Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
National News

মৃত্যু-আর্তনাদের মধ্যেও সেই রাতে লুঠ হয়েছিল হতাহতদের মোবাইল, টাকা, সোনাদানা!

সতের বছরের ছেলেকে হারিয়ে দিশাহারা জ্যোতি কুমারী। তাঁর অভিযোগ, ছেলে সময় গলায় সোনার চেন পরে থাকত। কিন্তু যখন মৃতদেহ সরকারি হাসপাতাল থেকে হস্তান্তর করা হয়, তখন সেই চেন উধাও।

পরিজনের চিতার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন এক ব্যক্তি। ছবি: রয়টার্স

পরিজনের চিতার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন এক ব্যক্তি। ছবি: রয়টার্স

সংবাদ সংস্থা
অমৃতসর শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮ ১০:৫৪
Share: Save:

কারও সর্বনাশ, কারও পৌষ মাস। কেউ মারা গিয়েছেন, কারও হাত পা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়েও সাহায্যের জন্য কাতরাচ্ছেন। ছুটে এসে অনেকে সাহায্যও করছেন। কিন্তু বিপর্যয়ের মধ্যেও সুযোগ সন্ধানী কেউ কেউ। মৃত আহতদের পকেট হাতড়ে বের করে নিচ্ছেন টাকা-পয়সা। খুলে নিচ্ছেন সোনার হার বা আংটি। কেউ বা হাত থেকে ছিটকে পড়া দামী মোবাইল তুলে নিচ্ছেন নিজের পকেটে।

অমৃতসরে ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর এমন ছবি হয়তো কোনও ক্যামেরায় ধরা পড়েনি, কিন্তু আহত এবং মৃতদের পরিজনদের বর্ণনায় অন্তত তেমন ছবিই ভেসে উঠেছে মানসপটে। বিপর্যয়ের মধ্যেও এমনই এক ছিনতাইয়ের চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছিল বলে অভিযোগ। একাধিক মৃত ও আহতদের পরিবারের লোকজন অভিযো করেছেন, দুর্ঘটনার সময় তাঁদের নিকটজনদের মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে নেওয়া হয়েছে। টাকা-পয়সা তো বটেই খোয়া গিয়েছে সোনাদানা, মোবাইলও।

সতের বছরের ছেলেকে হারিয়ে দিশাহারা জ্যোতি কুমারী। তাঁর অভিযোগ, ছেলে সময় গলায় সোনার চেন পরে থাকত। কিন্তু যখন মৃতদেহ সরকারি হাসপাতাল থেকে হস্তান্তর করা হয়, তখন সেই চেন উধাও। জ্যোতি কুমারীর প্রশ্ন, ‘‘২০ হাজার টাকা দামের মোবাইল না হয় ছিটকে যেতে পারে, কিন্তু পকেটের মানিপার্স, সোনার চেন কোথায় গেল?’’

কমল কুমারের বছর উনিশের ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে রেল লাইনের ধারে ওই দশেরার অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন। ফিরেছেন সেই বন্ধুদেরই কাঁধে চড়ে, লাশ হয়ে। কিন্তু তাঁর দামি মোবাইলের কোনও হদিশ নেই, দাবি কমল কুমারের।

আরও পড়ুন: দুর্ঘটনার দায় নিল না কেউই! ক্ষোভে ফুঁসছে অমৃতসর

এঁদের না হয় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু আহতরাও ছাড় পাননি এই দুষ্টচক্রের হাত থেকে। ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে রাবণ পোড়ানো দেখতে গিয়েছিলেন দীপক নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। মেয়ে ফেরেনি। বাবা-ছেলে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন হাসপাতালে। তার মধ্যেও হাসপাতালেই দীপক জানালেন, ‘‘ট্রেনের ধাক্কায় নড়াচড়া তো দূর, সাহায্যের জন্য চিৎকারও করতে পারছিলাম না। তার মধ্যেই এক জন এসে পকেট হাতড়ে মোবাইল, টাকা-পয়সা যা ছিল, সব নিয়ে চলে গেল।’’

চারদিকে কার্যত লাশের স্তূপ। বাঁচার জন্য আর্তনাদ, গোঙানি, চিৎকার। তার মধ্যেও যে কেউ এত নিষ্ঠুর হতে পারে, তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না মৃতদের পরিজন এবং আহতরা। আবার দুর্ঘটনার পরও সেলফি, ভিডিয়ো তোলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এমনকী, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরাও এ নিয়ে মুখ খুলেছেন।

আরও পড়ুন: ‘৫০০ ট্রেন গেলেও লাইন থেকে সরানো যাবে না আমাদের’

জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা টুইটারে লিখেছেন, কি ভয়ানক অমানবিক দৃশ্য! দুর্ঘটনার পরও লোকজন দাঁড়িয়ে ছবি, ভিডিয়ো, সেলফি তুলছেন! প্রায় একই রকম টুইট করেছেন আম আদমি পার্টির নেত্রী প্রীতি শর্মা মেনন-ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE