শিলচর বিমানবন্দরে আটকে তৃণমূল প্রতিনিধি দল। —ফাইল চিত্র।
শিলচর বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার হেনস্থার ঘটনা নিয়ে আন্দোলন জোরদার করলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এই হেনস্থায় ‘মদত’ দেওয়ার অভিযোগ তুলে অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের বিরুদ্ধে শুক্রবার আলিপুর ও বিমানবন্দর থানায় এফআইআর করেছেন শিলচর ফেরত তৃণমূলের এক মহিলা বিধায়ক ও এক সাংসদ। আজ, শনি ও কাল, রবিবার রাজ্যে ‘কালাদিবস’ পালনের ডাক দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, যে-হেতু তিনি অসমে দলের পর্যবেক্ষক, তাই অল্প দিনের মধ্যেই ফের সেখানে যাবেন।
তৃণমূল নেতাদের এই সক্রিয়তার মধ্যেই তাঁদের শীর্ষ নেতৃত্বের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। শুক্রবার সংসদে তিনি গোলমালের পুরো দায় চাপিয়েছেন তৃণমূলের উপরেই।
তবে এই আন্দোলন আর দোষারোপের আবহে শিলচর বিমানবন্দরে শনিবার সকালের ছবিটা ছিল অন্য রকম। আটক তৃণমূল প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাঁদের পছন্দের গন্তব্য কোনটা— কলকাতা নাকি দিল্লি? সেই মতো পছন্দ জানিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের ছ’জন সকালেই কলকাতাগামী বিমান ধরেন। আর সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর ও অর্পিতা ঘোষ উড়ে যান দিল্লিতে।
বৃহস্পতিবার মাঝরাত পর্যন্ত প্রশাসন ও তৃণমূল নেতাদের মধ্যে বিস্তর তর্কাতর্কির পরে শুক্রবার সকালে কোনও পক্ষই আর কথা বাড়ায়নি। সিকিওরিটি চেক করার আগে সবাইকে ব্যক্তিগত জামিননামায় সই করিয়ে নেন অসম প্রশাসনের কর্তারা। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে পশ্চিমবঙ্গের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বে বড় দলটি শিলচর ছাড়ার পরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে প্রশাসন। অর্পিতা ও মমতাবালা দুপুর ২টা ২০ পর্যন্ত বিমানবন্দরেই বসে ছিলেন দিল্লির উড়ানের অপেক্ষায়।
পশ্চিমবঙ্গে ফেরার পরে পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল সূত্রে বলা হয়, অসমের মুখ্যমন্ত্রীর ‘নির্দেশেই’ শিলচর বিমানবন্দরে এই রাজ্যের মহিলা জনপ্রতিনিধিদের জোর করে আটকে রাখা এবং শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছে। এই মর্মেই আলিপুর থানায় অভিযোগ জানান বিধায়ক মহুয়া মৈত্র। পরে তিনি বলেন, ‘‘অসমের মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই স্বরাষ্ট্র দফতর। আমাদের বিমানবন্দরেই আটকে রেখে বলা হচ্ছিল, এটাই উপরতলার নির্দেশ। আমাদের অপরাধ কী, জানতে চাইলেও উত্তর মেলেনি। বরং নানা ভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে। যা হয়েছে, তা সবই মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে।’’
অভিযোগের ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, এ রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন রাত পর্যন্ত সে বিষয়ে আলোচনা চালান। আইনজ্ঞদের পরামর্শও নেওয়া হয়। তবে সরকারি ভাবে কেউই কিছু বলতে চাননি।
রাজনৈতিক মহল অবশ্য বিজেপি শাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের বিষয়টিতে ‘তাৎপর্য’ খুঁজে পাচ্ছে। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা মনে করেন, অসমের নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অসমে এফআইআর করা হয়েছে। এখানে এ দিনের এফআইআর-গুলি কার্যত তার ‘রাজনৈতিক জবাব’। মমতা নিজেই বৃহস্পতিবার বিজেপি সম্পর্কে বলেন, ‘‘ওরা যেমন দেখাবে, তেমন দেখবে।’’ অর্থাৎ খেলা এখন সমান সমান।
অসমে নাগরিক পঞ্জিতে বাদ পড়াদের পাশে দাঁড়াতে দলীয় প্রতিনিধিরা শিলচর গিয়েছিলেন বলে বৃহস্পতিবারই মন্তব্য করেছিলেন মমতা। এ দিন তার পুনরাবৃত্তি করে পার্থবাবু বলেন, ‘‘যে ভাবে আমাদের সাংসদ, বিধায়কদের হেনস্থা করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে শনি ও রবিবার সারা রাজ্যে দিনভর ব্লকে ব্লকে কালাদিবস পালন করবে তৃণমূল।’’ ‘দানবিক সরকার আর নেই দরকার’ এই স্লোগান দিয়ে কালো ব্যাজ ও মুখে কালো কাপড় বেঁধে তৃণমূল কালা দিবস পালন করবে। তৃণমূলের এই প্রতিবাদকে কটাক্ষ করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ওঁরা তো অসমে গিয়ে মুখ পুড়িয়ে কালো করে এসেছেন। ফলে কালা দিবস তো ওঁরাই পালন করবেন!’’
অসমে বাদ পড়ার তালিকায় সাড়ে ১২ লক্ষ হিন্দুর নাম রয়েছে বলে পার্থবাবু এ দিন দাবি করেন। সে প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর প্রশ্ন, ‘‘এই তথ্য মন্ত্রী পেলেন কোথায়? অসম সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকার তো এনআরসি-র ধর্মভিত্তিক তালিকা প্রকাশ করেনি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy