আনন্দীবেন পটেল
নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের চাপে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন আনন্দীবেন পটেল। নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম শীঘ্রই ঘোষণা করবেন বিজেপি নেতৃত্ব।
সামনের বছরেই বিধানসভা ভোট গুজরাতে। কয়েক মাস আগে দলের নেতা ওম মাথুরকে পাঠিয়ে সেখানে একটি সমীক্ষা করানো হয়। তাতে দেখা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাঁর হাতে রাজ্যপাট ছেড়ে দিয়েছিলেন মোদী, সেই আনন্দীর জমানায় বিজেপির জনসমর্থনে ভাটা পড়েছে বিস্তর। পটেল-আন্দোলন থেকে দলিত-বিতর্কে লাগাতার বদনাম হয়েছে রাজ্যের। জমি-দুর্নীতিতে নাম জড়ানো আনন্দীবেনকে নিয়ে অসন্তোষ বেড়েছে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও। ফলে মে মাসেই তাঁকে দিল্লিতে ডেকে প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহ সরে যাওয়ার বার্তা দেন। স্থির হয়, নভেম্বরে আনন্দী ৭৫ বছরে পা দিলে তাঁকে সরানো হবে। কিন্তু উনার ঘটনাকে নিয়ে দলিত-বিতর্ক ফের মাথা চাড়া দেওয়ায় আগেভাগেই সরতে হল আনন্দীকে। নিজেই সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করে বিদায়কে ‘সম্মানজনক’ করলেন তিনি।
আনন্দীবেন নিজের মুখে অবশ্য সরে দাঁড়ানোর পিছনে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন তাঁর বয়সকে। বিজেপিতে ৭৫ বছরের বেশি বয়সের কাউকে পদে রাখা হবে না, এমন এক অঘোষিত নিয়মকে সামনে রেখেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারকে বিদায় জানালেন। প্রথমে ফেসবুকে এবং পরে একটি ভিডিও বার্তায় সোমবার আনন্দীবেন বলেন, এ বছরের নভেম্বরে তিনি ৭৫ বছরে পা দিচ্ছেন। সামনের বছরের শেষে ভোট। আর, জানুয়ারিতে ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এর মহা শিল্প-সম্মেলন। তার আগে নতুন মুখ্যমন্ত্রী যাতে হাতে আরও সময় পান, তার জন্য জন্মদিনের দু’মাস আগেই তিনি অবসরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ তার পরেই দিল্লিতে বলেন, ‘‘এর আগেও দু’বার উনি পদ ছাড়ার কথা বলেছিলেন। আজ সকালেও তাঁর চিঠি পেয়েছি। সংসদীয় বোর্ডে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।’’
এখন রাজ্যে বিজেপি সভাপতি বিজয় রূপাণি কিংবা নিতিন পটেলদের মধ্যে কাউকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিতে হবে মোদী-অমিতকে। বিজেপি সূত্রের মতে, এগিয়ে রয়েছেন বিজয়ই। যাঁর সঙ্গে সব পক্ষের সুসম্পর্ক রয়েছে। নিতিনকে দিয়ে পটেল-আন্দোলনের সমস্যা মেটানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সৌরভ পটেল, বিধানসভা স্পিকার গণপতসিন ভাসাভাও দৌড়ে থাকতে চাইছেন। কিন্তু বিজেপি নেতারা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী এমন কাউকে করা হবে, যাঁর উপরে মোদীর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। কারণ, যে গুজরাতকে মোদী দেশ ও দুনিয়ার কাছে তুলে ধরে আজ প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে, সে রাজ্য এখন বিতর্কের জন্য শিরোনামে। এই ভাবমূর্তির আমূল বদল করাই নতুন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
বিজেপি এখন দলিতদের কাছে টানতেও মরিয়া। সে কারণে দলের মধ্যে ‘দলিত-বিরোধী’ মুখ হয়ে যাওয়া নেতাদের বদল করা হচ্ছে। কেন্দ্রে স্মৃতি ইরানিকে সরানোর পিছনেও সেটা ছিল অন্যতম কারণ। এখন গুজরাতে দলিত নিগ্রহ সামাল দিতে না-পারায় সরতে হল আনন্দীবেনকেও। গুজরাতে কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা গুরুদাস কামাট অবশ্য এখনই প্রশ্ন তুলে রেখেছেন, আনন্দীকে ভবিষ্যতে রাজ্যপাল পদ দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে না তো? আনন্দীর পদত্যাগকে বিজেপির স্টান্টবাজি ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে রাজি নন হার্দিক পটেলও। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, পটেল-আন্দোলন চলবেই! আর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল দাবি করেছেন, তাঁদের চাপের জন্যই নাকি এই রদবদল। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব এ সবে কান না দিয়ে গুজরাতের পুরনো গৌরব ফেরানোতেই মন দিতে চান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy