। আমি ক্ষমা চাইব না।’’ এ জন্য বিস্তর অস্বস্তিও আছে বিজেপির। দিল্লিতে বিজেপি নেতাদের উদ্যোগে দু’দিনের সম্মেলনের উদ্দেশ্যই ছিল, সাভারকরকে নিয়ে ‘অপপ্রচার’ দূর করা। এমন এক মঞ্চও আজ এড়িয়ে গেলেন অমিত। কারণ, দিল্লির হিংসা।
বিজেপি শিবির বলছে, যে ভাবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে দিল্লির হিংসা নিয়ন্ত্রণে আসরে নামিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, হিংসা না থামানোর গোটা দায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপরে গিয়ে পড়ছে, তাতে বেজায় চটেছেন শাহ। কাল ভুবনেশ্বর যাওয়ার আগে তাই মন্ত্রক কামড়ে পড়ে ছিলেন। বিজেপি আজ দুপুরে ঘোষণা করেছিল, দুপুরে সাভারকর সম্মেলনে যাবেন শাহ। কিন্তু পরে দেখা গেল, শাহের বদলে এলেন নিতিন গডকড়ী।
মঞ্চ থেকে ঘোষণা হল, ‘‘দিল্লির পরিস্থিতি মাথায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ব্যস্ত অমিত শাহ। সে কারণে তিনি আসতে পারছেন না। ক্ষমা চেয়ে একটি বার্তাও পাঠিয়েছেন।’’ সে বার্তাতেও অমিত আশা প্রকাশ করেছেন, তাঁর ‘ব্যস্ততার সমস্যা’ নিশ্চয়ই সকলে বুঝতে পারবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে সে সময় উপস্থিত অনেকেই জানিয়েছেন, গত কালের মতো আজও একের পর এক বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অমিতের বদলে আসা গড়কড়ীও নতুন বিতর্ক বাধালেন। সাভারকরের আদর্শের কথা বলতে গিয়ে তিনি হঠাৎই সঙ্ঘের এক নেতার মন্তব্য উদ্ধৃত করে বললেন, ‘‘যে দেশে ৫১ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা হয়, সে দেশে গণতন্ত্র, সমাজবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা থাকে না। মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেই এমন পরিস্থিতি হবে। এর অনেক নজির আছে। পাকিস্তান, সিরিয়া কেমন চলছে, তা সকলের চোখের সামনে আছে।’’
শ্রোতারা গডকড়ীর মন্তব্য যে ভাল চোখে নিয়েছেন, তা নয়। হাওয়া বুঝে গডকড়ী বলেন, তিনি মুসলিম-বিরোধী নন। মুসলিম সমাজেও প্রগতিশীল, উদারবাদীরা শিক্ষার প্রসার চান। প্রশ্ন উঠেছে, দিল্লির হিংসা না হলে অমিত শাহ এসে কি এর থেকেও বেশি কিছু বলতেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy