বঙ্গ সম্মেলনের মঞ্চে সাংসদ সুস্মিতা দেব। রবিবার সুদীপ সিংহের তোলা ছবি।
জাতীয় নাগরিক পঞ্জী নিয়ে ক্ষোভের সুর শোনা গেল শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেবের কথাতেও। আজ ‘বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের’ অধিবেশনে তিনি বললেন, “সন্তোষমোহন দেবের মেয়ে না হলে আমাকেও হয়তো ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের নথির জন্য ঘুরতে হতো। খুঁজে দেখতে হতো, আমার জন্মসাল ১৯৭২-এর আগের কাগজ বাবা-মা যত্ন করে রেখেছেন কি না।”
শিশুমেলা, লোকসঙ্গীত, সাহিত্য বাসর, আলোচনা, প্রদর্শনী, বইমেলা, বিশেষ বক্তৃতা, বিশেষ পত্রিকা প্রকাশ, দেওয়াল পত্রিকা, স্মরণিকার উন্মোচন, নাচ-গান, যাত্রাপালাতিন দিন ধরে সম্মেলনে সবই ছিল। কিন্তু উৎসবের মেজাজে কোথাও মিশেছিল জাতীয় নাগরিক পঞ্জী নবীকরণ ও অসমীয়ার সংজ্ঞা নিয়ে সাধারণ বঙ্গভাষীদের আশঙ্কা। এ দিন বঙ্গ সম্মেলনের প্রকাশ্য অধিবেশনে ওই বিষয়টিই বিশেষ গুরুত্ব পায়। প্রস্তাব নেওয়া হয় বরাক বঙ্গ আইনি শাখা তৈরি করবে। তাদের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি হুঁশিয়ারির সুরে প্রশাসনকে জানানো হয়, বরাক উপত্যকার মানুষের সঙ্গে কথা না বলে অসমীয়ার সংজ্ঞা চূড়ান্ত করলে পরিণাম ভাল হবে না। ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার জন্যই যে অসম কার্যত বিভক্ত হয়েছে, সে কথা স্মরণ করিয়ে দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত।
সাংসদ সুস্মিতা জানান, সন্তোষমোহন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন বলে হয়তো তাঁর নাগরিকত্ব প্রমাণে কাগজপত্রের অভাব হবে না। তা না হলে তাঁকেও দেশছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় ভুগতে হতো। এ নিয়ে তিনি সোচ্চার হতে চান। সুপ্রিম কোর্টে লড়তেও প্রস্তুত। তাঁর প্রশ্ন, “ভারতের অন্য কোথাও নাগরিকত্ব প্রমাণের কথা বলা না হলেও শুধু অসমের বঙ্গভাষীদের কেন তা বলা হচ্ছে! এটা অপমানজনক।” সুস্মিতাদেবীর বক্তব্য, সরকার অনুপ্রবেশকারী খুঁজে বের করুক, কিন্তু ভারতীয়দের নাগরিকত্ব প্রমাণের নামে কাউকে হেনস্তা যেন না করা হয়। বরাক বঙ্গকে এ বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান সুস্মিতাদেবী। বাংলাদেশি চিহ্নিত হওয়ার পর তাঁদের সে দেশের সরকারের হাতে তুলে দিতে দুই দেশের সরকারের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তির প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি তুলে ধরেন।
এ দিন বদরুজ্জামান চৌধুরীকে ভুবনেশ্বর বাচস্পতি স্মৃতি পুরস্কার, জিতেন নাগকে রামকুমার নন্দী স্মৃতি পুরস্কার এবং সুবীর করকে প্রেমেন্দ্রমোহন গোস্বামী স্মৃতি ভাষা অকাদেমি পুরস্কার প্রদান করা হয়। অন্যান্য ভাষাভাষী লেখকদের মধ্যে ব্রজেন্দ্র সিংহকে অনুরূপা বিশ্বাস স্মৃতি পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। প্রকাশ্য সভায় ভগীরথ মিশ্র, জাহিরুল হাসান, নীতীশ ভট্টাচার্য, তৈমুর রাজা চৌধুরী বক্তৃতা দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy