রাহুল কি জানেন, তাঁর নামে একটি আস্ত নগর আছে? —ফাইল চিত্র।
ডেটলাইনেই লেখাটা শেষ হতে পারত।
যদি না ভোটে ইষ্টদেবতার মতো রাহুল গাঁধীর নাম জপ করতে না শুনতাম নিরুপায় বিজেপিকে।
ইনদওরে পৌঁছেই গাড়ির চালককে বললাম, “রাহুল গাঁধী নগর নিয়ে চলুন।” তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে সারথি বললেন, “মজা করছেন স্যর? ১৫ বছর ধরে ইনদওরে গাড়ি চালাচ্ছি। এমন কোনও এলাকাই নেই!” কিন্তু ‘গুগল’ তো বলছে, আছে। মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে তিনি স্টিয়ারিং ঘোরালেন গুগল-মামার পথ ধরে।
স্বচ্ছতার ‘সেরা শহর’ ইনদওরের ভিড় টপকে অনেকটা খোলা মাঠ। ধুলো-আবর্জনা পেরিয়ে গুগল যেখানে থামাল, বিজেপি সরকারের সাইনবোর্ডও বলছে, ‘রাহুল গাঁধী নগর’।
রাহুলের নামে সেই এলাকার পথ নির্দেশ। —নিজস্ব চিত্র
দশ ফুট বাই দশ ফুট। বেশিরভাগ বাসার আসল ঠিকানা এটাই। পড়ন্ত বেলায় সাইকেলের ক্রিংক্রিং, কলপাড়ের কিচিরমিচির, ছোটদের ছোটাছুটি, সবজিওয়ালার হাঁক, দশ টাকায় পাঁচটা ফুচকা, মুখে ছক্কা বলে পড়ল পুট- যাঃ! তার ফাঁকেই ভেসে আসছে রাহুল গাঁধীর কথা। সঙ্গে হাততালি, হইচই। রাহুল কি তবে কাছেপিঠেই?
গত চল্লিশ মিনিট ধরে প্রযুক্তিকে দোষারোপ করছিলেন সারথি। এ বারে হার মানলেন। কিছু বলার আগেই শব্দভেদী বাণের মতো এগিয়ে চললেন রাহুলের গলা শুনে। বাঁদিকে জটলা। সেখানেই টেলিভিশনের পর্দায় রাহুল। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের কেন্দ্রে সভা করছেন। “৫৬ ইঞ্চির চৌকিদার?” দু’শো কিলোমিটার দূরে রাহুল প্রশ্ন তুলে থামছেন, জবাব আসছে এ মহল্লা থেকে: “চোর হ্যায়।” রাহুল তুলছেন রাফাল। এখানে পুলকিত জনতা, “হাওয়াই-জাহাজওয়ালা অনিল।”
সারথিও হতবাক। দাদা দয়ালুর এলাকায় রাহুল গাঁধীকে নিয়ে এমন মাতামাতি! ‘দাদা দয়ালু’ এলাকার বিজেপি নেতা রমেশ মেন্দোলা। যাঁর কথায় বাঘে-গরুতে না কি একঘাটে জল খায়। চালকই জানালেন, “ইনদওরে দু’জনেই দাবাং। দাদা দয়ালু আর কৈলাস বিজয়বর্গীয়।” কিন্তু আসল কথাটি এখনও জানা যায়নি। রাহুলের বক্তৃতা শেষ হলেই ঠিকরে থাকা চোখগুলোর ফুরসত হবে।
হল যখন, ভিড় ঠেলে খুঁজে পাওয়া গেল কাঁসিরাম লোহারকে। তিনিই না কি বলতে পারবেন, মহল্লার নাম ‘রাহুল গাঁধী নগর’ কেন? “কুড়ি বছর আগের কথা। বস্তিগুলো সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। দিগ্বিজয় সিংহ মুখ্যমন্ত্রী। তিনিই নিয়ে এলেন এক জায়গায়। কার নামে হবে? রাজীব গাঁধী না সনিয়ার? আমরা সবাই বললাম রাহুল গাঁধীর নামে হোক,” বললেন লোহার। কিন্তু কুড়ি বছর আগে তো রাহুলের বয়স ছিল আঠাশ, আর সক্রিয় রাজনীতিতেও আসেননি? লোহার বললেন, “তাতে কী? আমরা সেবাদলের সৈনিক। রাহুল তখন থেকেই আমাদের যুব নেতা।”
কিন্তু রাহুল কি জানেন, তাঁর নামে একটি আস্ত নগর আছে? যেখানে হাজার পরিবারের বাস? একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছেন লোহারেরা।
বিজেপি কিন্তু বেকায়দায়। অষ্টপ্রহর রাহুলের নাম জপ করেই বিজেপির ভোট চাইতে হচ্ছে। ঘরের দালানে বসে স্লিপ বিলোচ্ছেন বিজেপি-র সরিতা যাদব। তাতেও নির্বাচন কমিশনের ছাপানো নাম ‘রাহুল গাঁধী নগর’। বিরক্ত সরিতা: “কার ভাল্লাগে বলুন তো, ভোট চাইতে এসে সারাক্ষণ ‘রাহুল গাঁধী-রাহুল গাঁধী’ করতে? জীবিত লোকের নামে এলাকার নাম, কোনও দিন শুনেছেন? আমি তো বলছি, নাম বদলাও। কোনও ঠাকুর-দেবতার নাম দাও। রোজকার ঝঞ্ঝাট শেষ কর।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy