Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
POLITICS

সচিনের সোনালি ইনিংস, রাজস্থানে মসনদ খোয়াচ্ছেন রানি বসুন্ধরা

সমীক্ষা থেকে শুরু করে বুথ ফেরত সমীক্ষা, সর্বত্রই স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল পালাবদলের। মঙ্গলবার গণনা শুরু হওয়ার পর থেকে বাস্তবেও দেখা গেল একই চিত্র।

জয়ের উচ্ছ্বাস। এগিয়ে থাকার খবর আসতেই সচিন পায়লটের পোস্টার নিয়ে আনন্দে মাতলেন কং সমর্থকরা। ছবি: পিটিআই।

জয়ের উচ্ছ্বাস। এগিয়ে থাকার খবর আসতেই সচিন পায়লটের পোস্টার নিয়ে আনন্দে মাতলেন কং সমর্থকরা। ছবি: পিটিআই।

সিজার মণ্ডল
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:১৭
Share: Save:

বসুন্ধরা রাজেকে সরিয়ে রাজস্থানে সরকার গড়ার পথে জাতীয় কংগ্রেস। ইঙ্গিতটা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। নির্বাচনের আগের সমীক্ষা থেকে শুরু করে বুথ ফেরত সমীক্ষা, সর্বত্রই স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল পালাবদলের। মঙ্গলবার গণনা শুরু হওয়ার পর থেকে রাজস্থানে বাস্তবেও দেখা গেল একই চিত্র।

ভোটের অনেক দিন আগে থেকেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া টের পাওয়া গিয়েছিল এই মরু রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। নির্বাচন যত এগিয়ে এসেছিল, ততই বাড়ছিল সেই হাওয়া। প্রকাশ্যেই চলে এসেছিল, ক্ষোভ যতটা না বিজেপির বিরুদ্ধে, তার থেকেও বেশি রানি বসুন্ধরার বিরুদ্ধে।

যদিও, নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগেও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বসুন্ধরা। সাংবাদিকরা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কথা বললে, প্রায় মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে তিনি তা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর আত্মবিশ্বাসের কারণ ছিল। নির্বাচন যত এগিয়ে এসেছে, শেষবেলায় কোনও এক জাদুবলে সেই প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া অনেকটাই আটকে দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।

আরও পড়ুন: উত্তরপূর্বে নিশ্চিহ্ন কংগ্রেস, মিজোরামে ক্ষমতায় ফিরল এমএনএফ, খাতা খুলল বিজেপি

কৃষক অসন্তোষ, জাতপাতের রাজনীতিতে বসুন্ধরার কিছু সিদ্ধান্তের কারণে একা হয়ে যাওয়া, সংখ্যালঘুদের পাশে না পাওয়া, পাঁচ বছরে উন্নয়ের অভাব— এ সবই ছিল এই নির্বাচনে ইস্যু। কিন্তু সেই ইস্যুগুলিকে ব্যবহার করে জনগণের সরকার বিরোধী অসন্তোষকে কাজে লাগানোর জন্য ওই মরু রাজ্যে দরকার ছিল একটি শক্তিশালী বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির।

আর নিজেদের উপযুক্ত বিকল্প হিসাবে জনগণের কাছে তুলে ধরার জন্য কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন কংগ্রেসের তরুণ তুর্কি সচিন পায়লট। কারণ তিনি শুরু করেছিলেন কার্যত শূন্য থেকে। ২০১৩ সালে বসুন্ধরা ২০০ আসনের রাজস্থান বিধানসভায় ১৬৩ টি আসন জিতে রাজস্থানকে বিরোধী শূন্য করার যে প্রথম পদক্ষেপ করেছিলেন তা পূর্ণতা পায় পরের বছর লোকসভা নির্বাচনে। রাজ্যের সবক’টি লোকসভা আসন জিতে নেয় বিজেপি।

ঠিক সেই জায়গা থেকে ভাঙাচোরা কংগ্রেসের প্রত্যেকটি টুকরো খুব সন্তর্পণে তুলে জোড়া লাগিয়ে পাল্টা লড়াইয়ে নামেন রাহুল গাঁধী ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত এই তরুণ নেতা। যদিও কাজটা সহজ ছিল না। এক দিকে নিজেকে দলের প্রবীণ নেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা, অন্যদিকে কর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে পাল্টা লড়াই।

আরও পড়ুন: ধুন্ধুমার যুদ্ধ মধ্যপ্রদেশে, বিজেপি-কংগ্রেস জোর টক্কর

চার বছর আগে শুরু হওয়া দৌড়ে শুরুতেই উপনির্বাচনে সাফল্য সচিনের জমিটা কিছুটা হলেও শক্ত করে। রাজস্থান কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে চার বছর আগে যে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেছিলেন তা তিনি শেষ করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। তাঁর নিজের কথায়, “ঠিক এক বছর আগে এই দিনেই জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। ঠিক এক বছরের মাথায় আমি তাঁকে এই উপহার দিতে পারে খুব আনন্দিত।” মঙ্গলবার সকালে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা হতে থাকে জয়পুরে সর্দার পটেল মার্গের বিজেপি কার্যালয়। অন্যদিকে ততক্ষণে সমর্থক নেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে জয়পুরে সচিনের বাড়ির সামনে।

রাজস্থানের এক প্রবীণ সাংবাদিক সুরেশ ব্যাসের কথায়, “সচিন ভাগ্যবান যে তিনি তাঁর এই সোনালি দৌড়ে সঙ্গী হিসাবে পেয়েছিলেন অশোক গহলৌতের মত প্রবীণ নেতাকে। টিকিট বণ্টন থেকে শুরু করে দলের অন্দরে জাতপাতের সমীকরণ তিনি দক্ষ হাতে সামলে, মসৃণ করেছেন সচিনের রাস্তা।” অন্যদিকে বসুন্ধরা ঝালারপাটনে নিজের দুর্গ সুরক্ষিত রাখতে পারলেও, তাঁর মন্ত্রিসভার একের পর এক মহারথী জমি হারিয়েছেন।

ছবিটা এখন স্পষ্ট। এবার নেতা বাছার পালা। সমীক্ষাতে মানুষের পছন্দের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রথম নামটাই সচিনের। কিন্তু এখন দেখার পালা, মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে তিনি বসবেন না গুরুত্ব পাবে অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা।

ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE