সিরাস (বাঁ দিকে) ও তাঁর ভূমিকায় মনোজ বাজপেয়ী
সিরাস বেঁচে থাকলে আজ সে-ই হত পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ! সমকামিতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে এমনই প্রতিক্রিয়া জানালেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রধান, সিরাসের বন্ধু, অধ্যাপক তারিক ইসলাম। অধ্যাপক শ্রীনিবাস রামচন্দ্র সিরাসের জীবন ও রহস্যমৃত্যু নিয়েই তৈরি হয়েছিল হিন্দি ছবি ‘আলিগড়’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সমকামী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ তুলে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাসপেন্ড করা হয়েছিল আধুনিক ভারতীয় ভাষা বিভাগের অধ্যাপক সিরাসকে। অভিযোগ, সিরাসের ঘরে জোর করে ঢুকে এক রিকশাচালকের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত ভিডিয়ো করা হয়। তার পরেই সাসপেনশন।
১ এপ্রিল সিরাসের আবেদন মেনে এলাহাবাদ হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই নির্দেশ স্থগিত করে। ৭ এপ্রিল রহস্যজনক ভাবে মারা যান সিরাস। তাঁর পরিজনেরা অভিযোগ করেছিলেন, পুলিশ আত্মহত্যার কথা বললেও তাঁকে খুন করা হয়েছে। ওই ঘটনাকে ভিত্তি করেই হনসল মেটা তৈরি করেন ‘আলিগড়’, যাতে সিরাসের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মনোজ বাজপেয়ী।
আরও পড়ুন: সমকাম অপরাধ নয়, ঐতিহাসিক রায় শীর্ষ আদালতের
সিরাসের লড়াইয়ের সঙ্গী তারিক বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ। তাঁরা বহু মানুষের নিজের পছন্দ অনুযায়ী, সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।’’ সমকামিতার অভিযোগ ওঠার পরে যে মানসিক নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, তা দেখেছেন তারিক। তিনি বললেন, ‘‘সিরাস কৈশোর থেকেই জানত ও সমকামী। কিন্তু কাউকে জানাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ৬০ বছর বয়স পেরিয়ে ও সেই পরিচয় জানায়। শুরু হয় মানসিক অত্যাচার।’’ দিল্লি হাইকোর্টে এবং সুপ্রিম কোর্টে সমকামিতা মামলার আবেদনকারী নাজ় ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অঞ্জলি গোপালনের কথায়, ‘‘অধ্যাপক সিরাসের মতো একজন যে আত্মহত্যা করতে পারেন, তা বিশ্বাসই হয় না।’’
সুপ্রিম কোর্টের রায় সাহস দিয়েছে সিরাসের সঙ্গী সেই রিকশাচালক, ইরফানকে। এ দিন তিনি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, তাঁকে অপরাধীর মতো নির্যাতন সইতে হয়েছে। তিনি গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন একবার। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘হ্যাঁ, আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এখন কি আমি সিরাসের সঙ্গী হিসেবে প্রাপ্র্য অধিকার পাব?’’
আরও পড়ুন: হয়তো দেরি হবে, জয় তবু আসবে
ইরফানের মতো আরও অনেকের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি তুলেছেন ‘আলিগড়’ ছবির সেই সাংবাদিক। রাজকুমার রাও যাঁর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, বাস্তবের সেই সাংবাদিক দীপু সেবাস্তিয়ান এডমন্ড এখন পেশার সূত্রে চেন্নাইয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘দিল্লি হাইকোর্টের রায় সত্ত্বেও সিরাসের সঙ্গে এমন ঘটেছিল। এখন সু্প্রিম কোর্টের নির্দেশের পর অনেকেই নিজেদের সমকামী সত্তা খোলাখুলি জানাবেন। তাঁদের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে আইন আনা দরকার।’’
সিরাসের আর এক সহকর্মী অধ্যাপক টি এন সতীশনেরও বক্তব্য, ‘‘আদালতের রায়ের পরেই যে সমাজ এক নিমেষে বদলে যাবে, তা নয়। তবে কিছু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy