পারাপারের ভরসা এখন নৌকাই। অসমের যোরহাটে। ছবি: পিটিআই।
বন্যা ও ভূমিক্ষয়ে জেরবার অসম।
আজ ধুবুরির বিলাসিপাড়ায় একটি যাত্রীবাহী গাড়ি জলের স্রোতে ভেসে যায়। সন্ধে পর্যন্ত ওই গাড়িতে সওয়ার ৫ শিশু-সহ কয়েক জন যাত্রীর খোঁজ মেলেনি। জলে ভেসে গিয়েছেন এক এসএসবি জওয়ানও। বন্যার জল ঢুকছে কাজিরাঙা ও মানস জাতীয় উদ্যানে। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি বৃষ্টিতে এক দশকের রেকর্ড ভেঙেছে। মৌসিনরামে গত তিন দিনে বৃষ্টি হয়েছে দেড় হাজার মিলিমিটারের বেশি। উত্তর-পূর্বের বন্যা নিয়ে খোঁজখবর করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। উজানি অসমে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু।
অসমে ১৯টি জেলা বন্যা কবলিত। প্রায় ৫ লক্ষ ৭৬ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। ১৭৭টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ১ লক্ষ ২২ হাজার ৩২২ জন। সরকারি হিসেবে, এখনও পর্যন্ত বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৩ জন। পুলিশ জানায়, গত রাতে ধুবুরির নয়াহাট থেকে হাজারিপাড়া যাওয়ার পথে বিলাসিপাড়ার আলেংমারিতে বরযাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার সময় একটি গাড়ি গৌরাঙ নদীর জলের তোড়ে ভেসে যায়। স্থানীয় মানুষ ৪ মহিলা ও ১ পুরুষ যাত্রীকে উদ্ধার করতে পারলেও, জনা দশেক যাত্রীর সন্ধান মেলেনি। এ দিন বিকেলে আরিফুল হক নামে এক শিশুর দেহ উদ্ধার হয়েছে। কোকরাঝাড়ে এক এসএসবি জওয়ান ভেসে গিয়েছেন। মানস ও কাজিরাঙায় বন্যার জল ঢোকায় প্রাণীরা উঁচু জমির খোঁজে জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসছে। সে দিকে তাকিয়ে বুড়াপাহাড় থেকে বোকাখাট পর্যন্ত ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। গাড়ির গতিবেগ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নামনি অসমের গোয়ালপাড়া, কোকরাঝাড়, চিরাং, বঙাইগাঁওয়ের অবস্থা শোচনীয়। বরাকে হাইলাকান্দিতে ১৩ নম্বর জাতীয় সড়ক বিচ্ছিন্ন। সেখানে চলছে নৌকা। কোকরাঝাড়ে ভাতারমারির কাছে বাঁধ ভেঙে গৌরাঙ নদী কোকরাঝাড় শহরের মধ্যে দিয়ে বইছে। ভুটান থেকে আসা গোঙ্গিয়া, হেল, স্বরমাঙ্গা, সরলাবান্ধা, লঙ্গা, গৌরাঙ, চম্পামতী, আই, বেকি নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বেলতলিতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক বিচ্ছিন্ন। নামনি অসমের জেলাগুলির বিভিন্ন অংশে কালভার্ট ভেসে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। উজানিতেও একই অবস্থায়। মাজুলি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। করিমগঞ্জে কুশিয়ারা নদী বিপদসীমার উপরে বইছে। বরাকে বরাক ও কাটাখালের জল বাড়লেও বিপদসীমা ছোঁয়নি।
অরুণাচলে বৃষ্টিতে শোণিতপুর ও ধেমাজি জেলার বন্যা ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে। সেনাবাহিনী নামনি অসমে ত্রাণ চালাচ্ছে। গত রাতে সেনারা আড়াই হাজার মানুষকে উদ্ধার করে। সেনাবাহিনীর চিকিৎসকরা অস্থায়ী শিবিরে বন্যার্তদের শুশ্রূষা করছেন।
এ দিন অসমের জলসম্পদমন্ত্রী বসন্ত দাস ও অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সুভাষচন্দ্র দাস, এম জি ভি কে ভানুর সঙ্গে বৈঠকে বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। তিনি অভিযোগ করেন, গত বছর বন্যায় রাজ্য কেন্দ্রের কাছে আড়াই হাজার কোটি টাকা চাইলেও, কেন্দ্র ৪১৪ কোটি টাকা দেবে বলেছিল। তার মধ্যে ৩৮৭ কোটি টাকার অনুমোদন মিললেও তা এখনও আসেনি।
মেঘালয়েও বৃষ্টির তোড় থামছে না। পূর্ব খাসি পাহাড়ের মৌসিনরামে তিন দিনে ১৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যে ১৯ অগস্ট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭৪৫.২ মিলিমিটার। সোহরা বা চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ৪৭১.৭ মিলিমিটার।
অরুণাচলের নামচিক নদী বিপদসীমা ছাড়িয়ে বইছে। তাতে ডুবেছে জয়রামপুর। ১৯৯৫ সালে হড়পা বানের পর কখনও চাংলাং জেলার জয়রামপুরে বন্যা হয়নি। সেখানকার পুলিশ কলোনি, প্রেম নগর, নিউ খামডু, ১৬ মাইল জলের তলায়। এ দিন কিরেণ রিজিজু হেলিকপ্টারে অরুণাচলের পাসিঘাট ও উজানি অসমের বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন। শিলঙে তিনি জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় এনডিআরএফ-এর পরিকাঠামো আরও উন্নত করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy