দোতলা বাড়ির সামনে উঁচু ভারতমাতার মূর্তি। ঠিক পিছনের দেওয়ালের ছবিতে হাসি মুখে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। একই সারিতে রাহুল গাঁধী, সনিয়া গাঁধীর ছবিও রয়েছে।
গোটা বাড়িটা সুনসান। জনা চারেক কংগ্রেস কর্মী ছাড়া আর কেউ নেই বিলাসপুরের কংগ্রেস ভবনে। কয়েকশো মিটার দূরের নেহরু চকেও লোকে ঠিক করে বলতে পারেন না, কংগ্রেসের দফতরটা ঠিক কোথায়!
ছত্তীসগঢ়ের প্রশাসনিক রাজধানী রায়পুর হলে, বিলাসপুর বাণিজ্যিক রাজধানী। সেই শহরের কংগ্রেস দফতরের ছবি থেকেই স্পষ্ট, ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেসের সংগঠনের অবস্থাটা ঠিক কেমন।শুধু সংগঠন নয়। রাজ্যে নেতার অভাবেও ভুগছে কংগ্রেস।
২০১৩-র ২৫ মে সুকমার জিরম ঘাঁটিতে মাওবাদীদের হামলায় নন্দকুমার পটেল, বিদ্যাচরণ শুক্ল, মহেন্দ্র কর্মা-সহ ছত্তীসগঢ় কংগ্রেসের প্রথম সারির এক ঝাঁক নেতা নিহত হন। সেই শূন্যতা এখনও কুরে কুরে খাচ্ছে দলকে।
১৫ বছর কোনও সরকার ক্ষমতায় থাকলে তার বিরুদ্ধে আমজনতার ক্ষোভ থাকবেই। ছত্তীসগঢ়ে রমন সিংহের বিজেপির সরকারের বিরুদ্ধেও রয়েছে। পাঁচ বছর আগে কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির ভোটের ফারাক ছিল ১ শতাংশেরও কম। এ বার পরিবর্তনের হাওয়া আরও প্রবল। কিন্তু কংগ্রেসের মুশকিল হল, তাদের কোনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেই। এমন কোনও নেতা নেই, যাঁর গোটা রাজ্যে প্রভাব রয়েছে।
এই হারা বাজিকেই জিততে রাহুল এ বার দলের কোনও নেতাকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করেননি। উদ্দেশ্য একটাই। গোটা দলকে এককাট্টা করে ভোটে নামানো। একজনকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হলে বাকিরা ক্ষুব্ধ হতেন। তার বদলে সবাই এককাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছেন। কংগ্রেসের নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্কের সঙ্গে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের মিশেল ঘটানোর চেষ্টা। কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানায় বিজেপির কোনও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ছিলেন না। তাতে বিজেপির জিততে অসুবিধা হয়নি। কংগ্রেসেরও হবে না।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেশ বাঘেল লাল কপ্টারে চেপে প্রচার করছেন। কোথাও নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরছেন না। শুধু বলছেন, হাত চিহ্নে ভোট দিন। ছত্তীসগঢ়ে ওবিসি ভোটাররাই প্রধান। তাই বাঘেল, তমরধ্বজ সাহু, চরণদাস মহন্তরা দৌড়ে এগিয়ে।
রমন সিংহর মতো ঠাকুর নেতা হলেও দৌড়ে রয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের ত্রিভুবনেশ্বর শরণ সিংহদেও। সরগুজার রাজপরিবারের সন্তান। ঘোষিত সম্পত্তির মূল্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি। তাঁর যুক্তি, ‘‘ভোটের পরে স্বয়ম্বর সভা হবে। যেমন রামায়ণে সীতার স্বয়ম্বর সভা হয়েছিল।’’ অর্থাৎ, যাঁর অনুগামীরা বেশি জিতবেন, যিনি হাইকম্যান্ডের সামনে নিজেকে তুলে ধরতে
পারবেন, কংগ্রেস জিতলে তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
কিন্তু দলের মুখ না থাকায় কি অসুবিধা হবে না? সিংহদেও বলছেন, ‘‘যোগী আদিত্যনাথ কি উত্তরপ্রদেশের ভোটে বিজেপির মুখ ছিলেন? ওরা স্বয়ম্বর করেছিল। এখানেও
তাই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy