Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অসহিষ্ণুতার নিন্দায় এ বার সরব জেটলি

দাদরি থেকে মুম্বই হয়ে কাশ্মীরের পরে এ বার পঞ্জাব। একের পর এক অসহিষ্ণুতার ঘটনায় পাঁচ দিনেই সুর বদলে গেল নরেন্দ্র মোদী সরকারের দু’নম্বর মুখ অরুণ জেটলির! দেশ জোড়া ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রশ্নে দীর্ঘদিন নীরব থাকার পরে বিরোধী তোপের মুখে গত সপ্তাহেই প্রথম মুখ খুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৪৭
Share: Save:

দাদরি থেকে মুম্বই হয়ে কাশ্মীরের পরে এ বার পঞ্জাব। একের পর এক অসহিষ্ণুতার ঘটনায় পাঁচ দিনেই সুর বদলে গেল নরেন্দ্র মোদী সরকারের দু’নম্বর মুখ অরুণ জেটলির!

দেশ জোড়া ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রশ্নে দীর্ঘদিন নীরব থাকার পরে বিরোধী তোপের মুখে গত সপ্তাহেই প্রথম মুখ খুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দাদরি-কাণ্ড বা গুলাম আলির বিরুদ্ধাচরণের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ ও ‘অনভিপ্রেত’ বলে ব্যাখ্যা করে মোদী জানিয়েছিলেন, এতে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। উল্টে এ নিয়ে‌ অকারণ রাজনীতি করার আঙুল তুলেছিলেন বিরোধীদের দিকে। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে জেটলিও জানিয়েছিলেন, দেশে আদৌ কোনও অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ নেই। ‘বানানো বিদ্রোহ’টা আসলে বিজেপির বিরুদ্ধে নীতিগত অসহিষ্ণুতা। আজ তিনিই বিক্ষোভের নামে গুন্ডামির সমালোচনায় সরব হলেন!

দাদরি, মুম্বই, কাশ্মীর, পঞ্জাব— অসহিষ্ণুতার খণ্ড চিত্র এখন গোটা দেশেই। এক ট্রাক চালকের মৃত্যুর প্রতিবাদে গত দু’দিন ধরে থমথমে কাশ্মীর। তার মধ্যেই আজ তাঁদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অবমাননার অভিযোগ তুলে উত্তাল হয়ে উঠেছে পঞ্জাবের শিখ সমাজ। পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে দু’জন বিক্ষোভকারীর। আহত বহু। পরিস্থিতি সামলাতে অমৃতসর, লুধিয়ানা, জালন্ধরের মতো শহরগুলিতে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পঞ্জাব প্রশাসন ঘটনার পিছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে পরোক্ষে অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে। পঞ্জাব মন্ত্রিসভা ঘটনার নিন্দা করে আজ একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, রাজ্যের শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতেই এই গভীর ষড়যন্ত্র। পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। কিন্তু যে ভাবে হিংসা ও অসহিষ্ণুতার ঘটনা গোটা দেশে ছড়াতে শুরু করছে, তাতে অস্বস্তি ক্রমশ বাড়ছে কেন্দ্রের। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সরকারের প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়েও।

প্রধানমন্ত্রী মুখ খোলার দিন তিনেকের মধ্যেই দলের তিন কট্টর নেতাকে ডেকে রীতিমতো শাসন করেছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। আর আজ গোটা দেশে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার ঘটনাকে যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করে জেটলি বলেন, ‘‘ভারতের মতো এত বড় দেশে ভিন্ন মত থাকতেই পারে। কিন্তু কোনও বিষয়ে সভ্য ভাবেও প্রতিবাদ করা যায়।’’ শরিক শিবসেনা বা সঙ্ঘ পরিবার যে ভাবে বিরোধিতা করছে, তার সমালোচনা করতেও ছাড়েননি জেটলি। দেরিতে হলেও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে সরকার তথা দলের শীর্ষ স্তর থেকে বার্তা দিয়ে বিজেপি শিবির এখন বোঝাতে চাইছে, দল কখনই এ ধরনের জঙ্গি মনোভাব বা উস্কানিকে সমর্থন করে না।

বিহারের অর্ধেকেরও বেশি আসনে ভোটপর্ব এখনও বাকি। শুরু থেকেই বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ওই নির্বাচনে ফায়দা পেতে ধারাবাহিক ভাবে মেরুকরণের রাজনীতি করছে বিজেপি। গেরুয়া-শিবির অবশ্য আগাগোড়াই বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু ক্রমশ পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে বসায় হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছে না বিজেপি। রাজনৈতিক শিবিরের মন্তব্য, বিহারে এখনও তিন দফার নির্বাচন বাকি। বিশেষ করে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত উত্তর বিহারে নির্বাচন এখনও হয়নি। যে ভাবে মেরুকরণের রাজনীতির অভিযোগ উঠছে বিজেপির বিরুদ্ধে, তাতে ওই এলাকায় দলের ফল খারাপ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আজ কী বলেছেন জেটলি? দাদরি থেকে গুলাম আলি, সুধীন্দ্র কুলকার্নি থেকে জম্মু-কাশ্মীরের বিধায়ক রশিদের মুখে কালি লেপার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের ছবি ক্রমশ মলিন হচ্ছে বলেই মনে করছেন জেটলি। বিশেষ করে যে ভাবে সাহিত্যিক থেকে শুরু করে শিক্ষিত সমাজ প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছে, তাতে যে বিজেপি অস্বস্তিতে, তা জেটলির কথায় স্পষ্ট। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কথায়, ‘‘প্রতিবাদ হতেই পারে। কিন্তু তা বলে প্রতিবাদের ভাষা কখনও এ ধরনের গুন্ডামি হতে পারে না। ’’ সুধীন্দ্র কুলকার্নি বা গুলাম আলি প্রশ্নে শিবসেনার প্রতিবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘শিষ্টাচারের বিষয়টি সবার জন্যই প্রযোজ্য।’’

জেটলি যা-ই বলুন, কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার মতে গোটাটাই লোক দেখানো। তাঁর দাবি, শিবসেনা বা সঙ্ঘ পরিবার মেরুকরণের রাজনীতি থেকে সরে আসবে, এটা ভাবাই ভুল। এক দিকে মোদী-অমিত শাহ মেরুকরণের রাজনীতি করবেন, অন্য দিকে জেটলি উদারতার বার্তা দেবেন। তা ছাড়া মেরুকরণের রাজনীতির পিছনে বিহারের নির্বাচন রয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, জেটলির এ দিনের বার্তার পিছনে রয়েছে অর্থনীতির বেহাল দশা থেকে মুদ্রাস্ফীতিতে রাশ টানা— সব ক্ষেত্রেই সরকারের ব্যর্থতা থেকে নজর ঘোরানোর কৌশল। বিরোধীদের বক্তব্য, যে ভাবে দেশে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা যে বিনিয়োগের আদর্শ পরিবেশের পরিপন্থী, তা বুঝেছেন জেটলি। সেই কারণেই দাদরির ঘটনার পরে মুখ খুলেছিলেন তিনি। আজ অসহিষ্ণুতা প্রশ্নে তাঁর বক্তব্য, ‘‘যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের আত্মসমালোচনা করা উচিত।’’

প্রথমে প্রধানমন্ত্রী, তার পর অমিত শাহ, এ বার জেটলি। অসহিষ্ণুতা প্রশ্নে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন তিন বড় নেতাই। কিন্তু তাতেও কি পরিস্থিতি বদলাবে? বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, সরকারের সর্ব্বোচ্চ শিবির থেকে বিক্ষোভকারীদের প্রতি বার্তা স্পষ্ট— অসহিষ্ণুতার নামে এই ধরনের বিক্ষোভ বা গুন্ডামি সরকার কখনই মেনে নেবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE