Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বৃদ্ধের নাগরিকত্ব বাঁচাল ৬৭ বছরের পুরনো সার্ভিস বুক!

সরকারি অফিসে কোণে ডাঁই হয়ে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত নথি খুবই পরিচিত দৃশ্য। চরম অবহেলায় বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা ওই ‘আবর্জনার’ স্তূপ থেকে খুঁজে পাওয়া ৬৭ বছরের পুরনো একটি সার্ভিস বুক-ই শেষ পর্যন্ত নাগরিকত্ব রক্ষা করল এক নবতিপর বৃদ্ধের।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৪০
Share: Save:

সরকারি অফিসে কোণে ডাঁই হয়ে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত নথি খুবই পরিচিত দৃশ্য। চরম অবহেলায় বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা ওই ‘আবর্জনার’ স্তূপ থেকে খুঁজে পাওয়া ৬৭ বছরের পুরনো একটি সার্ভিস বুক-ই শেষ পর্যন্ত নাগরিকত্ব রক্ষা করল এক নবতিপর বৃদ্ধের।

অধুনা অসমের বাসিন্দা শচীন্দ্রকুমার বিশ্বাস এক সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারী ছিলেন। নাগরিক পঞ্জিকরণ (এনআরসি)-এর সময় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেই নিয়োগপত্র পেশ করেছিলেন তিনি। সেই নথি যাচাইয়ের জন্য এ রাজ্যে পাঠিয়ে দেন এনআরসি কর্তৃপক্ষ। নিয়োগপত্র অনুসারে ১৯৫১ সালের ২৫ অক্টোবর শচীন্দ্রবাবুকে ‘আর্টিজেন অ্যাসিস্ট্যান্ট, টেক্সটাইল ডেমনস্ট্রেশন পার্টি’ হিসেবে নিয়োগ করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ। কিন্তু সেই নথির সত্যাসত্য এত দিন যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কারণ, প্রথমত, ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজের অস্তিত্বই এখন আর নেই। কালক্রমে তা ভেঙে তৈরি হয়েছে শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, বস্ত্রের মতো দফতর। দ্বিতীয়ত, শচীন্দ্রবাবু ১৯৮৭ সালে অবসর নেন। অবসরের তিন দশক পরে নিয়োগ সংক্রান্ত নথি সংরক্ষণের কোনও বিধান আইনে নেই। এই ধরনের নথি হয় নষ্ট করে ফেলা হয়, না হয় কালের নিয়মে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে যাচাই না-হওয়া নথি এনআরসি কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন। আর ঘোর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল শচীন্দ্রবাবুর ভবিষ্যৎ নিয়ে।

কিন্তু সম্প্রতি রাজ্য প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, এনআরসি কর্তৃপক্ষ যে নথি পাঠাবেন, তা একবারে যাচাই করা না-গেলে সঙ্গে সঙ্গে ফেরত পাঠানো হবে না। বরং আরও কিছুটা সময় নিয়ে খোঁজ চালানো হবে। সেই কাজ করতে গিয়েই নব মহাকরণের নথি বোঝাই একটি ঘর থেকে সম্প্রতি পাওয়া গিয়েছে শচীন্দ্রবাবুর সার্ভিস-বুক। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘জমি সংক্রান্ত নথি চিরকালের জন্য সংরক্ষণ করতে হয়। কিছু নথি তিন বছর পর্যন্ত রেখে দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিছু নথির সংরক্ষণের সময়আরও কম। কোনও কর্মচারীর অবসরের কয়েক বছর পরে প্রয়োজন আর থাকে না বলে সার্ভিস বুকের মতো নথি সংরক্ষণ করা হয় না। সে দিক থেকে শচীন্দ্রবাবুর সার্ভিস বুক খুঁজে পাওয়াটা খুবই ব্যতিক্রমী।’’

সেই সার্ভিস-বুক বলছে, ১৯২৭ সালের ১ ডিসেম্বর শচীন্দ্রবাবুর জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। সেখানকার জেলা বয়ন বিদ্যালয় (ডিস্ট্রিক্ট উইভিং স্কুল) থেকে হস্তচালিত বয়ন শিল্পের উপরে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এর পর ১৯৪৮ সালে কারিগরি শিক্ষার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন হুগলির শ্রীরামপুরের টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট থেকে। ১৯৫১ সালে সরকারি কাজে যোগ দেওয়ার সময় তাঁর মূল বেতন ছিল ৪০ টাকা। চাকরির প্রথম দিকে তিনি কাজ করতেন অবিভক্ত বর্ধমান জেলার অন্ডালে। তার পর চলে যান কোচবিহারে। অবসর নেওয়ার পর থেকে তিনি পাকাপাকি ভাবে অসমের বাসিন্দা।

শচীন্দ্রবাবুর সার্ভিস বুক কালক্ষেপ না-করে এনআরসি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন ৯১ বছরের বৃদ্ধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assam NRC Assam NRC Controversy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE