ছবি: সংগৃহীত।
নথিপত্র সংগ্রহেই গরু-ছাগল বিক্রি হয়ে গিয়েছে। উকিলের খরচ জোগাতে খুইয়েছেন বাড়ির বহু জিনিসপত্র। চা বাগান শ্রমিক আদালতের প্রতি হাজিরায় ২-৩ হাজার টাকা কোথা থেকে জোগাবেন! শেষ পর্যন্ত নিজেকে ভাগ্যের হাতেই সঁপে দিয়েছিলেন হাইলাকান্দি জেলার মোহনপুরের শুকদেব রী। ভাগ্যদেবী তাঁর প্রতি প্রসন্ন নন। নিজেকে ভারতীয় প্রমাণের যাবতীয় নথি তিনি আদালতে জমা করেছিলেন। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের সদস্য সে সব দেখতেও চাননি। জেরার দিনে অভিযুক্তকে না পেয়ে একতরফা ভাবে তাঁকে বিদেশি বলে রায় দেন। সেটা ২০১৬ সালের ১৭ মার্চ। তিন মাসের মাথায় ৩ জুন পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে আনে। ঢুকিয়ে দেয় শিলচর ডিটেনশন ক্যাম্পে (আসলে শিলচর সেন্ট্রাল জেল)।
তিন বছরের বেশি সময় ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকলে তাদের জামিনে মুক্তির বিষয়ে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের জেরার তারিখ যিনি জানতে পারেন না, একতরফা রায়ের খবর পান না, তার স্ত্রী-সন্তান কী করে জানবেন, হর্ষ মান্দারের রিপোর্টের জেরে এমন একটা রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত!
ভাগ্যদেবীই সমাজকর্মী কমল চক্রবর্তীকে তাঁদের বাড়িতে পাঠান বলে এখন বিশ্বাস করেন শুকদেবের স্ত্রী শিশুবালা। এনআরসি নিয়ে অসহায় মানুষদের জন্য কাজ করতে গিয়ে কমলবাবু ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দিদের খোঁজখবর শুরু করেন।
আরও পড়ুন: ভুয়ো ভিডিয়ো নয়, মিনারে তোলা হল গেরুয়া পতাকা
শুকদেব রী নামটা জেনেই তিনি বিস্মিত হন। এ তো চা বাগান জনগোষ্ঠীর। এনআরসিতেও তাদের নথির কড়াকড়ি থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। কমলবাবু একদিন দুপুরে মোহনপুরে তাদের বাড়ি যান। সেখানে তাঁর বিস্ময়ের মাত্রাটা বেড়ে যায়। বাবা বিরাজ রী-র নাম রয়েছে ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকায়! তা ট্রাইব্যুনালে জমাও করা হয়েছিল। কিন্তু এখন ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে গেলে হাইকোর্টে যেতে হবে। হাইলাকান্দিতেই যারা উকিলের ফিজ় জোগাড় করতে না পেরে মামলা লড়ল না, তাঁরা যাবেন গুয়াহাটিতে! শেষে কমলবাবুই পরামর্শ দেন, তিন বছর পেরিয়ে যাওয়ায় জামিনে মুক্তির আবেদন জানাতে। কিন্তু জামিনের যে কঠিন শর্ত। দু’জন ভারতীয় নাগরিককে একলক্ষ টাকার জামিন নিতে হবে। শেষে অনেক ছোটাছুটি করে তারও ব্যবস্থা করা হয়।
আজ ডিটেনশন ক্যাম্প নামক জেল থেকে বেরিয়ে এলেন শুকদেব। গেটের বাইরে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, ‘‘সব হারিয়েও ভারতীয় হতে পারলাম না!’’ এখন প্রতি সপ্তাহে তাঁকে থানায় গিয়ে হাজিরা দিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy