ক্ষতবিক্ষত: চিকিৎসাকেন্দ্রে এক কৃষক। সোমবার মুম্বইয়ে। ছবি: এএফপি
প্রায় পনেরো বছর মুম্বইয়ে আছি। বিখ্যাত ‘মুম্বই স্পিরিটে’র সাক্ষী থেকেছি অনেক বার। তা সে বন্যা হোক বা জঙ্গি নাশকতা! দেখেছি কী ভাবে মানুষ এগিয়ে আসে অন্যের পাশে। আজ আবার দেখলাম, কিন্তু উপলক্ষটা একদম আলাদা!
নাশিক থেকে ১৮০ কিলোমিটার হেঁটে ৩৫ হাজার কৃষক আজাদ ময়দানের দখল নিচ্ছেন, এমন দৃশ্য রোজ তৈরি হয় না। বাণিজ্য রাজধানী মুম্বই আজ সেই কৃষকদের জন্য পথে নামল। মুখে তুলে দিল জল আর খাবার, হাওয়াই চটি এগিয়ে দিল ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া ধুলোমাখা পা-গুলোর জন্য।
রবিবারই মিছিল পৌঁছে গিয়েছিল শহরতলি সায়নে। উদ্যোক্তারা ঠিক করেছিলেন, সোমবার সেখান থেকে হেঁটে বিধানসভা অভিযান করবেন। কিন্তু এত মানুষের মিছিল রাস্তায় নামলে সপ্তাহের প্রথম দিন বাণিজ্যনগরী অচল হয়ে যেত। তাই প্রশাসন বলেছিল, দিনের বেলা শহরে মিছিল ঢুকতে দেওয়া হবে না।
ওঁরা মেনে নিয়েছিলেন। রবিবার মাঝরাত পেরোতেই মিছিল হাঁটতে শুরু করেছিল আবার। কুরলা, মাহিম, দাদার, লালবাগ, বাইকুল্লা, পারেল পেরিয়ে দক্ষিণ মুম্বইয়ের আজাদ ময়দান। নীরবে হাজার হাজার পা ভোরের আলো ফোটার আগেই দখল নিল ময়দানের। সেই ভোর রাতেও বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে এগিয়ে দিলেন জল, খাবার। খাবার মানে বিস্কুট, পোহা। সকালে মুম্বইয়ের বড়া-পাও।
আরও পড়ুন: চাষিদের লড়াইকে সমর্থন জানাল বলিউডও
সোমবার অফিসকাছারি, স্কুল পরীক্ষাকেন্দ্র— কোথাও যেতে মুম্বইবাসীর অসুবিধা হয়নি। আমি থাকি কান্ডিভিলির চারকোপে। কাজের জন্য যেতে হয়েছিল ময়দানের কাছে। প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তায় কোনও যানজট নেই। মাস কয়েক আগে হাজার দলিতদের মিছিল মুম্বই শহরে এলে যানজট হয়েছিল। আর এ দিন মিছিল যে মুম্বই শহরে ঢুকেছে, অনেকে টিভি দেখে তবে বুঝেছেন।
তবে যাঁরা চোখের সামনে দেখেছেন সে মিছিল, তাঁরা হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি। ময়দানে খাবার নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন দাদার আর কোলাবার ডাব্বাওয়ালারা। তরুণী সাংবাদিক প্রাচী সালভে টুইট করে দিলেন চটি সংগ্রহের জন্য। যাতে ওঁদের খালি পায়ে ফিরতে না হয়। ২০০৫ সালের বন্যায় এই ভাবেই শহরটা পাশে দাঁড়িয়েছিল দুর্গতদের। এ দিন মুম্বই বলল, যাঁরা চাষ করেন বলে আমরা সারা বছর খেতে পাই, আজ আমরা তাঁদের খাওয়াব। ভারতের হাত ধরল ইন্ডিয়া, আরব সাগরের তীরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy